এ মাসেই আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা

শীতের শেষে এত বৃষ্টি! বিগত ৫০ বছরেও বৃষ্টিপাতের এমন নজির নেই বাংলাদেশে। শীত শেষ হতে না হতেই এত বৃষ্টি হওয়ায় সামনের দিনগুলো কেমন যাবে তা এখনই অনেকটা আঁচ করা যায়। আবহাওয়া সম্বন্ধে বৈজ্ঞানিক তথ্য জানা না থাকলেও মানুষ এখনই বলাবলি করছেন সামনের বর্ষাকালটি বাংলাদেশের জন্য কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। আবারো ১৯৮৮, ১৯৯৮ অথবা ২০০৪-এর মতো বন্যার সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকেই।

এ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সামনের দিনগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি মাত্রার বন্যা হতে পারে বলে জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর তো চলতি মার্চ মাসেই আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়ে দিয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত প্যাসিফিক ইএনএসও এপ্লিকেশন ক্লাইমেট সেন্টারের প্রধান বিজ্ঞানী ড. রাশেদ চৌধুরী নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ‘গত ফেব্রুয়ারি মাসে দুর্বল ধরনের একটি এল নিনু গঠিত হয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। দুর্বল ওই এল নিনুর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে এবং বাংলাদেশের কিছু এলাকায় স্বাভাবিক অথবা প্রায় স্বাভাবিক ধরনের বন্যা এ বছর হতে পারে।’

আনুষ্ঠানিকভাবে শীত ঋতু চলে গেলেও এই ফাল্গুনে অনেকেই বসন্ত ঋতুর খোঁজে বেড়াচ্ছেন। ‘মৃদু মন্দ হাওয়ার সাথে দিনের বেলা বেশ উষ্ণতা, তপ্ত দুপুুরে মাথা থেকে ঘাম বেয়ে পড়া। প্রকৃতিতে গাছ-গাছালিতে নতুন পাতার সাথে নানারঙের ফুল থেকে ছড়িয়ে পড়া সুঘ্রাণ পেতে চাচ্ছেন অনেকেই।’ দিনের বেলা গরমের দেখা না মিললেও রাতের বেলা ঠিকই কাথা-কম্বল জড়িয়ে ঘুমাতে হচ্ছে মানুষকে।

রাতের পরিবেশে অনেকেই পৌষ মাসের শীত অনুভব করছেন। আবার গেল কয়েকটা দিন ভর দুপুরেও ভারী সুয়েটার-জ্যাকেট পড়ে ঘুরতে হয়েছে শীত থেকে রক্ষা পেতে বৃষ্টির কারণে।

ঢাকা আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, আবহাওয়া বেশ ঠাণ্ডা। শীত চলে গেছে বললেও বাস্তবে ঠাণ্ডা অবস্থা রয়েই গেছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টি হওয়ার কারণে তাপমাত্রা উপরে উঠতে পারছে না। তা ছাড়া এখনকার বৃষ্টির পানি যেকোনো সময়ে চেয়ে বেশি ঠাণ্ডা।’

বৃষ্টির পানি ঠাণ্ডা হওয়ার পেছনে যুক্তি হিসেবে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ জানান, ‘আকাশে যে মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে তা অনেক উপরে থাকছে। সাধারণত উপরের দিকে ঠাণ্ডার মাত্রা বেশি থাকে। এ কারণে উপরের মেঘ থেকে যে বৃষ্টি পড়ছে তা ঠাণ্ডা পরিবেশকে আরো ঠাণ্ডা করে তুলছে। ফলে ফাল্গুনের অর্ধেক অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও শীতকালের মতো ঠাণ্ডা রয়ে গেছে।’

বজলুর রশীদ জানিয়েছেন, ‘গত ফেব্রুয়ারিতে যে বৃষ্টি হয়েছে তা বিগত ৫০ বছরের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় গত ৫০ বছরে ফেব্রুয়ারিতে এত বেশি বৃষ্টি হয়নি।’ এত বেশি বৃষ্টি হওয়ার কারণ সম্পর্কে বজলুর রশীদ বলেন, ‘এই সময়ে পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে কিছু বাতাস আসছে বাংলাদেশে। পশ্চিমের বাতাসে কিছুটা আর্দ্রতা রয়েছে। আবার দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে যে বাতাস আসছে তা আসে বঙ্গোপসাগর থেকে। বঙ্গোপসাগর থেকে আসা বাতাসে থাকে প্রচুর জলীয় বাষ্প। পশ্চিমের বায়ু ও দক্ষিণের বায়ু একসাথে মিলিত হয়ে মেঘ সৃষ্টি করছে এবং বৃষ্টিপাত ঘটাচ্ছে বাংলাদেশে।’

তবে তিনি জানান, ইতোমধ্যে পশ্চিম দিক থেকে আসা বাতাস হ্রাস পাচ্ছে। এতে করে বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাবে এবং ধীরে ধীরে পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চলতি মার্চ মাসে বাংলাদেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে শিলাসহ বজ্র বৃষ্টি হতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হতে পারে ভারী বৃষ্টিপাত। অভ্যন্তরীণ বৃষ্টি ও পার্শ্ববর্তী মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢল এসে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বন্যা হয়ে যেতে পারে। আবার বৃষ্টি না হওয়ায় উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহের সৃষ্টি হতে পারে। এ সময় তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যেতে পারে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top