কেউ কথা রাখেনি

দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন ও উন্নয়নের গল্প যখন আমরা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছি। তখন সমাজ ও রাষ্ট্রের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা বঞ্চনা আর অবহেলার গল্প শুনতে সত্যিই ভালো লাগেনা।তাও যদি হয় দেশ সেরা বিশ্ববিদালয়ে তাহলে?

পঁয়ত্রিশ বছর পূর্বে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রিয় ক্যাফিটেরিয়ায় অস্থায়ী ডাইনিং গার্লের চাকরি নিয়েছেন রোকেয়া বেগম। তার হাত ধরেই ক্যাফিটেরিয়ার প্রথমে তালা খোলা হয়। অনেক আশা ভরসা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় ১৯৮৪ সালে মাত্র পঞ্চাশ টাকায় চাকরি শুরু করে। তার দশ বছর পরই স্বামী মারা যায়।

২৫ বছর হয়ে গেল রোকেয়ার স্বামী নাই। সংসারে হাল ধরার মতে কেউ নাই। তাই অল্প বেতনে হলেও চার সন্তানের ভরণপোষণের জন্য চাকরি করতে থাকে।তার চাকরিটা স্থায়ী নয়। তাই বেতনও বেশি নয়। একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের বেতন যখন শুরুতেই আট হাজারের উপরে সেখানে রোকেয়ারা ৩৫ বছর কাজ করেও সর্বোচ্চ আট হাজার টাকায় চাকরি করছে। এটাই তার সর্বোচ্চ অলিখিত বেতন স্কেল।

চাকরিটা স্থায়ী করার জন্য পয়ঁত্রিশ বছর ধরে শিক্ষকদের ধারে ধারে ঘুরেও,তদবির করেও কাজ হয়নি। কত প্রশাসক, ভিসি, প্রো-ভিসি এসেছে, চলে গেছে। সবাই বলেছে তাদের চাকরি স্থায়ী করে দিবে, সরকারী নিয়মে বেতন পাবে। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি।

বয়সের ভারে নূজ্য হয়ে পড়লেও কাজ করছে। আর স্বপ্ন দেখছে জীবনের শেষলগ্নে হলেও চাকরিটা স্থায়ী হবে। তাহলে দু’চার বছর ভালো একটা বেতন পাবে, কিছু টাকা পেনশন পাবে। বাকি জীবনটা কোনমতে পার করে দিবে।

শুরু রোকেয়া নয়। রোকেয়ার মতো একই দশা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ডাইনিংগুলোতে অস্থায়ীভাবে চাকরি করা ৯৭ জন কর্মচারীর।

জানা যায়, প্রতিষ্ঠার ৪৮ বছর পরেও জাবিতে ডাইনিং বয় ও গার্লদের জন্য কোন স্থায়ী চাকরির ব্যাবস্থা করেনি প্রশাসন। বরং অস্থায়ীভাবে কাছ করালে কম টাকায় কাজ করাতে পারে। তাই প্রশাসন শতশত নতুন নিয়োগ দিলেও এদেরকে স্থায়ী করছেনা।

কয়েকজন কর্মচারী ও ডাইনিং গার্ল অভিযোগ করেন, ‘চাকরি স্থায়ীকরণ বা অন্য চাকরি দেয়ার নামে বিভিন্ন হলের প্রোভোস্ট, ওর্য়াডেন ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা বছরের পর বছর তাদেরকে দিয়ে সংসারের ব্যক্তিগত কাজ করিয়েছে কিন্তু চাকরিটা আর স্থায়ী করে দেয়নি। তবে অনেকে শিক্ষকদের সাথে সম্পর্ক ও আর্থিক লেনদেন করেন অন্য চাকরি নিয়ে নিয়েছে। তবে এ পোস্টের স্থায়ীকরণের সুরাহা আর হয়নি।

অস্থায়ী ডাইনিং হল কর্মচারীর নেতারা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ‘এব্যাপারে তারা অনেক আন্দোলন প্রতিবাদ করলেও কোন সুফল পায়নি। সর্বশেষ গত ১২ ফেব্রুয়ারী থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে সর্বমোট সাড়ে তিন হাজার গণস্বাক্ষক সংগ্রহ করেছে। ভিসি বরাবর স্বারকলিপি দিয়েছে।

অস্থায়ী কর্মচারী ডাইনিং হল কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, ‘১৯৯৪-৯৫ তাদের সাথে কাজ করা বাবুর্চি, হল এটেডেন্ট, সিক বয়দের চাকরি স্থায়ী করা হয়েছে। তারা এখন পচিঁশ-ত্রিশ হাজারে বেশি বেতন পাচ্ছে। কিন্তু তখন আমাদেরকে স্থায়ী না করায় এখনও আমরা চার হাজারে চাকরি শুরু করি আর আট হাজারে শেষ করি। দেশ উন্নত হচ্ছে, এখান থেকে আমাদের হাতের খাবার খেয়ে অনেকে শিক্ষক, এমপি-মন্ত্রী, ডিসি, ভিসি, প্রো-ভিসি হচ্ছে। কই আমাদের জন্য তো কিছু করছে না।’

এদিকে গতকাল ভিসি ফাজানা ইসসলাম বরাবর দুই দফা দাবিতে স্বারকলিপি দিয়েছে তারা। দফাগুলো হলো-ডাইনিং কর্মচারীদেও চাকরি স্থানীকরণ। খাবারের মান বাড়াতে ভর্তুকি প্রদান।

এবিষয়ে রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বলেন,‘তাদের বিষয়টা আমি জানি, তবে তাদের স্বারকলিপিটি এখনও দেখিনি। তারা কি দাবি করছে তা স্বারকলিপি দেখে বলতে হবে।’

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top