বাংলাদেশে সাধারণত ফেব্রুয়ারির শুরুতে অথবা মধ্য ফেব্রুয়ারিতে শীত বিদায় নেয়। কিন্তু এবছর মার্চেও শীত অনুভূত হচ্ছে। বিশেষ করে রাতে এখনও লেপ, কম্বল গায়ে দিতে হচ্ছে। এর কারণ কী? এটা কি কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি?
এই প্রশ্নের জবাবে শুরুতেই আবহাওয়াবিদ এবং জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন তা হলো, এখন শীত নেই, শীতের অনূভুতি আছে। গড় তাপমাত্রা গত কয়েক বছর এই সময়ে একই রকম ছিল। তবে এবার এই সময়ে বৃষ্টি বেশি। তাই রাতের তাপমাত্রা কয়েক বছরের তুলনায় কম। আর সে কারণেই শীতের অনুভূতি আছে, শীত নয়। আর এটা আবহাওয়ার কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন এখন পর্যন্ত বলা যায়না। কারণ অতীতেও এরকম হয়েছে।
ফেব্রুয়ারির আবহাওয়া প্রতিবেদনে দেখা যায়, এই সময়ে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের তুলনায় শতকরা ১৬২ ভাগ বেশি বৃষ্টি হয়েছে সারাদেশে। পশ্চিমা লঘু চাপের সঙ্গে পূবালী বাতাসের সংযোগের কারণে বৃষ্টিপাত বেড়ে যায়। বিশেষ করে ২৪ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে হালকা ও ভারী বর্ষণ হয়েছে। ছিল বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি। এর আগে ১৬ এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি বৃষ্টি হয়েছে। ৯ ফেব্রুয়ারি বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। মার্চেও একই অবস্থা। প্রতিদিনই রাতে অথবা দিনে বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘‘গত বছর এই সময়ে গড় তাপমাত্রা ১৫-১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসই ছিল। এবছরও একই রকম। কিন্তু রাতের তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে, ১৩ ডিগ্রিতেও নেমে যাচ্ছে। এর কারণ হলো এবছর আগাম বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির পরিমাণও বেশি। রাতের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় রাতে, সকালে ও সন্ধ্যায় শীত অনুভূত হচ্ছে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এবছর যে ফেব্রুয়ারির ৯ তারিখে বৃষ্টি হয়েছে, গতবছরও কিন্তু এই সময়ে বৃষ্টি হয়েছে। তবে এবার শিলাবৃষ্টি হয়েছে এবং বৃষ্টির পরিমাণ বেশি।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘সাধারণভাবে ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখের মধ্যে শীত বিদায় নিলেও দেশের উত্তরাঞ্চলে ফাল্গুন, এমনকি চৈত্র মাসের প্রথম দিকেও সকালেও ও সন্ধ্যায় শীত অনুভূত হয়।’’
‘কুয়াশা হওয়াটা ব্যতিক্রম’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদ বলেন, ‘‘বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা এইসব বিষয় বিবেচনা করা ছাড়াও আমাদের অনুভূতির বিষয় আছে। সেটাকে আমরা বলি ফিলিং টেম্পারেচার। সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এই সময়ে গত বছরের মতোই আছে। এখন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টির কারণে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা কমছে। ফলে শীত অনুভূত হচ্ছে। এটাকে আমরা এখনো কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি মনে করছিনা।’’
তিনি বলেন, ‘‘তবে আমরা ডাটাগুলো নিয়ে তুলনা করে দেখছি। কারণ গতকাল ৪ মার্চ কুয়াশা ছিল। এটা একটু ব্যতিক্রম। এটা কেন হলো? আমাদের বিশ্লেষণ করে তথ্য পেতে ২-১ দিন সময় লাগবে।’’
তার মতে, ‘‘এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি যা তাতে আগাম বৃষ্টি ছাড়া আর নতুন ধরণের কোনো পরিস্থিতি আমাদের পর্যবেক্ষণে নেই।’’
কৃষিতে প্রভাব
এদিকে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ গওহর নাইম ওয়ারা বলেন, ‘‘এটা আবহাওয়ার স্বাভাবিক চরিত্র। কয়েক বছর পরপরই ফাল্গুন মাসের শুরুতে বৃষ্টিপাত হয়। এটা প্রতি চার বছর পর পর একটা সাইকেল আছে। আমাদের ওইভাবে প্রস্তুতি না থাকায় হঠাৎ বা নতুন মনে হয়। খনা বলেছেন, যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্য রাজার পূণ্য দেশ। যদি মাঘের শেষে বা ফাল্গুনের শুরুতে বৃষ্টির প্রবণতা না থাকতো তাহলে হাজার বছর আগে খনা জানলেন কীভাবে?’’
তিনি বলেন, ‘‘তবে আমাদের চাষাবাদের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসায় এই বৃষ্টিতে আলুর ক্ষতি হচ্ছে। পিয়াজ, রসুনের ক্ষতি হচ্ছে। কারণ এগুলো এখনো মাঠে আছে। তবে শিলাবৃষ্টি না হয়ে স্বাভাবিক বৃষ্টি হলে লিচু এবং আমের জন্য ভালো। ইটভাটার ক্ষতি হচ্ছে। এখানে মালিকের চেয়ে শ্রমিকের ক্ষতি হচ্ছে বেশি। কারণ ইট পোড়ানোর ভাটার মধ্যে কাঁচা ইট ঢোকানোর পর টাকার হিসাব করা হয়। বৃষ্টিতে আগেই কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে এবার আগাম বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ইটভাটার শ্রমিকরা।’’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমন হচ্ছে সেটা বলার সময় এখনো আসেনি।’’
গত মঙ্গলবার সারাদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বনিম্ন ১৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার রাতে এবং মঙ্গলবার দিনে বৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার ভোররাতে এবং সকালে সারাদেশে শীত অনুভূত হয়েছে।
সূত্র : ডয়েচে ভেলে।