খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে বাধ্য করা হবে

দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাবন্দি দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে বিএনপি।  বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে দলটির নেতারা বলেছেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দিতে ভয় পাচ্ছে। তবে দল পুনর্গঠনের পরই কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম জিয়ার মুক্তি দিতে সরকারকে বাধ্য করা হবে। কেবল সভা-সমাবেশ নয় খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে কঠোর কর্মসূচী দিতে দলের সিনিয়র নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বক্তব্য রাখেন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ‘বিশেষায়িত’ হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দিতে সরকার ভয় পাচ্ছে। দেশনেত্রী অসুস্থ। চিকিৎসা পাওয়া তার মৌলিক সাংবিধানিক অধিকার। সেই অধিকারটুকুও তিনি পাচ্ছেন না। আজকে তাকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই। আমরা বার বার বলেছি, তাকে তার যেটা পছন্দ বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিতসার ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু এই সরকার এটা করছে না, করতে ভয় পাচ্ছে। তারা মনে করে যে, দেশনেত্রী এই চিকিৎসা নিতে হলেও বোধহয় তারা ক্ষমতা হারাবে। এই একটি কারনে, একটি ভয়ে তারা আজকে দেশনেত্রীকে আটকিয়ে রেখেছে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে দলের মহাসচিবের নেতৃত্বে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত এক ঘন্টার এই কর্মসূচিতে বিএনপির সহ¯্রাধিক নেতা-কর্মী মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা মহানগরীর কাজী আবুল বাশার, যুব দলের মোরতাজুল করীম বাদরু, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ ও সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের পরিচালনায় মানববন্ধনে দলের কেন্দ্রীয় নেতা সেলিমা রহমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, এবিএম মোশাররফ হোসেন, শিরিন সুলতানা, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, খন্দকার মাশুকুর রহমান, শামীমুর রহমান শামীম, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, হারুনুর রশীদ, মফিকুল হাসান তৃপ্তি, সেলিম রেজা হাবিব, অধ্যক্ষ সোহরাবউদ্দিন, হেলেন জেরিন খান, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, নিপুন রায় চৌধুরী, খন্দকার আবু আশফাক, তাবিথ আউয়াল, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু ছাড়াও মহানগর বিএনপি, যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, মহিলা দল, ছাত্রদল, ড্যাব, তাঁতী দল সহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন।

এই কর্মসূচি উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৯টা থেকেই প্রেসক্লাবের বাইরে অতিরিক্ত পুলিশ ও সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।

খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনের বিকল্প নেই উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে একটার পর একটা মামলা দিয়ে আটক রাখা হয়েছে। অথচ সব মামলায় তিনি জামনিযোগ্য। খালেদা জিয়া বাংলাদেশের মানুষের কাছে ‘গণতন্ত্রের মাতা’ হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছেন। যখনই গণতন্ত্রের সমস্যায় ভোগে দেশনেত্রী তিনি সামনে এসে অকুতভয়ে আপোসহীনভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন।

এই ইতিহাস দেশবাসীর জানা। আজকে সময় এসেছে আমরা আমাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করে জনগণের দৃঢ় ঐক্য তৈরি করে দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত দিতে সরকারকে বাধ্য করব। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই জনগণকে নিয়ে, আমরা দেশনেত্রীর মুক্তি চিকিসা এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার যে লড়াই, সেই লড়াইয়ে অবতীর্ণ হই।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এই নির্বাচন আমরা মানি না, প্রত্যাখান করেছি। এই নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করতে হবে এবং পুনরায় নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আবার নির্বাচন দিতে হবে। এটা দিতে হবেই।

মির্জা ফখরুল বলেন, গত কয়েক বছরে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে তাদেরকেও মিথ্যা মামলা দিয়ে মিথ্যা অজুহাতে আটক করে রাখা হেেয়্ছ। আপনারা অনেকে জানেন, বাংলাদেশে সম্ভবত প্রায় ৯৮ হাজারের মতো মামলা দেয়া হয়েছে। আসামীর সংখ্যা ২৫ লাখের উপরে। দখলদারী, অবৈধভাবে বেআইনি সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাচ্ছে, একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রথম দাবি- আমাদের নেত্রীকে মুক্তি দেয়া হোক। মুক্ত বেগম খালেদা জিয়া যেখানে ইচ্ছা সেখানে চিকিৎসা নিয়ে তিনি সুস্থ হওয়ার অধিকার সংবিধানে রক্ষিত আছে। শুধু চিকিসার কারণে তাকে মুক্তি দিতে হবে। বাংলাদেশে আজকে যিনি প্রধানমন্ত্রী তার বেলায় উদাহরণ আছে। তিনি কারাবন্দি হয়ে চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বিদেশে গিয়েছেন। তাই আমাদের প্রথম দাবি- তাকে মুক্তি দিতে হবে যাতে করে তিনি বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন বা তার পছন্দমতো এবং যেই জায়গায় তিনি বিশ্বাস করে সেই জায়গায় তিনি চিকিৎসা নিতে পারেন। অথবা বেগম খালেদা জিয়া যতদিন না মুক্ত হবেন ততদিন তাকে বেসরকারি একটি হাসপাতালে, নেত্রীর যেখানে বিশ্বাস আস্থা রয়েছেন সেই হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হবে। তবে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে এর দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ফ্যাসিস্ট ও অমানবিক সরকারের কারণে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের চরম অবনতি ঘটেছে। আজকে আমরা সবাই উদ্বিগ্ন। আদালতের গঠিত মেডিকেল বোর্ড তার চিকিৎসার জন্য সুপারিশ করলেও আজ পর্যন্ত সেই সুপারিশ সরকার বাস্তবায়ন না করে এখন বলছে জেল কোডে যেটা লেখা আছে সেই অনুযায়ী তার চিকিৎসা হবে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। এটা তাদের হীন ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র জনগণ কখনোই গ্রহণ করবে না।

জেল কোডে এ কথাও লেখা আছে- কোনো বন্দি যদি আগে কোনো চিকিৎসকের দ্বারা চিকিৎসা করিয়ে থাকেন সেই চিকিৎসকদের মাধ্যমেই তার চিকিৎসা করাতে হবে। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। কুমিল্লার মামলায় তাকে ৬ মাসের জামিন দেয়ার পরও আমরা তাকে মুক্তি করতে পারি নাই। কারণ সরকারের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণেই জামিনযোগ্য মামলায় একজন আসামী জামিন পাচ্ছেন না। তবে চেষ্টা করে যাচ্ছি তার জামিনের জন্য। আমি বলবো- দেশনেত্রীর মুক্তি আসবে রাজপথের মাধ্যমে। আন্দোলন ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নাই।

মির্জা আব্বাস বলেন, দেশের তিন বারের প্রধানমন্ত্রী দুই বারের বিরোধী দলীয় নেত্রীর চিকিৎসার দাবিতে এই মানববন্ধন করছি। এর চাইতে দুর্ভাগ্যজনক আর কোনো অধ্যায় দেশে সৃষ্টি হয়নি বা হবেও না। চিকিৎসার জন্য কেনো মানববন্ধন করতে হবে? ধিক্কার জানাই এই ধরনের অমানবিক লোকগুলোকে। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের রোগমুক্তি কামনা করে তিনি বলেন, উনার যেমন চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার আছে, দেশনেত্রীরও সুচিকিৎসা পাওয়ার অধিকার আছে। তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। অন্য কথায় আমি মনে করি তাকে অন্য উপায় ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশনেত্রীর যদি কিছু হয় এর জন্য দায়ী থাকবে আজকের এই সরকার।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top