হাজী শরীয়তুল্লাহর পথ ধরে ঐতিহাসিক ময়েজ মঞ্জিলের প্রথম নারী বন্দি নায়াব ইউসুফ

হাজী শরীয়তুল্লাহ, পীর দুদু মিয়াদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ফরিদপুরের ঐতিহাসিক ময়েজ মঞ্জিলের প্রথম নারী বন্দি হিসেবে নিজের নাম লিখিয়েছেন চৌধুরী নায়াব ইউসুফ। তিন দিন তিন রাত কারাগারের প্রকোষ্ঠে বন্দি থাকার পর বুধবার মুক্তি লাভ করেন তিনি।

নায়াব ইউসুফ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এবং সাবেক মন্ত্রী ও পাঁচবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের জ্যেষ্ঠ কন্যা। বিগত নির্বাচনের সময় থেকে, বিশেষ করে একটি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলায় কারাবরণের পর তিনি ফরিদপুরের রাজনৈতিক অঙ্গণে ব্যাপক আলোচিত নেত্রী হয়ে ওঠেন। ফরিদপুরের বিভিন্নস্থানে আজ তিনি টক অব দ্য টাউনে পরিণত হন।

ব্রিটিশ আমল থেকে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ফরিদপুরসহ অত্রাঞ্চলের রাজনৈতিক কর্মকা-ের সুতিকাগার হিসেবে পরিচিত ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী ময়েজ মঞ্জিল। ফরিদপুরের স্বনামধন্য জমিদার ময়েজউদ্দিন বিশ্বাস এ ময়েজ মঞ্জিলের প্রতিষ্ঠাতা। এ পরিবারের পূর্বপুরুষদের মধ্যে রয়েছেন হাজী শরীয়তুল্লাহ, পীর দুদু মিয়া ও ময়েজউদ্দিন বিশ্বাসের পুত্র চৌধুরী ইউসুফ আলী মোহন মিয়াদের মতো প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ ও সমাজ সংস্কারকরা। পূর্বোক্ত এ তিন ব্যক্তিত্ব জনগণের দাবি আদায় করতে গিয়ে শাসক শ্রেণির রোষানলে পরে কারাবরণ করেছেন একাধিকবার।

হাজী শরিয়তুল্লাহ ও পীর দুদু মিয়া কারাবরণ করেন ব্রিটিশ শাসকদের আমলে। অন্যদিকে ইউসুফ আলী চৌধুরী মোহন মিয়া রাজনৈতিক কারণে কারাবরণ করেন পাকিস্তানী আমলে। মোহন মিয়ার ভাই সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ জহিরউদ্দিন লাল মিয়া এবং চৌধুরী এনায়েত হোসেন তারা মিয়াও পাকিস্তান আমলে কারাবরণ করেন।

তবে ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ পরিবারের কেউই রাজনৈতিক কিংবা অন্য কারণে কারাগারে যাননি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দীর্ঘ ৪৮ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম এ পরিবারের সদস্য হিসেবে কারাগারে বন্দি হন চৌধুরী নায়াব ইউসুফ। ফরিদপুরের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও সম্ভ্রান্ত এ ময়েজ মঞ্জিলের ইতিহাসে প্রথম কোনো নারী বন্দি হিসেবেও প্রথম কারাবন্দি চৌধুরী নায়াব ইউসুফ।

একজন গৃহিনী থেকে পিতার উত্তরসূরী হিসেবে চৌধুরী নায়াব ইউসুফ বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে। বর্তমানে তিনি ফরিদপুরে জেলা বিএনপির অন্যতম সদস্য। ফরিদপুর জেলা বিএনপির প্রস্তাবিত কমিটিতে সহ-সভাপতি হিসেবে তার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া জিয়া সাইবার ফোর্স ও জিয়া মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। বিগত দিনে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে তিনি ফরিদপুরের রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

বিগত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ। সে সময় দলের বিকল্প প্রার্থী হিসেবে বিএনপির মনোনয়ন লাভ করেন। নির্বাচনের তফশীল ঘোষণার পর থেকে তিনি বিএনপির পক্ষে মাঠে প্রান্তরে ব্যাপক গণসংযোগ চালান। এসময় ফরিদপুরের অন্যতম জনপ্রিয় নেত্রী হিসেবে তিনি আত্মপ্রকাশ করেন। ঐতিহ্যবাহী ময়েজ মঞ্জিলের উত্তরাধিকারী হিসেবে ইতিমধ্যে তিনি ফরিদপুরের মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন।

রাজনীতির মাঠে নেমে চমক সৃষ্টিকারী এ নেত্রীকে বিগত নির্বাচনের মাত্র ১৮ দিন বাকি থাকতে একটি হত্যা মামলায় আসামী করা হয়। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত এ মামলা রুজু করা হয় বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। ফরিদপুরের সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের হোলডাঙ্গিতে দু’পক্ষের বচসায় হাতাহাতির ঘটনায় ইউসুফ বেপারী নামে এক ব্যক্তি মারা যায়। ওই মামলায় ৩৮ জন আসামীর মধ্যে চৌধুরী নায়াব ইউসুফকেও আসামী করা হয়। এছাড়া আওয়ামী লীগের একটি নির্বাচনী অফিস পোড়ানোর মামলাতেও তাকে আসামী করা হয়।

এরপর উচ্চ আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন লাভ করে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে স্থায়ী জামিন লাভের জন্য হাজির হলে আদালত তার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। তার কারাবরণের বিষয়টি মানুষের মুখে মুখে আলোচিত হতে থাকে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতৃবৃন্দ মিথ্যা সাজানো মামলায় চৌধুরী নায়াব ইউসুফকে কারাগারে প্রেরণের অভিযোগ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং তার দ্রুত মুক্তি দাবি করেন।

এ ব্যাপারে চৌধুরী নায়াব ইউসুফ মনে করেন, তার পরিবারের ঐতিহ্য ও জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়েই হয়রানিমূলক এসব মামলা দায়ের করা হচ্ছে। এসব রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি করে তাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা রাখা যাবে না। আগামীতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে তাঁর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানান।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top