পাকিস্তানের জন্য ফাঁদ পেতে এখন নিজেই একঘরে ভারত

কাশ্মির ইস্যুতে হামলা-পাল্টা হামলায় পাকিস্তানের কাছে দুটি যুদ্ধবিমান হারায় ভারত। কেবল তাই নয়, পাকিস্তানের হামলায় দুজন ভারতীয় পাইলট নিহত ও উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান নামে একজন পাইলটকে জীবিত আটকের ঘটনায় চাপে পড়ে ভারত। এরপর দেশটি ভিন্ন কৌশলে ও কূটনৈতিক ভাবে যোগাযোগ করে বিশ্ব থেকে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করে। কিন্তু এত কিছুর পরও পাকিস্তান নয়, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ক্রমেই নিজেদের বিচ্ছিন্ন অবস্থায় দেখতে পাচ্ছে ভারত।

বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিকট বাণিজ্যিক অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত দেশের তালিকায় ছিল ভারত। দীর্ঘদিন ধরে ওয়াশিংটনের বাণিজ্যিক অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত দেশের তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে থাকলেও চলতি সপ্তাহের শুরুতে ভারতকে সেই তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে দেশটি। অর্থ্যাৎ এখন থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিকট থেকে ভারত আর কোনো বিশেষ বাণিজ্যিক সুবিধা লাভ করবে না।

এদিকে ক্রীড়াক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ সংস্থা ইউনাইটেড ওয়াল্ড রেসলিং (ইউডব্লিউডব্লিউ) তাদের সংস্থায় ভারতের সদস্যপদ স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ও ওয়াল্ড টি-২০ বিশ্বকাপ আয়োজনে নিজেদের (আইসিসি) অধিকারকে বাধাগ্রস্থ করার অভিযোগে ভারতকে সতর্ক করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। এ ধরণের আচরণ ও মনোভাবের ব্যাপারে ভাবিষ্যতে সতর্ক থাকতেও ভারতকে জানিয়ে দেয় সংস্থাটি।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে দীর্ঘদিন ধরে ভারতকে দিয়ে আসা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যিক সুবিধা বাতিলের ঘোষণা দেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সুবিধার আওতায় ভারত বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করতে পারতো।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চকক্ষ সিনেট ও নিম্নকক্ষ হাউজের নেতাদের কাছে লেখা এক চিঠিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, সুবিধাপ্রাপ্ত উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ভারতকে দেয়া ওয়াশিংটনের সুবিধা তিনি বাতিল করতে চান। চিঠিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরো বলেন,‘ভারত এত দিন জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সের (জিএসপি) মধ্যে ছিল। এখন সেটি প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে। আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কারণ ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করে আমি বুঝতে পেরেছি যে, ভারত তাদের দেশের বাজারে ব্যবসার ক্ষেত্রে এ ধরণের সুবিধা দেবে না।’

বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোনো ধরণের শুল্ক ছাড়াই ভারতের ৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য প্রবেশ করতে পারে। ট্রাম্পের নির্দেশে এই সুবিধা এবার বাতিল হচ্ছে। ১৯৭৬ সালের ১ জানুয়ারী থেকে ভারত এই সুবিধা পেয়ে আসছিল। এরপরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি প্রোগ্রাম বা বাণিজ্যিক সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে ভারত। শীর্ষ ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধাপ্রাপ্ত দেশগুলোর একটি দেশ হচ্ছে ভারত।

এদিকে নিজ সংস্থায় ভারতীয় রেসলিং ফেডারেশন (আইডব্লিউএফ) এর সদস্যপদ স্থগিত করেছে ইউনাইটেড ওয়াল্ড রেসলিং (ইউডব্লিউডব্লিউ)। পাশাপাশি ভারতের সদস্যপদ স্থগিতের বিষয়টি ইউডব্লিউডব্লিউ তার বর্তমান সকল সদস্য দেশকে এই তথ্যটি জানিয়েও দিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, দেশটিতে আয়োজিত সকল আন্তর্জাতিক ইভেন্ট বা খেলায় অংশগ্রহণকারী সকল খেলোয়াড় ও অ্যাথলেটকে ভিসা সুবিধা দেয়ার ব্যাপারে লিখিত নিশ্চয়তা না দেয়া পর্যন্ত ভারতের সদস্যপদ স্থগিত থাকবে। পাশাপাশি খেলাধুলার সাথে রাজনীতিকে জড়িয়ে ফেলার ব্যাপারে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে ভারত সরকারের সমালোচনা করে আন্তর্জাতিক রেসলিং কতৃপক্ষ।

সংস্থাটি আরো বলে, ভারত সরকারের এই মনোভাব অলিম্পিক সনদের বিরোধী। সদস্য দেশগুলোর কাছে পাঠানো চিঠিতে আন্তর্জাতিক রেসলিং কতৃপক্ষ বলেছে,‘ভারতীয়রা রাজনীতির সাথে খেলাধুলাকে জড়িয়ে ফেলেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের ভিসা দিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে ভারত। তাই ভারতীয় রেসলিং ফেডারেশনের (আইডব্লিউএফ) সাথে সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম স্থগিত করতে সকল সদস্য দেশগুলোকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’

এদিকে পাকিস্তানি খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের ভিসার নিশ্চয়তা দেয়া না হলে স্বাগতিক দেশ হিসেবে টি-২০ ও ওয়ানডে বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ থেকে ভারতকে বাদ দিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে পাকিস্তান।

জানা গেছে, যতদিন না পাকিস্তানি খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের ভিসা দেয়ার ব্যাপারে ভারত লিখিতভাবে নিশ্চয়তা না দিচ্ছে, ততদিন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আয়োজনের ব্যাপারে ভারতের অধিকার স্থগিত রাখার ব্যাপারে ক্রিকেটের শীর্ষ সংস্থার কাছে দাবি জানিয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের টি-২০ বিশ্বকাপ ও ২০২৩ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ আয়োজন করার কথা রয়েছে ভারতের। সূত্রটি আরো জানায়, পিসিবির দাবির পরই বোর্ড অফ কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) কে এই মেগা টুর্নামেন্টগুলোতে পাকিস্তানি খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের ভিসা দেয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে বলে আইসিসি।

তাছাড়া বিশ্বকাপ শুরু একবছর আগেই পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের ভিসা দেয়ার ব্যাপারে ভারত সরকারের নিকট থেকে লিখিত নিশ্চয়তা নিতে বিসিসিআই’কে নির্দেশ দিয়েছে আইসিসি। সংস্থাটি আরো বলেছে, বিশ্বকাপ শুরুর একবছর আগে বিসিসিআই এই নিশ্চয়তাপত্র দেখাতে ব্যর্থ হলে তারা (আইসিসি) বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব অন্য কোনো দেশকে দিতে বাধ্য হবে।

সম্প্রতি দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত আইসিসির এক সভায় এই ইস্যুটি উথাপন করেন পিসিবি চেয়ারম্যান এহসান মানি। সেখানে তিনি বলেন, সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক ইভেন্টে অংশগ্রহণের জন্য পাকিস্তানি অ্যাথলেটদের ভিসা দেয়নি ভারত। এর প্রেক্ষিতে ভিসা প্রদানের ব্যাপারে ভারত সরকারের নিকট থেকে লিখিত নিশ্চয়তা নিতে বিসিসিআই’কে নির্দেশ দেন আইসিসি সভাপতি শশাঙ্ক মনোহর।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top