কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জামিন দিয়েছেন আদালত।
আজ বুধবার বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মুজিবুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার এ আদালতে খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে শুনানি শেষ হয়। এর পর আদেশের জন্য আজ বুধবার তারিখ ধার্য করেন আদালত।
গতকাল খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে শুনানি করেন প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এ জে মোহাম্মদ আলী। তাদের সহায়তা করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। অপর দিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
শুনানিতে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সমস্ত ঘটনা বিবেচনা করে হাইকোর্ট চার দিন শুনানি গ্রহণ করে খালেদা জিয়াকে এই মামলায় জামিন দেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে গেলে, আপিল বিভাগ হাইকোর্টে ফেরত পাঠায় শুধু একটি কারণে এই বেইল মেনটেনঅ্যাবল কি না। ৪৯৮ ধারায় হাইকোর্ট ও জজ কোর্টের কনকারেন্ট পাওয়ার আছে কি না? আমরা সরাসরি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করি এবং হাইকোর্ট জামিন দেন। ৪৯৮ ধারার ব্যাপারে হাইকোর্টের কোনো ফাইন্ডিং ছিল না। হাইকোর্টে সরাসরি জামিন আবেদন করা যায় কি না? সেটা নির্ধারণের জন্য আপিল বিভাগ হাইকোর্টে পাঠান। আমরা বৈধতার প্রশ্নে না গিয়ে রুল খারিজ করিয়ে নিম্ন আদালতে যাই। নিম্ন আদালতে জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় এখন হাইকোর্টে এসেছি।
তিনি বলেন, হাইকোর্টের জামিনের ব্যাপারে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার নেই। কারণ হাইকোর্ট সব কিছু বিবেচনা করে জামিন দেন। এই মামলায় জামিন প্রদানের ক্ষেত্রে নতুন করে কিছু নেই।
এ সময় আদালত বলেন, নতুন একটি আছে, এখনো এই মামলার বিচার শুরু করা হয়নি।
শুনানিতে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তিনি একজন বয়স্ক মহিলা। এই ঘটনার সাথে জড়িত নন। এই মামলায় হাইকোর্ট জামিন দিয়েছে। পরবর্তীতে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের এখতিয়ার প্রশ্নে ফেরত পাঠায়। এরপর আমরা জজ কোর্টে জামিন আবেদন নিষ্পত্তি করে এসেছি। এখন তার জামিন প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই।
এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানিতে বলেন, একটি পাবলিক প্রগ্রামকে কেন্দ্র করে মানুষ পুড়িয়ে মারা হয়। সাতজন ঘটনাস্থলে মারা যায় এবং একজন হাসপাতালে মারা যায়। তিনি মামলার এফআইআর ও চার্জশিট আদালতে পাড়েন এবং জামিন মঞ্জুর না করার জন্য আদালতে নিবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত বুধবার আদেশের দিন ধার্য করেন।
শুনানিকালে আদালতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীন, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, শাহজাহান ওমর, নিতায় রায় চৌধুরী, এবিএম ওয়ালিউর রহমান খান, মাহবুবউদ্দিন খোকন, মনির হোসেন, ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, মো: আখতারুজ্জামান, এএইচ এম কামরুজ্জামান মামুন, সালমা সুলতানা, গোলাম আক্তার জাকির প্রমুখ।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে দায়ের করা হত্যা মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করা হয়েছে। গতকাল বিচারপতি এ কে আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টে বেঞ্চে আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এআবেদন করেন। এরপর গত ৩ মার্চ জামিন আবেদনটি শুনানির জন্য আসলে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার দুপুর ২টায় শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়।
এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি এ মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন গত ৪ ফেব্রুয়ারি নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পরে নিম্ন আদালতে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হয়। এর বিরুদ্ধে পুনরায় জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়।
গত বছরের ২৮ মে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়াকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে নাশকতার দুটি ঘটনায় হত্যা ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা দুই মামলায় ছয় মাসের জামিন মঞ্জুর করেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করলে আপিল বিভাগ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানায় করা হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত করেন। একইসঙ্গে এ মামলায় জামিন বিষয়ে হাইকোর্টের জারি করা রুল চার সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়। এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা হাইকোর্টের রুল ডিসচার্জ করে নিম্ন আদালতে জামিন আবেদনের শুনানি করেন।
বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের ডাকা হরতাল-অবরোধ চলাকালে ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে চৌদ্দগ্রামের জগমোহনপুরে একটি নৈশকোচে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। আইকন পরিবহনের ওই বাসটি কক্সবাজার থেকে ঢাকা যাচ্ছিলো। ওই ঘটনায় আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলে সাতজন নিহত হন। পরে হাসপাতালে নেয়ার পর আরো একজন মারা যান।
এ ঘটনায় ৩ ফেব্রুয়ারি চৌদ্দগ্রাম থানার উপ-পরির্দশক (এসআই) নূরুজ্জামান হাওলাদার বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দু’টি মামলা করেন। এ ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ ৭৮ জনের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের মার্চে চার্জশিট দেয় পুলিশ।