পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি বলেছেন, ৫৭ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সর্বশেষ সম্মেলনে গৃহীত একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে কাশ্মির ইস্যুতে ইসলামাবাদের পাশে দাঁড়িয়েছে সংস্থাটি। পাশাপাশি এই প্রস্তাবের মাধ্যমে ভারতের কাশ্মির নীতির কঠোর সমালোচনা করা হয় বলেও জানান তিনি। সোমবার পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে এক ভাষণে তিনি একথা বলেন।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত ওআইসি’র জরুরী সম্মেলনে সংস্থাটির ৫৭টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সম্মেলনে বিশেষ আমন্ত্রণে অংশ নেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।
সোমবার জাতীয় পরিষদে ভাষণ দেয়ার সময় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি বলেন, ভবিষ্যতে ভারতকে ওআইসি’র স্থায়ী সদস্যপদ প্রদানের প্রস্তাব দেয়া হলে পাকিস্তার এর বিরোধীতা করবে। ভারতের সাথে ইসলামাবাদের সাম্প্রতিক আকাশ যুদ্ধ ও উত্তেজনার সময় সরকারের প্রতি সংসদ এবং সংসদের বাইরে বিরোধীদলগুলোর সমর্থন ও ঐক্যের প্রশংসা করেন তিনি।
উল্লেখ্য, বিশ্বের মুসলিম দেশ ও জনগণের স্বার্থরক্ষা, নিরাপত্তা, ঐক্যসহ বিভিন্ন লক্ষ্যকে সামনে রেখে ১৯৬৯ সালে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমে কেবল মুসলিম দেশগুলোকে নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হলেও পরবর্তীতে বেশ কয়েকটি মুসলিম সংখ্যালঘু দেশও ওআইসি’র সদস্যপদ লাভ করে। পাকিস্তান ওআইসি’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা দেশ। অন্যদিকে ভারত ওআইসি’র একটি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,‘একজনকে(ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ) ওআইসি’র এই জরুরী সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তারপরও সম্মেলনে অংশ নিয়ে ভারতের উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি। অন্যদিকে সম্মেলনে সক্রিয়ভাবে অংশ না নেয়া নিয়েও পাকিস্তানের উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে।’
উল্লেখ্য, কাশ্মিরে ভারত ও পাকিস্তানের হামলা-পাল্টা হামলার মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে ওআইসি’র জরুরী বৈঠক ডাকা হয়। এতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এদিকে ওআইসি’র সম্মেলনে ভারত অংশ নিলে সেখানে না যাওয়ার ঘোষণা দেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি। পরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যোগ দেয়ায় সম্মেলনে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর পরিবর্তে সেখানে এক প্রতিনিধি প্রেরণ করে ইসলামাবাদ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি বলেন,‘কাশ্মির ইস্যুতে পাকিস্তানের নীতি ও অবস্থানকে সমর্থন করেছে ওআইসি। পাশাপাশি ভারত অধিকৃত কাশ্মিরে ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর আগ্রাসন ও বর্বরতার তীব্র সমালোচনাও করা হয়েছে সম্মেলনে। এখন ওআইসি’র সম্মেলনে যোগ দিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ কি অর্জন করলেন, সে বিষয়েও দেশটির অভ্যন্তরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।’
তিনি বলেন, ভারতে বিশাল সংখ্যক মুসলিম বসবাস করে এই অজুহাত দেখিয়ে নয়াদিল্লী দীর্ঘদিন ধরে ওআইসি’র সদস্যপদ পাওয়ার চেষ্টা করে আসছে। কিন্তু দশকের পর দশক ধরে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে আসা অসহায় কাশ্মিরীদের ওপর চালানো ভারতীয় বর্বরতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে তাদের ওআইসি’র সদস্যপদ পাওয়ার দাবির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,‘ইসরাইল এবং মিয়ানমারেও মুসলিমরা বসবাস করে। কিন্তু তাই বলে তাদেরকে (ইসরাইল ও মিয়ানমার) ওআইসি’র স্থায়ী সদস্যপদ দেয়া সম্ভব না।’
এদিকে জাতীয় পরিষদে দেয়া ভাষণে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এর অন্যতম শীর্ষ নেতা খাজা মোহাম্মদ আসিফ বলেছেন,‘ভারতের কাশ্মির নীতির সমালোচনা করে ওআইসি সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাব পাকিস্তানের অবস্থানকে আরো সুদৃঢ় করেছে।’