ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সামনে এখন কেবলই নির্বাচন। আর বিরোধীদের অভিযোগ, নির্বাচনে নিজের দলকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতেই দেশে সৃষ্টি করা হয়েছে সাম্প্রতিক উত্তেজনা। মোদির সব সময়ের চিন্তাভাবনা এখন নির্বাচন আর যুদ্ধ নিয়ে। আর তার জেরেই মারাত্মক এক ভুল করে বসলেন মোদি। কোচি বলতে গিয়ে করাচি বলে বসলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নাম হিসেবে বলা যায় ভুল তো হতেই পারে। কিন্তু কোচি যেখানে নিজেদের একটি শহর, তখন করাচি যে শত্রুদেশ পাকিস্তানের উল্লেখযোগ্য একটি শহর, তখন ভুলটা একটু মারাত্মকই হতে পারে।
গুজরাটের জামনগরে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের গুণগান করতে গিয়ে মোদি বলেন, ‘কলকাতা হোক বা করাচি, সর্বত্রই এই প্রকল্পের সুফল পাওয়া যাবে।’ বলেই অবশ্য নিজের ভুল বুঝতে পারেন। সাথে সাথেই শুধরে নেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘করাচি নয়, কোচি!’ আর কৈফিয়ত হিসেবে বলেন, আসলে আমার মাথায় সব সময়েই এখন প্রতিবেশী দেশের কথাই ঘুরছে!’
এর আগে টেলিপ্রম্পটারে ‘কালাশনিকভ’ রাইফেলের নাম বলতে গিয়ে দু’বার হোঁচট খেয়েছিলেন মোদি। এরপর ফের মুখ ফসকে কোচিকে করাচি বলে ফেলেন মোদী।
দিল্লিতে কংগ্রেস অভিযোগ করে, কাশ্মিরের পুলওয়ামার ঘটনার পরে বেঙ্গালুরুর ‘করাচি বেকারি’-র দোকানে পাকিস্তানের ছোঁয়া রয়েছে বলে কথিত দেশরক্ষকেরা সেখানে হামলা চালিয়েছিল। হুমকি দিয়ে সাইনবোর্ডের ‘করাচি’ শব্দটি ঢেকে দিতে বাধ্য করা হয়। পাকিস্তানের কোনো নাম ব্যবহার করলে সামাজিক গণমাধ্যমে ‘দেশদ্রোহ’ বলে ঝড় ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
তা হলে যখন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে ‘কোচি’র জায়গায় ‘করাচি’ বের হয় তখন কী হবে? ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামার ঘটনার পরে দলীয় ভেদাভেদ দূরে সরিয়ে কেন্দ্রের পাশে দাঁড়িয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু এর পরে পাকিস্তানে যুদ্ধবিমানের অভিযানের পরে মোদী সরকার বার বার বিরোধীদের নিশানা করছিলেন। এর প্রেক্ষিতে কংগ্রেস আবারো অভিযোগ ওঠায় মোদি প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
প্রথমত পুলওয়ামায় গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কংগ্রেস দাবি করছে, এর দায় কেন মোদী সরকার নেবে না? দ্বিতীয়ত, আমেঠীতে দেয়া মোদির বক্তব্যকে নিয়ে কংগ্রেস তো মোদিকে স্পষ্টভাষায় মিথ্যেবাদীই বলেছে। রাহুল গান্ধি বলেছেন, শুধু মুখ ফস্কে ভুল বলাই নয়, জেনেবুঝে মিথ্যে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
কংগ্রেসের অভিযোগ, গত লোকসভা ভোটের আগে থেকেই মিথ্যে বলার অভ্যাস করেছেন মোদী। প্রশ্ন তুলেছেন লালু প্রসাদ যাদবও। তিনি বলেন, ‘যিনি এত মিথ্যে বলেন, বিহারের হার দেখে উনি এতটাই কেঁপে গিয়েছেন যে হিন্দিতে বক্তৃতাও টেলিপ্রম্পটারে দেখে বলতে হয়।’
১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মিরের পুলওয়ামায় এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ভারতের আধাসামরিক বাহিনী সিআরপিএফের ৪৪ সদস্য নিহত হয়। ভারত এ ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করতে থাকে। পাকিস্তান এর জবাবে শান্তির বার্তা দিতে চাইলেও ভারত ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে দেয়। পরদিন পাকিস্তান এর জবাবে ভারতে হামলা চালায়।