ভারতকে দেয়া বিশেষ বাণিজ্যিক সুবিধা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই সুবিধায় যুক্তরাষ্ট্রে কোনো রকম শুল্ক ছাড়াই ভারতের ৫.৬ বিলিয়ন ডলারের সামগ্রী প্রবেশ করতে পারত। এখন সেই সুবিধাই প্রত্যাহার করে নিতে চলেছে ট্রাম্প প্রশাসন। গত সোমবার হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। এর আগে ২০১৩ সালের ২৪ জুন বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
ভারতের জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহারের ব্যাপারে নিজের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে মার্কিন কংগ্রেসকে লেখা চিঠিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘ভারত এতদিন জেনারালাইসজড সিস্টেম অফ প্রেফারেন্স (জিএসপি)-এর মধ্যে ছিল। এখন সেটি প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে।’
এ পদক্ষেপের কারণ ব্যাখ্যা করে ট্রাম্প বলেন, ‘ভারত সরকার ও জাতিসঙ্ঘের বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করার পর আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি বুঝতে পেরেছি, ভারত তাদের দেশের বাজারে ব্যবসার ক্ষেত্রে অন্যদের এ ধরনের সুবিধা দেবে না।’
ভারত বিশ্বজুড়ে এ জিএসপি প্রোগ্রাম থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত দেশগুলোর মধ্যে একটি। আর সেই সুবিধা প্রত্যাহার করা অবশ্যই দিল্লির জন্য একটি বড় ধাক্কা। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে ভারতের বিরুদ্ধে এতবড় পদক্ষেপ আর নেয়া হয়নি।
তবে ভারতের জন্য এখনো স্বস্তির ব্যাপার হচ্ছে, ট্রাম্প জানিয়েছেন, ভারত যুক্তরাষ্ট্রকে একই ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেবে কি না তা খতিয়ে দেখার কাজ চলবে। সে ক্ষেত্রে হয়তো সিদ্ধান্ত পাল্টাতে পারে।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনার ক্ষেত্রে সরাসরি কোনো হস্তক্ষেপ না করলেও যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে পেয়েছিল দিল্লি। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই বাণিজ্যিক দিক থেকে ভারতকে দেয়া বিশেষ সুবিধা প্রত্যাহারের ঘোষণা এলো হোয়াইট হাউজ থেকে। এমতাবস্থায় উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারত কী করে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিভিন্ন দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অনেক দেশের সাথে বাণিজ্য চুক্তি রহিত করেন, কোনো কোনো দেশের সাথে আবার নতুন চুক্তি করেন। যেসব দেশের ব্যাপারে তার আপত্তি রয়েছে সেগুলোকে স্পষ্টভাষায় উল্লেখ করে তাদের সাথে বাণিজ্য রহিত করার ঘোষণা দেন।
বিশেষ করে চীনের সাথে বাণিজ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে তার সময়ে। চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর প্রচুর শুল্ক আরোপ করা হয়। চীনও পাল্টা ব্যবস্থা নেয়। ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ভারতের জিএসপি সুবিধাও প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় ট্রাম্প প্রশাসন। তারা মনে করে ভারতের পণ্য যে সুবিধায় যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারে, ঠিক একই ধরনের সুবিধা তারা ভারতে মার্কিন পণ্য প্রবেশের সময় পায় না। তাই তাদের সেই বিশেষ সুবিধা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে।
তবে যেহেতু ট্রাম্প বিবেচনার একটি পথ খোলা রেখেছেন, সেক্ষেত্রে ভারত কী করবে তাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে যেহেতু সামনেই নির্বাচন তাই এ মুহূর্তে বড় ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া ভারতের পক্ষে সম্ভব হবে না। বরং নতুন কোনো সরকার আসার পরই হয়তো তারা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডি টিভি