সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও বালাকোটের সংখ্যা নিয়ে মুখ খুলেননি মোদি

গত সপ্তাহে ভারত পাকিস্তানজুড়ে সবচেয়ে আলোচিত জায়গাটির নাম ছিল বালাকোট। অনেক কথাই হয়েছে জায়গাটি নিয়ে। কিন্তু সপ্তাহ পার হলে গেলেও এ ব্যাপারে, বিশেষ করে হতাহতের ব্যাপারে কোনো কিছু জানাননি মোদি ও তার সরকার।

কাশ্মিরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলার জেরে ভারত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে তিনটায় পাকিস্তানে হামলা চালায়। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছিল, ঢোকামাত্রই তাদের ধাওয়া দেয় পাকিস্তানের বিমানবাহিনী। তাতেই দেশে ফিরে যায় ভারতের যুদ্ধবিমানগুলো।

ভারতের বিভিন্ন সরকারি সূত্র থেকে বলা হচ্ছিল, বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালিয়ে তারা বেশ কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর ঘাঁটি ধ্বংস করে দিয়েছে। তখন তাদের পক্ষ থেকে হতাহতের কোনো হিসাব দেয়া হয়নি। কিন্তু গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদে প্রথমে বলা হয়, ওই হামলায় দুইশ থেকে তিনশ মানুষ নিহত হয়েছে। পরবর্তীতে ওই দাবি বাড়তে বাড়তে সাড়ে তিনশতে গিয়ে পৌঁছায়।

দিল্লির সরকারের পক্ষ থেকে এ দাবির ব্যাপারে সত্যতা নিশ্চিত করা হয়নি। কিন্তু এ সংখ্যার ব্যাপারে কোনো আপত্তিও তোলা হয়নি। ফলে গণমাধ্যমের সেই সংখ্যাটিই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।

নয়াদিল্লির তথাকথিত এই দাবির পর ভারত জুড়ে আনন্দ উল্লাস ও মিষ্টি বিতরণ শুরু হলেও তা উবে যেতে সময় লাগেনি। ভারতের এই দাবি নিয়ে বিবিসি, গার্ডিয়ান, আল জাজিরা, সিএনএন, রয়টার্স ও নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো সরেজমিন রিপোর্ট প্রকাশ করে এবং ভারতের দাবির বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে।

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই এর প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হচ্ছিল, ভারতের ওই হামলায় কেউ নিহত হয়নি। একজন আহত হয়েছে মাত্র। সে সময়ই ভারতের বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে মোদি সরকারের হামলা ও তার কারণে হতাহতের বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়নি। বরং তারা সরকারের পাশে এসে দাঁড়ান।

কিন্তু সেই উত্তেজনা কিছুটা থিতিয়ে আসলে ভারতের ভিতর থেকেই হতাহতের সংখ্যার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু নিহতের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী কোনো হিসেব দেননি। প্রতিরক্ষামন্ত্রীও চুপ। পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজও বলেছেন, নিহতের সংখ্যা নিয়ে সরকার কিছু বলছে না।

অন্যদিকে বিমানবাহিনীও বলছে, তারা হামলা চালিয়েছে। কিন্তু হামলায় হতাহতের সংখ্যা গোনা তাদের কাজ নয়, সেটা সরকারের কাজ। বরং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এস এস আহলুওয়ালিয়া বলেন, আসলে এ হামলায় কাউকে হত্যা করা নয়, বরং পাকিস্তানকে বার্তা দেয়াই উদ্দেশ্য ছিল। সেটা দেয়া গেছে। বরং নিজের যুক্তির সমর্থনেই তিনি বলেন, ‘সরকার কি নিহতের সংখ্যা বলেছে?’

তবে গুজরাটে এক সম্মেলনে বিজেপির সর্বভারতীয় অমিত শাহ বলেন, ভারতীয় বিমানবাহিনীর অভিযানে মারা গেছে আড়াই শতাধিক ব্যক্তি। তবে তার এই বিবৃতির পরেও সরকারের পক্ষ থেকে কেউ জানাননি, সংখ্যাটি ঠিক না ভুল।

ফলে পুরো ব্যাপারটিকেই এখন কেউ কেউ সাজানো বলেও মন্তব্য করছেন। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, নির্বাচনকে ঘিরেই নিজের প্রচারণা চালাতে মোদি এই যুদ্ধকে ব্যবহার করছেন। ভারতের বিরোধী দলগুলো এখন ঠিক সে দাবিগুলোই করছে। ফলে নির্বাচনকে ঘিরে যেখানে চাঙ্গাভাব থাকার কথা ছিল মোদির চেহারায়, সেখানে এখন টেনশন এসে ভীড় করছে মোদির কপালে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top