কিভাবে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কাছাকাছি আসে
১. ভারতের রাডার নিয়ন্ত্রণ রেখার ছয় মাইলের মধ্যে ২৪ পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান শনাক্ত করে।
২. ভারত বিমানগুলোকে ধাওয়া করার জন্য আটটি যুদ্ধবিমান পাঠায়।
৩. পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান নিয়ন্ত্রণ রেখার ভেতরে ঢুকে ভারতের ঘাঁটিতে লেজার নিয়ন্ত্রিত মিসাইল নিক্ষেপ করে।
৪. ভারতের মিগ-২১ জেট বিমান পাকিস্তানের বিমানকে পেছনে ফেলে।
৫. ভারতের রাশিয়ার ভিমপেল আর-৭৩ বিমানকে আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ধ্বংস করে পাকিস্তান।
৬. ভারতের পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে আটক করে পাকিস্তান।
ভারতীয় বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানের রাডার যখন সাত হাজার ফুট নিচে শত্রু বিমানকে দেখে তখন তিনি তেমন দ্বিধায় পড়েননি। উত্তেজনাপূর্ণ কাশ্মিরের আকাশে যখন তার বিমানকে এফ-১৬ বিমান টার্গেট করে তখন তিনি তার সহযোগীদের বলেছিলেন, ‘আমি তাদের মোকাবেলায় যাচ্ছি।’ অভিনন্দন বর্তমানের মিগ-২১ বিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করার পর পাকিস্তানের হাতে তিনি আটক হন। এর মাধ্যমে বিমানযুদ্ধ শেষ হয়। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বিমান হামলার ঘটনা আবার দেখতে হলো বিশ্বকে। এই ঘটনা দু’টি পারমাণবিক শক্তিধর দেশকে যুদ্ধের মুখোমুখি করেছিল এবং এ অঞ্চলকে আতঙ্কে ফেলেছিল। ব্রিটেনের প্রভাবশালী টেলিগ্রাফ পত্রিকা এটারই বিশ্লেষণ করেছে।
বুধবার সকাল পৌনে ১০টায় ভারতের স্থল রাডার হিমালয়ের পাদদেশের উপরে অস্বাভাবিক কিছু একটা উড়ে আসার সঙ্কেত পায়। রাডার কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ২৪টি পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান দেখতে পায়। বিমানগুলো উসকানিমূলকভাবে উড়ছিল। দীর্ঘ ৮৬ সেকেন্ড সেগুলো অভিনন্দন বর্তমানদের বিমান অনুসরণ করে এবং আকাশে ঘুরপাক খেতে খেতে উড়তে থাকে। পাকিস্তানের যুদ্ধবিমানগুলো প্রথমে সীমান্তের ছয় কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসে। ভারত দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখায়। তারাও আটটি যুদ্ধবিমান পাঠায়। ভারতীয় সামরিক সূত্র জানায়, পাকিস্তানি বাহিনীর তিনটি এফ-১৬ বিমান সীমান্তের পাঁচ কিলোমিটার অতিক্রম করে ভারতের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। তারা নওশরা ঘাঁটিতে লেজার নিয়ন্ত্রিত মিসাইল নিক্ষেপ করে; কিন্তু পাকিস্তানের মিসাইলগুলো লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
সূত্র জানায়, অভিনন্দন বর্তমানের উদ্দেশ্য ছিল এফ-১৬ বিমানের ৬০ ডিগ্রি কোণে নিজের অবস্থান রাখা, যা তাকে সর্বোচ্চ প্রভাব বজায় রেখে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে সক্ষম করবে; কিন্তু এরই মধ্যে তাকে অনুসরণকারী একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান থেকে তার যুদ্ধবিমান হামলার শিকার হয় এবং প্রায় ২৬ হাজার ফুট উপর থেকে তিনি নিচে পড়ে যান। অত্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় পাকিস্তানের যুদ্ধবিমানটি অভিনন্দনের যুদ্ধবিমানে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে সক্ষম হয়। মুহূর্তের মধ্যে অভিনন্দনের যুদ্ধবিমানটি অক্ষম হয়ে পড়ে এবং তিনি প্যারাসুট নিয়ে লাফ দিতে বাধ্য হন। এটা ছিল অভিনন্দনের দুর্ভাগ্য। তিনি ভূমিতে নেমে এলে স্থানীয় গ্রামবাসী তাকে ঘিরে ধরে। তিনি স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা করেন এটি ভারতের ভূখণ্ড কি না। স্থানীয় তরুণেরা তখন পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলে স্লোগান দেয়। ফলে অভিনন্দন তার সাথে থাকা রিভলবার দিয়ে শূন্যে গুলি করতে বাধ্য হন। একপর্যায়ে গ্রামবাসী তাকে পাথর মারতে শুরু করলে তিনি দৌড় দেন ও আবার ফাঁকা গুলি করতে থাকেন। গ্রামবাসী তাকে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে তিনি একটি অগভীর নদীতে পড়ে যান। এ সময় তিনি পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরের দুই দিন তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি ছিলেন।
ব্রিটিশদের কাছ থেকে ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তান ও ভারত চারবার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। এ ছাড়া সীমান্তজুড়ে প্রায়ই তাদের মধ্যে গোলাগুলি হয়।
১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান তৃতীয়বারের যুদ্ধের পর ৪৮ বছরের মধ্যে দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ দু’টির মধ্যে এবারেরটা ছিল প্রথম বিমানবাহিনীর অভিযান। গত মাসে ৪০ জন ভারতীয় আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য নিহত হওয়ায় দেশ দু’টির মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ভারত অধিকৃত কাশ্মিরে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলায় তারা নিহত হয়।
ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান উভয়ই প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দেন। বুধবারের এ ঘটনার পর আরো বড় আকারের হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে। উভয় নেতা কিছুটা নমনীয় হওয়ায় উত্তেজনা কমে আসে। শুক্রবার অভিনন্দন বর্তমানকে ‘শান্তির বার্তা’ উল্লেখ করে ভারতের হাতে হস্তান্তর করে পাকিস্তান। অভিনন্দন বর্তমানকে ‘ভারতের নায়ক’ উল্লেখ করে তাকে বরণ করা হয়। অন্য দিকে শনিবার তিন লক্ষাধিক পাকিস্তানি ইমরান খানকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়নের জন্য একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করে।
পাকিস্তান তাদের আট পাইলটের পরিচয় প্রকাশ করেছে; কিন্তু ভারতের দাবিকৃত একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ধ্বংসের পর সেটির কী হয়েছে তা এখনো রহস্যের মধ্যেই রয়ে গেছে। আর পাকিস্তান তার বনভূমি ধ্বংসের জন্য ভারতের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। যে ক্ষতিপূরণ তারা এখনো অর্জন করেনি। পাকিস্তান মার্কিন সরবরাহকৃত এফ-১৬কে গুলি করে ভূপাতিত করার খবর অস্বীকার করেছে। বিমানটি কোনো দেশের বিরুদ্ধে আপত্তিকর ব্যবহার থেকে নিষিদ্ধ করা ছিল ওয়াশিংটনের।
কোন ধরনের বিমান ও অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে
পাকিস্তান এই যুদ্ধে আটটি অ্যাডভান্সড এফ-১৬ যুদ্ধবিমান, চারটি ফ্রেন্স ড্যাসল্ট মিরাজ-৩ যুদ্ধবিমান, চীনের তৈরি চারটি জেএফ-১৭ থান্ডার বিমান, একটি সাব ২০০০ এরিয় বিমান ব্যবহার করে। অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে মাঝারি পাল্লার আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য এআইএম-২০ ক্ষেপণাস্ত্র। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের জন্য নির্মাণ করেছে। অন্য দিকে ভারত এই যুদ্ধে দু’টি রাশিয়ার তৈরি সুখোই সু-৩০ মাল্টিরোল ফাইটার, দু’টি আপগ্রেড মিরেজ-২০০০এইচ যুদ্ধবিমান, সোভিয়েত যুগের চারটি মিগ-২১ বাইসন যুদ্ধবিমান ব্যবহার করেছে। অস্ত্র ব্যবহার করেছে রাশিয়ার তৈরি স্বল্প পাল্লার আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ভিমপেল আর-৭৩ ক্ষেপণাস্ত্র। সূত্র : টেলিগ্রাফ