ভারত পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে কতটুকু সফলতা অর্জন করেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ ভারতেই। এরই মধ্যে নতুন তথ্য দিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। তিনি বলেন, হামলায় ২৫০-এর মতো লোক নিহত হয়েছে।
কাশ্মিরের পুলওয়ামা হামলার পর এই ১৯ দিনে মুহূর্তে মুহূর্তে পাল্টেছে দুই দেশের, বিশেষভাবে বললে ভারতের অভ্যন্তরের রাজনৈতিক আবহাওয়া। কখনো পাকিস্তানবিরোধী সেন্টিমেন্ট, আবার কখনো নিজের দেশের শাসকদলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ, কখনো পুরো পাকিস্তানকে পুড়িয়ে দেয়ার আহ্বান, আবার কখনো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর অকুণ্ঠ প্রশংসা। সবাই হচ্ছে ভারতে।
ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলা চলে ১৪ ফেব্রুয়ারি। সে হামলায় নিহত হয় ভারতের আধা সামরিক বাহিনী সিআরপিএফের ৪৪ জন সদস্য। এ অবস্থায় পাকিস্তানকে দায়ী করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে পুরো ভারত। দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে এ নিয়ে বাদানুবাদ চলতে থাকে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান শান্তির বার্তা দিলেও জানিয়ে দেন, হামলার শিকার হলে তার দেশ বসে থাকবে না।
এ অবস্থায় ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে পাকিস্তানে বড় ধরনের হামলা চালানোর দাবি করে ভারত। দিল্লি যেখানে দাবি করে পাকিস্তানের ভিতরে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকটি সশস্ত্র ঘাঁটি ধ্বংস করে এবং সেখানে তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ মানুষ নিহত হয়। পাকিস্তান সেখানে দাবি করে, ঢোকার পরপরই পাকিস্তানের বিমানবাহিনীর ধাওয়ায় পালিয়ে যায় ভারতের যুদ্ধবিমানগুলো। তাদের হামলায় উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
কিন্তু আত্মরক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে পরদিন পাকিস্তান ভারতে হামলা চালায়। নয়াদিল্লি এরপরপরই সেখানে হামলা চালাতে গেলে পাকিস্তানি বাহিনীর হামলায় দুইটি মিগ ২১ বিমান বিধ্বস্ত হয় এবং একজন পাইলট ধরা পড়েন। পরদিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাকে মুক্তির ঘোষণা দেন। ঘোষণা অনুযায়ী পরদিন শুক্রবার সন্ধ্যায় পাইলট অভিনন্দনকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়।
এ কয়দিন ভারতের মানুষ ব্যস্ত ছিল অভিনন্দনকে নিয়েই। কিন্তু সেই অবস্থা কাটতেই আবার বিতর্ক উঠে ভারতের অভিযানগুলোকে নিয়ে। বিশেষ করে বালাকোট হামলা নিয়ে বিরোধীদলগুলোর কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ে নরেন্দ্র মোদির সরকার। সবাই এসব অভিযানের বিস্তারিত তথ্য জানতে চান প্রমাণসহ। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তো হামলার সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। কংগ্রেসের মনমোহন সিংহ বলেন, ভারত-পাকিস্তান উভয়েই ‘পাগলের মতো ধ্বংসের দিকে দৌড়াচ্ছে’।
সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছিল, তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ লোক মারা পড়েছে ভারতের অভিযানে। কিন্তু এর মধ্যেই পিছু হঠতে শুরু করে বিজেপি সরকার। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এসএস অহলুওয়ালিয়া বলেছেন, বিমানবাহিনী হামলায় ৩৫০ জন মারা যাওয়ার কথা সরকারের কেউ বলেননি। কোনো প্রাণহানিও হয়নি। কারণ ওইসব ঘাঁটির সামনে ফাঁকা জায়গায় বোমা ফেলে পাকিস্তানকে শুধু বার্তা দেয়া হয়েছিল।
এবার বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ জানান, বিমানবাহিনীর অভিযানে আড়াই শতাধিক লোক মারা গেছে। তিনি বলেন, ‘পুলওয়ামায় হামলার পরে সবাই ভেবেছিল, এ সময় সার্জিকাল স্ট্রাইক করা যাবে না। এবারে কী হবে? তখনই মোদী সরকার ১৩ দিনের মাথায় বিমানবাহিনীর অভিযান চালিয়ে ২৫০-র বেশি সশস্ত্র ব্যক্তিকে মেরেছে।’
আপাতত যুদ্ধ-দেশপ্রেম-জাতীয়তাবাদ নিয়ে বিরোধীরা যত বেশি বিতর্কে জড়াচ্ছেন, তত খুশি হচ্ছে বিজেপি। ঘরোয়া স্তরে দলের একাধিক নেতা বলছেন, ভোটের আগে বিতর্ক যত এ সবের আশেপাশে বেঁধে রাখা যাবে, ততই লাভ। অন্যসব বিষয় তাহলে পিছিয়ে পড়বে। সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপেস