ঋণের টাকা দিয়ে পরামর্শক সম্মানী

একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ করতে দেশী ও বিদেশী মিলে মোট ৪৩ জন পরামর্শক লাগবে। আর এদের পেছনে সম্মানি বাবদ ব্যয় হবে ১১৯ কোটি ৭৬ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। যেখানে গড়ে পরামর্শকদের জনপ্রতি খরচ হবে দুই কোটি ৭৯ লাখ ছয় হাজার টাকা। এই পরামর্শক লাগছে জাপানের বিনিয়োগকারীদের জন্য নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে প্রস্তাবিত জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে।

এই প্রকল্প জাইকার দুই হাজার ১২৮ কোটি টাকার ঋণে বাস্তবায়ন হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পেশ করা হচ্ছে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

প্রস্তাবনার তথ্য থেকে জানা গেছে, সম্প্রতি বাংলাদেশ সব নির্ণায়ক পূরণ করে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে দেশে দ্রুত শিল্পায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে। এসব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পরিকল্পিত শিল্পায়নের মাধ্যমে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য স্থানীয় এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশ সরকার ‘খোলা দ্বার’ নীতি গ্রহণ করেছে।

উক্ত নীতির আলোকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ ছাড়া দেশের সুষম উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে সরকার বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)-এর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ২০১৫ সাল হতে ২০৩০ সালের মধ্যে ১৫ বছরে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে গত ২০১৮ সালের জুনে মোট ৭৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়া হয়। যার মধ্যে ৫৬টি সরকারিভাবে এবং অবশিষ্ট ২৩টি বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠা করা হবে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র বলছে, ২০১৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) মধ্যে ১৫ দশমিক ৮২৫ বিলিয়ন ইয়েনের সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ উন্নয়ন প্রকল্প-শীর্ষক একটি ঋণচুক্তি সই হয়। যার দেশীয় মুদ্রায় মূল্যমান হলো এক হাজার ১৮৭ কোটি টাকা।

অবশিষ্ট প্রায় ৯৪০ কোটি ৬৯ লাখ ৬৪ হাজার টাকা অর্থায়নের ব্যাপারে ৪০তম ইয়েন লোন প্যাকেজের আওতায় জাইকা বাংলাদেশ সরকারকে এফডিআই প্রমোশন-২ প্রকল্পের মাধ্যমে ঋণ সহায়তা দেয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করতে একটি এ্যাপ্রাইজাল মিশন গত ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশ সফর করে।

প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ভূমি উন্নয়ন, এক্সেস রোড নির্মাণ, সংরক্ষণ খাল ও সংরক্ষণ পুকুর নির্মাণ, পাম্প স্টেশন স্থাপন, গ্যাস পাইপ লাইন স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও গ্যাস সরবরাহ, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন, পাওয়ার স্টেশন ও সাব-স্টেশন, ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপন এবং ২১ জন আন্তর্জাতিক ও ২২ জন স্থানীয় পরামর্শক নিয়োগ করা।

জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল (জেইজেড) স্থাপনের জন্য ৯৯১ দশমিক ৪৮ একর ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। প্রকল্প ব্যয়ে সরকারি তহবিল থেকে ৪৫৪ কোটি ৩৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা এবং জাইকা ঋণ থেকে দুই হাজার ১২৭ কোটি ৮২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা খরচ করা হবে। জাইকার দেয়া বাকি অর্থের চুুক্তি আগামী জুনে স্বাক্ষরিত হওয়ার জন্য নির্ধারিত রয়েছে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে জাপানি ও স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ব্যয় বিভাজনে দেখা যায়, গ্যাস পাইপলাইনের জন্য ১০ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। যার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এখানে প্রতি একরে মূল্য ধরা হয়েছে সাত কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। গ্যাস পাইপ লাইন বসানোর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রতি কিলোমিটারে ১৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ফলে ছয় কিলোমিটারে ব্যয় হবে ১১৮ কোটি ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার টাকা।

পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্র বলছে, এই প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকারের দেয়া অর্থ ঋণ হিসেবে গণ্য হবে। এ জন্য বেজাকে এক শতাংশ সুদে পাঁচ বছর গ্রেসপিরিয়ড রেখে ২০ বছরে ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে হবে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top