রুবানা হক হচ্ছেন বিজিএমইএ’র প্রথম নারী সভাপতি

মো. আব্দুল কাইয়ুম : তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম। নির্বাচনে মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হককে প্যানেল নেতৃত্বে রাখা হয়েছে। নির্বাচনে যৌথ প্যানেল জয়লাভ করলে ফোরামের লিডার হিসেবে বিজিএমইএ’র প্রথম নারী সভাপতি হবেন রুবানা হক। তিনি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের সহধর্মিণী।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রুবানা হক এ প্রতিবেদককে বলেন, বিজিএমইএ নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরামের পক্ষ থেকে পূর্নাঙ্গ প্যালেন জমা দিয়েছি। নির্বাচন নিয়ে আমি আশাবাদী। আশাহত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা জোটবদ্ধভাবে শক্তিশালী প্যানেল নিয়ে নির্বাচন করছি। আমাদের প্যানেলে যারা আছে তারা সবাই প্রতিষ্ঠিত ও যোগ্য নেতা। আমরা পোশাক খাতের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। আশা করছি, আমাদের প্যালেন জয়ী হবে।

নির্বাচিত হলে বিজিএমইএর প্রথম নারী সভাপতি হবেন, বিষয়টি কীভাবে দেখছেন- জবাবে পোশাক খাতের এ নারী উদ্যোক্তা বলেন, এখন কলকারখানায় নারী, ব্যবসা বাণিজ্যে নারী, সব জায়গায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারী। তিনি পুরো দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাহলে আমরা কেন নেতৃত্ব দিতে পারব না? ইনশাআল্লাহ অবশ্যই নেতৃত্ব দিতে পারব। নেতৃত্ব একটি বড় দায়িত্ব। এটি আল্লাহ বুঝেই দিয়ে থাকেন। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঠিক থাকলে এ দায়িত্ব পালন করা কঠিক কিছু নয়।

তিনি বলেন, তৈরি পোশাক খাতে প্রায় ৩০ লাখ নারী শ্রমিক কাজ করেন। তাদের নিয়ে সবসময় আমি স্বপ্ন দেখি, কিছু করব। তাই তাদের জন্য কিছু করতে চাই। সুযোগ পেলে অবশ্যই করব। কারণ, এখন আর আমার পাওয়ার কিছু নেই। এখন দেয়ার সময়।

প্রয়াত মেয়ার আনিসুল হকের নেতৃত্বের প্রসঙ্গ টেনে রুবানা হক বলেন, ওনি আমার ৩০ বছরের সঙ্গী ছিলেন। ব্যবসা-বাণিজ্য সব ক্ষেত্রেই নেতৃত্ব শিখিয়েছেন। তিনিও বিজিএমইএ নেতৃত্ব দিয়ে উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। আশা করছি, নির্বাচিত হলে তার সম্মান অক্ষুণ্ন রাখতে পারব। একই সঙ্গে বর্তমান সভাপতির উন্নয়ন কাজের ধারাবাহিতা রক্ষা করব।

এদিকে প্রায় পাঁচ বছর পর বিজিএমএমইএ’র পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন হবে আগামী ৬ এপ্রিল। দুই বছর মেয়াদি পর্ষদের ৩৫টি পরিচালক পদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল অনুযায়ী, শনিবার ছিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। প্রত্যাহারের শেষ দিন রাখা হয়েছে আগামী ৬ মার্চ।

বিজিএমএমইএ’র নির্বাচন পরিচালনায় বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, শনিবার শেষ দিন ৫৯জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে সম্মিলিত পরিষদের মোট ১৭ জন (ঢাকা ১২ জন এবং চট্টগ্রামের ৫ জন) ও ফোরামের ২৩ জন (ঢাকা ১৮ জন এবং চট্টগ্রামের ৫ জন)। অন্যদিকে স্বাধীনতা পরিষদের ১৮ জন পরিচালক পদপ্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

জানা গেছে, ২০১৫ সালে বিজিএমইএ’র নেতৃত্ব নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়ার পর প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি প্যানেল সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম সমঝোতার মাধ্যমে বর্তমান সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানকে সভাপতি করে একটি পরিচালনা পর্ষদ ঠিক করেছিল। এরপর থেকে আর নির্বাচন না হয়ে তিন ধাপে এই পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ বাড়িয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এরপর সিদ্দিকুর রহমা‌নের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর। তখন নির্বাচন না হওয়ায় মেয়াদ আরও ছয় মাসের জন্য বাড়ানো হয়েছিল।

এদিকে ২০১৫ সালে দুই প্যানেলের সমঝোতায় সিন্ধান্ত অনুযায়ী আগামী মেয়াদে সভাপতি হবেন ফোরাম থেকে। সেই অনুযায়ী ফোরামের শীর্ষ নেতারা সভাপতি পদের জন্য রুবানা হককে নির্বাচিত করেছেন। এদিকে সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরামের আধিপত্য ভাঙতে আলাদাভাবে প্যানেল দিচ্ছে স্বাধীনতা পরিষদ। আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন ডিজাইন অ্যান্ড সোর্স (ডিএসএল) গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম।

এবারের বিজিএমইএ’র নেতৃত্ব নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৯৫৫ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার ১ হাজার ৫৯৭ জন। বাকি ৩৫৮ জন চট্টগ্রামের।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top