পনের বছর বয়সে ব্রিটেন থেকে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএসে যোগ দেয়া শামীমা বেগমের স্বামী, যিনি একজন ডাচ নাগরিক, জানিয়েছেন তিনি চান তার স্ত্রী ও সন্তান তার সঙ্গে নেদারল্যান্ডসে ফিরে যাবেন। আইএসের দখলকৃত এলাকায় শামীমা পৌঁছানোর কয়েকদিন পরই ইয়াগো রেইদিজক ও শামীমার বিয়ে হয়।
এর আগে ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছিল, আইএসে যোগ দেবার কারণে শামীমা দেশটির নাগরিকত্ব হারাতে পারেন। তার নাগরিকত্বের বিষয়ে ব্রিটেন কর্তৃপক্ষের লেখা একটি চিঠি তার মায়ের কাছে ইতোমধ্যেই পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে মেয়েকে জানানোর জন্য। বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইয়াগো রেইদিজক স্বীকার করেছেন, তিনি আইএসের হয়ে যুদ্ধ করেছেন। কিন্তু এখন তিনি স্ত্রী ও সদ্যজাত সন্তানের কাছে ফিরে যেতে চান।
২৭ বছর বয়সী রেইদিজক এখন উত্তর পূর্ব সিরিয়ায় একটি কুর্দি বন্দি শিবিরে আটক আছেন। নেদারল্যান্ডসে ফিরে গেলে আইএসে যোগ দেবার অপরাধে তাকে ছয় বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, তিনি আইএস ছেড়ে দিয়েছেন এবং শুধু তাই নয়- আগেও এই দল থেকে বের হয়ে যেতে চেষ্টা করেছিলেন।
রেইদিজক জানিয়েছেন, ডাচ গোয়েন্দা হিসেবে সন্দেহ করে রাক্কায় আইএস তাকে বন্দি করেছিল এবং তার ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালায়। ইসলামিক স্টেটের স্বঘোষিত ‘খেলাফতের’ রাজধানী রাক্কায় এই গোষ্ঠীর পতনের পর, যখন উত্তর সিরিয়ার বাগুজেও এই গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ হারায়, তখন বর্তমানে ১৯ বছর বয়সী শামীমা এবং তার স্বামী শহর থেকে পালিয়ে যান।
রেইদিজক একদল সিরীয় যোদ্ধার কাছে আত্মসমর্পণ করেন। আর শামীমা উত্তর সিরিয়ার আল-হাওল শরণার্থী শিবিরে আরো ৩৯ হাজার মানুষের সঙ্গে আশ্রয় নেন। সেখানেই শামীমা একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন। তবে এখন শামীমা সেখান থেকে অন্য কোথাও চলে গেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
রেইদিজক বলেছেন, পনের বছরের একজন কিশোরীকে বিয়ে করার বিষয়টি তার কাছে ‘ভুল’ মনে হয়নি, কারণ এটি ছিল ‘তার (শামীমার) সিদ্ধান্ত’। তখন রেইদিজকের বয়স ছিল ২৩ বছর। তবে শুরুতে বয়স কম বলে তিনি শামীমার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না বলে দাবী করেছেন।
তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে, যখন আমার বন্ধুরা এসে বলেছিল যে রাক্কার নারী কেন্দ্রের এক মেয়ে বিয়ের ব্যাপারে আগ্রহী, আমি সেসময় খুব একটা আগ্রহ দেখাইনি। কারণ তার বয়স খুবই কম, কিন্তু আমি পরে রাজি হই। আমি তাকে অপেক্ষা করতে বলেছিলাম, কিন্তু সে রাজি হয়নি। ফলে তখন আমরা বিয়ে করি।’
নাগরিকত্ব নিয়ে হৈচৈ
এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সিরিয়ার শরণার্থী শিবির থেকে এক ব্রিটিশ দৈনিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে শামীমা বেগম বলেন, তিনি ব্রিটেনে ফিরতে চান, কিন্তু তার অতীত কর্মের জন্য তার কোন অনুতাপ নেই। এরপর থেকে ব্রিটেনে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে যে, নিষিদ্ধ একটি উগ্রবাদী সংগঠনের যোগ দিতে যাওয়া এই তরুণীকে দেশে ফেরত আসতে দেওয়া উচিৎ কিনা।
ইতোমধ্যে ব্রিটেন জানিয়েছে, যেহেতু শামীমা বেগমের বয়স ১৯ হয়েছে, তাই তিনি অন্য দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য। সে কারণেই শামীমা বেগমের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল হতে পারে। যেহেতু শামীমার মা বাংলাদেশের নাগরিক, ফলে মায়ের দিক থেকে শামীমা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেতে পারেন এমন কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়ে দিয়েছে, শামীমা বেগম বাংলাদেশের নাগরিক নন এবং তাকে বাংলাদেশে আসতে দেয়া হবে না।
এদিকে, শামীমার স্বামী নেদারল্যান্ডসের নাগরিক রেইদিজক সে দেশের সরকারের সন্ত্রাসবাদীদের তালিকায় রয়েছেন, কিন্তু তার নাগরিকত্ব বাতিল করেনি দেশটি।