অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে : শিবির সভাপতি

পুরান ঢাকার চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। রোববার রাজধানীর এক মিলনায়তনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মোবারক হোসাইন ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। এসময় কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক রাজিফুল হক বাপ্পীসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মোবারক হোসাইন বলেন, গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানী ঢাকার চকবাজারে একটি ভবনে আগুন লেগে তা আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং এতে ৭৮-এর অধিক সংখ্যক মানুষ আগুনে পুড়ে নিহত ও আরো বহুসংখ্যক লোক আহত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো কয়েকজনের মৃত্যু হয়।

তিরি আরো বলেন, এখনও অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। যা দেশাবাসীকে ভারাক্রান্ত করে। তিনি বলেন, নির্মমভাবে আগুনে পুড়ে নারী শিশুসহ মানুষের নিহত হওয়া এবং তাদের স্বজনদের আর্তনাদ শুধু বাংলাদেশের মানুষকে নয় বরং পুরো বিশ্ববাসীকে কাঁদিয়েছে। জাতি এমন দৃশ্য আর দেখতে চায় না।

শিবির সভাপতি বলেন, আমরা জানি অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আমাদের সহায়তা অপর্যাপ্ত। কিন্তু এমন ঘটনা পুনরায় যেন না ঘটে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বোচ্চ সহায়তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অগ্নিকাণ্ডে যারা নিহত হয়েছেন তাদের পরিবার-পরিজন এবং আহতদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আহতদের বিনামূল্যে উন্নত চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে। দ্রুত জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে কেমিক্যালের দোকান ও গুদাম সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। রাস্তার পর্যাপ্ত প্রশস্ততা রেখে সংস্কার করতে হবে। নিরাপত্তাবিষয়ক আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ ও সচেতনা বৃদ্ধি করতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। আমরা আশাকরি সরকার দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে।

তিনি আরো বলেন, ২০১০ সালের ৩ জুন রাসায়নিক পদার্থ থেকে পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। যাতে প্রাণ হারান ১২৪ জন। তখন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাটি ধ্বংস্তুপে পরিণত হয়েছিল। তখন তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু সে তদন্ত কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি। সকলেই একমত যে, ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় কেমিক্যালের গুদাম বা দোকান থাকা উচিত নয়। তা সত্ত্বেও পুরান ঢাকায় কেমিক্যালের গুদাম বা দোকান আগের মতোই ছিল। সরকারের অবহেলা ও অদূরদর্শিতার কারণেই একশ্রেণীর অর্থলোভী ব্যবসায়ী জনবসতিপূর্ণ এলাকায় কেমিক্যালের গুদাম তৈরি করে ব্যবসা করছে আর এমন নির্মম ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। নিমতলী ট্রাজেডি থেকে শিক্ষা নিলে চকবাজার আগুনের ঘটনায় এতটা ভয়ংকর রূপ দেখতে হতো না। তা ছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়নও ব্যাপক প্রাণহানী ও ক্ষতির কারণ। চকবাজারসহ পুরান ঢাকার অনেক এলাকায় দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলাচলের জন্য উপযুক্ত রাস্তা নেই। ফলে একটি ব্যস্ততম এলাকায় সরু রাস্তার কারণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যথাসময়ে পৌঁছালেও যথাযথভাবে অগ্নি-নির্বাপণের কাজ করতে পারেনি। এ অবস্থার পরিবর্তন না করলে ভবিষ্যতেও এমন দুঃখজনক ঘটনা দেখতে হতে পারে।

শিবির সভাপতি বলেন, ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সাধ্যানুযায়ী বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমাদের এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। আমরা অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। বিজ্ঞপ্তি

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top