পাকিস্তানকে শিক্ষা দেয়ার শক্তি কি ভারতের আছে?

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামা হামলার পর কঠোর জবাবের অপেক্ষা করার জন্য পাকিস্তানকে হুঁশিয়ার উচ্চারণ করে দিয়েছিলেন। তিনি জবাব প্রদান করার সময়, স্থান ও প্রকৃতি নির্ধারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তার প্রতিরক্ষা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ২১ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় সামরিক বাহিনীল যেকোনো দুঃসাহসের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক জবাব দেয়ার কর্তৃত্ব দিয়েছিলেন সশস্ত্র বাহিনীকে। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া বলেন, যেকোনো দুঃসাহসের সমুচিত জবাব দেয়া হবে। ভারত ও পাকিস্তান- উভয় দেশের সশস্ত্র বাহিনী রয়েছে সর্বোচ্চ সতর্ককতায়। এর ফলে দুর্ঘটনাক্রমে, কর্তৃত্ববিহীন ও নিষ্ফল সামরিক হামলা ঘটে যেতে পারে।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় জঙ্গি বিমানগুলো নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘন করলেও পাকিস্তান বিমান বাহিনীর তাৎক্ষণিক জবাবে তাদের মিশন সফল করতে পারেনি। ভারতীয় বিমান বালাকোটের কাছে তাদের বোমা তাড়াহুড়া করে ফেলে পালিয়ে যায়। বস্তুত এ ধরনের সামরিক অভিযান পরমাণু সজ্জিত প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে বিপর্যয়কর সঙ্ঘাত ত্বরান্বিত করতে পারে।

ইতিহাস বলে, যুদ্ধ মানেই পিচ্ছিল পথ। ফলে পরমাণু অস্ত্রধারী দুই দেশের মধ্যে সঙ্ঘাত মানেই পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা। ভারতের অ্যাডমিরাল এল রামদাস (অব.) যথাযথভাবেই ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে লিখেছেন, সুপ্রিম কমান্ডার হিসেবে বর্তমান অচলাবস্থাকে যুদ্ধ পরিস্থিতি ঠেলে দেয়ার প্রকৃত বিপদ সম্পর্কে আমাদের নেতাদের সতর্ক করে দিন। কারণ ভারত ও পাকিস্তান পরমাণু অস্ত্রধারী হওয়ায় এই উত্তেজনা অল্প সময়ের মধ্যেই প্রচলিত সম্পৃক্ততার বাইরে চলে যেতে পারে।

ভারতের সাবেক গোয়েন্দা প্রধান এ এস দওলতও অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে পরমাণু অস্ত্রে সজ্জিত দুই দেশের মধ্যকার যুদ্ধ কোনো পিকনিক নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, মোদি সরকার পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধিকে ঝুঁকিতে ফেলে দিতে চাইছেন জাতীয় নির্বাচনে চরমপন্থীদের জন্য সমর্থন সংগ্রহ করার জন্য।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারির পুলওয়ামা হামলার পর ভারতীয় ক্ষমতাসীন এলিট ও সেইসাথে মিডিয়া ও বিনোদন শিল্প পাকিস্তানকে অভিযুক্ত ও হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তারা পাকিস্তানকে শিক্ষা দেয়ার দিকেই জোর দিচ্ছে। অবশ্য পাকিস্তানকে শাস্তি দেয়ার সামর্থ্য ভারতের আছে কি নেই, তা বিতর্কের বিষয়। তবে কোনো পরমাণু অস্ত্রধারী দেশকে শিক্ষা প্রদান করা যৌক্তিক সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের জন্য কঠিন বিষয়ই। কারণ তাতে পারস্পরিক ধ্বংসের আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় বিমানগুলোর তাড়াহুড়া করে পলায়নে প্রমাণ করে, পাকিস্তানকে শিক্ষা দেয়ার মতো সামর্থ্যের অভাব আছে ভারতের।

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আন্তরিকভাবেই পুলওয়ামায় হামলাকারীদের গ্রেফতার ও তদন্ত করার (যদি ভারত তথ্য প্রদান সরবরাহ করে) ভারতকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু মোদি সরকার চরম সিদ্ধান্তই নিতে চান। ২১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আবারো বলেছেন, পাকিস্তান কোনো দিক থেকেই পুলওয়ামা হামলার সাথে জড়িত নয়।

তবে মোদি সরকার পাকিস্তানের প্রস্তাব গ্রহণ করতে রাজি নয়। তারা এখন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। নির্বাচনে তারা জয়ী হবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহে পড়ে গেছেন। কারণ আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলো তাদের পক্ষে নেই। তাছাড়া অর্থনৈতিক কর্মসম্পাদন দক্ষতার অভাব রয়েছে মোদি সরকারের। এখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা চালিয়ে সমর্থন জোগার করার চেষ্টা করছে বিজেপি। এ কারণেই তারা পাকিস্তানের প্রস্তাব গ্রহণ করছে না।

পরমাণু শক্তি দুটির উত্তেজনার কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মর্মাহত। তারা সংযম প্রদর্শন ও সংলাপে বসার জন্য ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। ২২ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিমত প্রকাশ করেন, এখন পাকিস্তান ও ভারত উভয়েই খুবই খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছে। পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেঙ শুয়াং বলেন, পাকিস্তান ও ভারত উভয়ে দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দেশ। স্থিতিশীল পাকিস্তান-ভারত সম্পর্ক আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাস্তবে কাশ্মির বিরোধের সমাধান না হলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। নয়া দিল্লির উচিত হবে ভারত অধিকৃত কাশ্মিরে কাশ্মিরিদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য ভারতকে তার আগ্রাসী নীতি বদলাতে হবে।

সবশেষে বলা যায়, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বিরোধ অবসানে সংলাপই একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প। সব বিরোধপূর্ণ ইস্যুতে নয়া দিল্লির সাথে সংলাপে বসতে আগ্রহী ইসলামাবাদ। তবে আসন্ন নির্বাচনে হিন্দু ভোট নিশ্চিত করার জন্য মোদি করার উত্তেজনার পারদ চড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে পরিস্থিতি উত্তেজনাকর। এ কারণে বিপর্যয়কর যুদ্ধ এড়াতে ভারত ও পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন এলিটদের কাছ থেকে যৌক্তিক জবাব প্রয়োজন।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top