কাশ্মীরের সংগঠন জামায়াত-ই-ইসলামিকে নিষিদ্ধ করেছে ভারত। আর এতে বিপদে পড়েছে ওই উপত্যকার এক লাখ ছাত্রছাত্রী ও তাদের পরিবার। এই ধর্মীয়-রাজনৈতিক সংগঠনটি অন্তত ৩২৫টি স্কুল চালায় ভূস্বর্গে। যে ভাবে জামাতের প্রধানসহ তিনশোর বেশি নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তাতে বড়সড় প্রশ্নের মুখে স্কুলগুলোর ভবিষ্যৎ। প্রশাসনও এ ব্যাপারে কিছু বলছে না।
ভারতশাসিত কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি শনিবার বলেন, ‘জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার পরিণতি ভয়ঙ্কর হবে। এই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা রাজ্যের পরীক্ষায় ভালো স্থান অধিকার করে। স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে এদের কী হবে!’
পুলওয়ামার ঘটনার পরই উপত্যকায় স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলোর উপর সরকারি নজরদারি বাড়ানো হয়। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ইউএপিএ আইনে পাঁচ বছরের জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার। অভিযোগ, উগ্রবাদী সংগঠনগুলোর সাথে যোগাযোগ ছিল জামায়াতের।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই ঘোষণার পরই তিনশোরও বেশি নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের ঘর-বাড়িসহ বিভিন্ন সম্পত্তি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়। বহু জেলা প্রশাসক নেতাকর্মীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন।
জম্মু-কাশ্মীরে অন্তত ছ’হাজার সদস্য রয়েছে জামায়াতের। স্কুল, অনাথ আশ্রম, ত্রাণ সংগঠনসহ নানা ধরনের সামাজিক প্রতিষ্ঠান চালায় জামায়াত। প্রাইভেট স্কুলস অ্যাসোসিয়েশন অফ জম্মু-কাশ্মীরের হিসেব বলছে, রাজ্যে সবমিলিয়ে অন্তত ৩২৫টি স্কুল চালায় জামায়াত। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া যায় এই স্কুলগুলোতে। ছাত্রছাত্রী লাখখানেক। উপত্যকার অন্তত ১০ হাজার মানুষ স্কুলগুলোতে চাকরি করেন।
এক ছাত্রের বাবা ফয়াজ আহমেদের প্রশ্ন, ‘স্কুলগুলো চালাতে দেয়া হবে কি না, তা স্পষ্ট করুক সরকার। স্কুলগুলো শিক্ষা দফতরের অনুমোদনপ্রাপ্ত। তাহলে এতদিন স্কুলগুলো চলতে দেয়া হল কী করে?’
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বাদগামের এক শিক্ষকের কথায়, ‘স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে গেলে এক লাখ ছাত্রছাত্রী যেমন বিপদে পড়বে, তেমন আমার মতো অনেকে চাকরি হারাবে।’
অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান জি এন ভার বলেন, ‘আর পাঁচটা বেসরকারি স্কুলের মতোই এগুলো শিক্ষা পর্ষদের পাঠ্যক্রম অনুযায়ী চলে। বন্ধ হয়ে গেলে শিক্ষাক্ষেত্রে বড়সড় ক্ষতি হবে।’
স্কুলগুলো কি বন্ধ করে দেয়া হবে? এ ব্যাপারে জম্মু-কাশ্মীর সরকারের মুখপাত্র রোহিত কানসাল, কাশ্মীরের ডিভিশনাল কমিশনার বশির আহমেদ খান, শ্রীনগরের ডিভিশনাল কমিশনার শাহিদ চৌধুরিকে ফোন করা হলেও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
১৯৬৫ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করেছিল জামায়াত। ১৯৭২ সালে ৮৭ সদস্যের বিধানসভায় পাঁচটি আসন জেতে তারা। ইন্দিরা গান্ধীর আমলেও জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ১৯৭৭ সালে সেই নিষেধাজ্ঞা ওঠে। এ বার কী, সে দিকেই তাকিয়ে উপত্যকা?
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী গাড়িবোমা বিস্ফোরণে ভারতের ৪০ জনেরও বেশি জওয়ান নিহত হয়। এই হামলার পর প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তজনা ছড়িয়ে পড়ে। এই হামলার রেশ ধরেই জম্মু এবং কাশ্মীরের ইসলামি রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামিকে নিষিদ্ধ করে ভারত সরকার। গত দুই সপ্তাহে রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামের অনেক নেতাকর্মীকে তুলে নিয়ে যায় ভারতের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
সূত্র : এই সময়