শীতের তীব্রতা কমতে শুরু করলেও বাড়ছে নির্বাচনী উত্তাপ। গেলো মাসের শেষ সপ্তাহে শুরু হওয়া এই উত্তাপ থাকবে ১৮ মার্চ পর্যন্ত। শীতের সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত সর্বত্র নির্বাচনী আলোচনা চলছে। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে সরগরম সিলেটের বিয়ানীবাজার।
প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই প্রার্থীদের নির্ঘুম প্রচার-প্রচারণা জমে উঠেছে। উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারের অলিগলি এরই মধ্যে ছেয়ে গেছে প্রার্থীদের ছবি ও প্রতীক সম্বিলিত পোস্টার, ব্যানারে। আর সন্ধ্যা হলেই গ্রাম-গঞ্জের হাট বাজারের চায়ের স্টলগুলো সরব হয়েছে উঠে নির্বাচনী আড্ডায়। প্রার্থীরা উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাজারে তৈরি করেছেন অস্থায়ী অফিস, যেখান থেকে নিজ নিজ প্রার্থীদের পক্ষ থেকে ভোট চাওয়া হচ্ছে।
ভোট চাইতে রিকশা, ভ্যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা ট্রাকে করে প্রার্থী কিংবা তাদের সমর্থকরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন পাড়া-মহল্লায়। আর ভোটারদের আকৃষ্ট করতে তৈরি করা হয়েছে গান। সেই গান মাইকে বাজিয়ে ভোট চাইছেন প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকরা। আবার প্রচারণায় পিছিয়ে নেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। সেখানেও পাওয়া যাচ্ছে প্রার্থীদের দেওয়া নানা প্রতিশ্রুতি।
জানা যায়, ২৫১.২২ কিলোমিটারের বিয়ানীবাজার উপজেলায় দশটি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভার জনসংখ্যা ২ লাখ ৫৩ হাজার ৩শ’ ৭০জন। এই উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৭০ হাজার ৬’শ ১৫ জন। তার মধ্যে পুরুষ ৬৫ হাজার ৭৭জন ও মহিলা ৭১ হাজার ৪শ’ ১১জন। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বিন্দ্বীতা করছেন ৬ জন প্রার্থী। ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২জন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩জন প্রার্থী প্রতিদ্বিন্দ্বীতা করছেন।
নির্বাচনে বিয়ানীবাজার উপজেলায় শুধু ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী থাকলেও অন্য কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী নেই। আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিপরীতে নিজ দলের আরো ৩জন বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বিন্দ্বীত করছেন। এজন্য ভোটের লড়াইয়ের নিজেদের মধ্যেই লড়াই হবে। তাছাড়া দলীয় প্রতীক ছাড়াই নির্বাচনে প্রতিদ্বিন্দ্বীতা করছেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সহসভাপতি। ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থী থাকলেও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যানসহ আরো একজন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী রয়েছেন।
নির্বাচনী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচন চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন জমা দেয়া প্রার্থীরা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান খান (নৌকা), সাংগঠনিক সম্পাদক ও শহীদ পরিবারের সন্তান মোহাম্মদ জাকির হোসেন (আনারস), কার্যকরী কমিটির সদস্য শামীম আহমদ (মোটর সাইকেল), স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবুল কাশেম পল্লব (হেলিকপ্টার), জাতীয় পার্টির সভাপতি আবুল হাসনাত (দোয়াত কলম) ও সহ-সভাপতি আলকাছ আলী (ঘোড়া)।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোহাম্মদ খছরুল হক খছরু (চশমা), জামাল হোসেন (তালা), মামুনুর রশীদ মামুন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) রোকসানা বেগম লিমা (ফুটবল), মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী হাসিনা বেগম (হাঁস) ও জাহানারা বেগম (টিয়াপাখি)। প্রাথীরা প্রতীক পেয়েই বৃষ্টিবাদল উপেক্ষা করে বিরামহীন প্রচারণা চালাচ্ছেন। তারা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনার পাশাপাশি নানা প্রতিশ্রুতির কথা বলছেন।
একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান খানের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য শামীম আহমদ ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব। তাই নিজ ঘরের আগুনে পুড়ছে বিয়ানীবাজার আওয়ামী লীগ। এরপরও শেষ পর্যন্ত জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগের কাজ করছে।