পুরনো ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম সরানো যাচ্ছে না কেন?

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একটি দল শনিবার সকালে রাসায়নিকের গুদাম উচ্ছেদ করতে বকশীবাজার এলাকায় গেলে সেখানে তারা বাধার মুখে পড়ে।

বাড়ির মালিক এবং ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভের মুখে তারা এক পর্যায়ে সিটি কর্পোরেশনের অফিসে ফিরে গিয়ে বিষয়টি মেয়রকে অবহিত করেন।

ব্যবসায়ী এবং বাড়ির মালিকদের অভিযোগ হচ্ছে, পুরনো ঢাকা থেকে এই মুহূর্তে সরে যাবার মতো বিকল্প কোনো জায়গা নেই।

২০১০ সালে নিমতলী অগ্নিকাণ্ডে ১২৩ জন নিহতের পর রাসায়নিকের গুদাম সরিয়ে নেবার জন্য সোচ্চার ছিলেন পুরনো ঢাকার বাসিন্দা ক্যামেলিয়া চৌধুরী। বর্তমানে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সাথেও জড়িত তিনি।

বর্তমান অভিযানকে তিনিও সমর্থন করতে পারছেন না।

‘ওঠ ছুড়ি তোর বিয়ে- এ কথা বললে তো হবে না। হুট করে বলবেন, আপনি চলে যান। এটা তো হয় না। যখন একটা কাজ করবেন, সেটা উভয়পক্ষকে দেখতে হবে,’ বলছিলেন ক্যামেলিয়া চৌধুরী।

বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার রাসায়নিক উপকরণ আমদানি করা হয়- এমনটাই বলছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অধ্যাপক সুলতানা রাজিয়া।

এই রাসায়নিকের যে বিশাল বাজার রয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এই ব্যবসার বড় অংশ ঢাকার পুরনো অংশে।

অধ্যাপক সুলতানা রাজিয়া বলেন, রাসায়নিক উপকরণের গুদামের কারণে পুরনো ঢাকায় যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে এটি নিয়ে কোন দ্বিমত নেই।

তিনি বলেন, “জীবন বাঁচানো জরুরী হয়ে গেছে। কিন্তু সুন্দরভাবে করতে হলে সেখানে যারা ব্যবসায়ী আছেন, তাদের সাথে কথাবার্তা বলেই করতে হবে। জোর করে সব জিনিস করা কঠিন হবে।”

শনিবার সকালের দিকে অভিযান একবার বন্ধ হলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের উপস্থিতিতে দুপুরের দিকে আবারও অভিযান শুরু হয়।

যেসব বাড়িতে গোডাউন পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এরপর সেগুলোকে নিরাপদ করার উদ্দেশ্যে রাসায়নিক গুদামের বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হচ্ছে।

মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, যেসব বাড়িতে রাসায়নিক গুদাম এবং মানুষের বসতি একসাথে রয়েছে সেখানে শুধু গুদামগুলোর বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে।

যদি আগুন লাগে তাহলে সেটি যাতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে।

তবে এটি সে অর্থে উচ্ছেদ অভিযান নয় বলে উল্লেখ করেন মেয়র সাঈদ খোকন।

তিনি বলেন, ‘উচ্ছেদ বলতে যা বোঝায়, সেগুলোকে সিল-গালা করে আমরা নিয়ে আসলাম, সেগুলোকে কোথাও ডাম্প করলাম, সেগুলোকে সরিয়ে নেয়া- ঠিক সেরকম নয়। এমনটা নয় যে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সিল-গালা করে দিচ্ছি বা সরিয়ে দিচ্ছি।’

‘ব্যবসায়ীরা পুরনো ঢাকাতে বসেই স্যাম্পল (নমুনা) এবং ক্যাটালগের মাধ্যমে তার ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু গুদামগুলো তাদের পছন্দমতো নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিতে হবে’ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মেয়র সাঈদ খোকন বলছেন, ব্যবসায়ীরা নিজ উদ্যোগে গুদামগুলো সরিয়ে নেবেন সেটাই তারা চাচ্ছেন।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top