যেকোনো মুহূর্তে পাকিস্তান-ভারত পরমাণু যুদ্ধ!

পরিস্থিতি শান্ত হওয়ায় পাকিস্তান শুক্রবার ভারতীয় বিমান বাহিনীর পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে মুক্তি দিয়েছে। কাশ্মির সীমান্তে যুদ্ধাবস্থার মধ্যে ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে ভারতের দুটি বিমান গুলি ভূপাতিত করে পাকিস্তান। এর একটি পড়ে আযাদ কাশ্মিরে, অন্যটি পড়ে ভারত অধিকৃত কাশ্মিরে। যে বিমানটি আযাদ কাশ্মিরের সীমানার মধ্যে ভূপাতিত হয় সেটির পাইলট ছিলেন উইং কমান্ডার অভিনন্দন। বিমান ভূপাতিত হওয়ার পর অভিনন্দন প্যারাসুট নিয়ে নিচে নেমে আসেন। এ সময় তাকে আটক করে স্থানীয় তরুণরা। পরে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সেখানে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পাকিস্তানে তিন দিন আটক থাকার পর শুক্রবার রাত ৯টার দিকে ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে অভিনন্দনকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রায়ই উত্তেজনা তৈরি হয়। দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধও হয়। গোটা নব্বইয়ের দশকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলে। ১৯৯৯ সালে বড় লড়াই হয় কারগিলে। এই দশকে অসংখ্য মানুষ মারা গেছে। আর ১৯৪৭ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত মারা গেছে হাজার হাজার মানুষ। এ সময়ে দুই দেশই উল্লেখযোগ্য সামরিক সক্ষমতা বাড়িয়েছে।

এ বছর ২৩ জানুয়ারি রিপাবলিক ডে প্যারেডে ভারত মার্কিন প্রযুক্তির অত্যাধুনিক এম৭৭৭ কামান প্রদর্শন করে। সামরিক স্থাপনা সেনা সংখ্যা, জেট বিমান, ট্যাংক ও হেলিকপটারের দিক থেকে ভারত পাকিস্তানের থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্স ইন্সটিটিউটের (এসআইপিআরআই) মতে, ভারতের সামরিক বাজেট যেখানে ৬৪ বিলিয়ন ডলার সেখানে পাকিস্তানের ১১ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু এই অঙ্কে পুরো বিষয়টি বোঝাচ্ছে না।

চীন প্রশ্ন
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্যাটেজিক স্টাডিজের মতে, পাকিস্তানের ১০ লাখ সেনার বিপরীতে ভারতের ৩০ লাখ সেনা রয়েছে। কিন্তু নয়াদিল্লি তাদের সব সেনাকে একসাথে পশ্চিম সীমান্তে পাঠাতে পারে না। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চীনের সাথে ভারতের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ও গ্রিফিথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের বর্তমান কর্মকর্তা পিটার লেটন বলেন, ‘ভারতকে কৌশলগত অবস্থান নিয়ে অনেক বেশি ভাবতে হয়। এটি তার বাহিনীকে সংখ্যার দিক থেকে বিভক্ত করে দেয়। চীনের শক্তিশালী অবস্থানের কারণে ভারতকে সবসময় বিশালসংখ্যক সেনাকে এই সীমান্তের জন্য রাখতে হয়।’

১৯৬২ সালে ভারত ও চীন একটি রক্তাক্ত সীমান্ত যুদ্ধ হয়। যার রেশ চলেছে দীর্ঘ দিন। অতি সম্প্রতি ২০১৭ সালে ডোকলাম এলাকায় চীনের সাথে ভারতের ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। ভারতকে তখন বিপুলসংখ্যক সৈন্য ওই অঞ্চলে মোতায়েন করতে হয়। যার রেশ এখনো আছে। ভারতের জন্য সবচেয়ে কঠিন বাস্তবতা হচ্ছে চীন পাকিস্তানের সাথে ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ক রেখে বিভক্ত ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে সক্ষম।

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভিজিটিং ফেলো নিশঙ্কমোতওয়ানি বলেন, ‘চীন ও পাকিস্তানের কৌশলগত মিল চলছে পাঁচ দশক ধরে।’ ওয়াশিংটনের ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনে ডিসেম্বরের আলোচনার তথ্য অনুযায়ী, চীন পাকিস্তানের বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী হিসাবে আরেকটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বেইজিংয়ের সমরাস্ত্র রফতানির ৪০ ভাগ ইসলামাবাদে যাচ্ছে।

পশ্চিমের সাথে ভারতের সম্পর্ক
পাকিস্তান যখন চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলছে, তখন ভারত তার প্রতিরক্ষা বাজেট পাকিস্তানের আকারের ছয়গুণ বাড়িয়েছে। ভারত তার বাহিনীকে দ্রুত আধুনিকায়নের চেষ্টা করছে। ভারতের আরো খরচের সক্ষমতা রয়েছে কিন্তু পাকিস্তানের তা নেই। সামরিক বিশ্লেষক মোতওয়ানি একথা বলেছেন। তিনি আরো বলেন, কাশ্মিরে ভারতের বিমানবাহিনীর সাম্প্রতিক অপারেশনে ইসরাইলের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারত ১৯৮০ সালের সুইডেন নির্মিত অত্যাধুনিক বন্দুক প্রতিস্থাপন করেছে। ভারত আরো সামরিক প্রযুক্তি সংগ্রহের চেষ্টা করছে। তবে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারীদের কাছ থেকে লাভ বেশ কঠিন, কারণ তারা এ রফতানি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ সমর প্রযুক্তি দুর্বল। নয়াদিল্লি ভিত্তিক অবজার্ভার রিসার্স ফাউন্ডেশনের ফেলো মনোজ যোশী বলেছেন, ভারতের সামরিক বাহিনীতে শিল্প ইকোসিস্টেম নেই। এ কারণে তারা যুদ্ধ কৌশলেও অনভিজ্ঞ। স্মার্ট ইঞ্জিনিয়ার থাকতে পারে কিন্তু এর মানে এই নয় যে, তারা ভালো যুদ্ধ কৌশল অবলম্বন করতে পারবে।

আকার বৈষম্য
পাকিস্তানের চেয়ে ভারত আয়তনে চারগুণ বড়। ঘাঁটিগুলোও বেশ ভেতরে। যেখানে পাকিস্তানের বিমান বাহিনীকে অনেক ভেতরে ঢুকে ভারতে আক্রমণ করতে হবে। পাকিস্তানের মিলিটারি বেইজ ছোট এবং সঙ্কীর্ণ। মোতাওয়ানি বলেন, পাকিস্তানের কৌশলগত গভীরতা নেই। পাকিস্তানের অনেক ঘাঁটি ভারত সীমান্তে। যা ভারতীয় বাহিনীর সহজ লক্ষবস্তুতে পরিণত করেছে। কোনো হামলা চালানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের বিমান, যোদ্ধা, ট্যাংকার, অ্যাডব্যাক রয়েছে, যা পাকিস্তানের নেই। লেটন বলেন, অনেক কিছুর ক্ষতি হলেও বড় ধরনের হামলা হলে তা বন্ধ করা কঠিন হবে। আকাশ যুদ্ধ ভারতের সাথে মোকাবেলা করা পাকিস্তানের কঠিন হতে পারে। কিন্তু স্থলভাগ ভারতের জন্য কঠিন।

পরমাণু হুমকি
ভারত ও পাকিস্তান একটি জায়গাতে একই অবস্থানে আছে। সেটি হচ্ছে পারমাণবিক অস্ত্র। দেশ দুটির মধ্যে যখন উত্তেজনা তৈরি হয় তখন এই অস্ত্রের ব্যবহারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পাকিস্তানের ১৪০ থেকে ১৫০টি এবং ভারতের ১৩০ থেকে ১৪০টি পারমাণবিক ওভারহেড রয়েছে। লেটন বলেন, পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের জন্য পাকিস্তানের কৌশলগত নীতি রয়েছে। কিন্তু পারমাণবিক সরঞ্জামের একটি বাস্তব বিপদ রয়েছে।

মোতওয়ানি বলেন, পাকিস্তান চায় ভারতের সাথে একটি পারমাণবিক হুমকি সবসময় থাকুক। পাকিস্তান উগ্রবাদী গ্রুপগুলোকে ব্যবহার করতে পারে। সেই সুযোগও তাদের রয়েছে। এটি ভারতের সাথে একটি কৌশলগত ফাঁক। এ রকম হলে ভারত সবসময় প্রতিশোধের চিন্তা ভাবনা করে। তাই দুই দেশের মধ্যে একটি পারমাণবিক যুদ্ধের ভয়াবহ হুমকি সবসময়ই সেখানে থেকেই যাচ্ছে। সূত্র : সিএনএন

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top