বিতর্কিত এবং একতরফা নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং মানুষের মধ্যে চরম অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেছেন, ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর একটি বির্তকিত নির্বাচন হয়েছে। আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থাটা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। শনিবার সকালে ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত আঞ্চলিক পরিকল্পনা সভা শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
সুজন সম্পাদক বলেন, আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটা অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে। এমন প্রেক্ষাপটে ঢাকায় সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন তারই প্রতিফলন। মানুষের মধ্যে এমন ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে তারা ভোট কেন্দ্রে গেলেও ভোট দিতে পারবে না কিংবা ভোট দিলেও কিছু আসবে, যাবে না। এছাড়াও একটা বড় দল নির্বাচন বর্জন করেছে। যার ফলে নির্বাচনী ফলাফল কী হবে এটা অনেকটাই পূর্বনির্ধারিত হয়ে গিয়েছে। যার জন্য মানুষের মধ্যে অনাগ্রহ ও ব্যাপক অনাস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘বিরোধীদল ছাড়া গণতন্ত্র হয় না। একটা শক্তিশালী বিরোধীদল সংসদে থাকতে হয়। এখন আমাদের অভিনব একটা বিরোধীদল আছে। সংসদের বাইরেও শক্তিশালী একটা বিরোধীদল থাকতে হয়। বিরোধীদলের উদ্দেশ্যই হলো যারা ক্ষমতায় থাকে, তারা যেন কোনো রকম অন্যায়, বাড়াবাড়িতে লিপ্ত না হয়। মানুষের অধিকার যেন খর্ব না হয়। বিরোধীদলের উদ্দেশ্য সরকারকে সঠিক পথে রাখা, সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।’
সুজন সম্পাদক বলেন, ২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচনের ফলে যে অবস্থা হয়েছে- কোনো বিরোধীদল সংসদে ছিল না। সংসদের বাইরেও বিরোধীদল প্রবল চাপের মধ্যে ছিল। এতে আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধু তাই নয়, আমাদের ক্ষমতাশীল দলটিও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা অনেক ক্ষেত্রে বেসামাল হয়েছে। এটা আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও ভবিষ্যতের জন্য কোনোভাবেই ইতিবাচক নয়। আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুসংহত ও কার্যকর এবং ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং একই সাথে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে চলমান রাখার জন্য সকলেরই পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুজন সেই ভূমিকা পালন করা চেষ্টা করছে।
তিনি আরো বলেন, গণতন্ত্রের মুল কথা হচ্ছে নজরদারিত্ব। আমাদের সংসদ, নির্বাহী ও বিচার বিভাগ একে অপরের নজরদারি করার কথা কিন্তু নজরদারিত্বের সেই কাঠামো ভেঙে পড়েছে। একই সাথে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, তথ্য কমিশন, মানবাধিকার কমিশনের নজরদারিত্ব করার কথা। নাগরিক সমাজের নজরদারিত্ব সবার উপরে। সুজন নাগরিকদের জাগিয়ে তোলা, তাদেরকে অধিকার সচেতন করা, তাদের দায়বদ্ধতা ও দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি।
সুজন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিটির আহবায়ক ইয়াজদানী কোরায়শীর সভাপতিত্বে বক্তব্য কেন্দ্রীয় সুজন সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার, ময়মনসিংহ মহানগর কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট শিব্বির আহমেদ লিটন, শেরপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, কিশোরগঞ্জ জেলা সহ-সভাপতি ফিরোজ উদ্দিন ভূইয়া প্রমুখ। সভায় ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।