এবার ভিডিও আতঙ্কে ভারত

পাকিস্তানের হাতে আটক হওয়া পাইলট অভিনন্দন বর্তমান মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু পাকিস্তানে তাকে নিয়ে যে সব ভিডিও করা হয়েছে, তা নিয়ে আতঙ্কে আছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। ভিডিওতে আসলে কী বলেছিলেন অভিনন্দন? তার মুখ থেকে কী বের করে নেয়া হয়েছে?

কাশ্মিরের পুলওয়ামায় হামলার পর ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে এর জন্য দায়ী করে যে হুঙ্কার দেয়া হচ্ছিল, তাতে বিশ্লেষকরা ধারণা করেছিলেন, যুদ্ধ এবার লেগেই যাবে। বিজেপি বিধায়ক রাজা সিং প্রকাশ্যে দাবি তুলেছিলেন, পুরো পাকিস্তানকেই পুড়িয়ে দেয়া হোক।

পুলওয়ামার ঘটনার ১২ দিন পর পাকিস্তানে হামলা চালায় ভারত। নয়াদিল্লি সেই অভিযানে যে সাফল্যের দাবি করেছে, তার ছিটেফোটাও বাস্তবে দেখা যায়নি। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোও ভারতের দাবির সত্যতা খুঁজে পায়নি।

পরদিন বুধবার পাকিস্তানের বিমানবাহিনী হামলা চালায় ভারতের ভেতরে গিয়ে। পাকিস্তান এ ক্ষেত্রে সামান্য বোমা বর্ষণ করে নিজেদের সক্ষমতার বিষয়টি প্রকাশ করে বলে দাবি করে। কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকেই জানানো হয় অনেক বেশি হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। পরে এর জবাব দিতে গিয়ে পাকিস্তানে বিধ্বস্ত হয় দুটি মিগ ২১। আটক হন এক ভারতীয় পাইলট।

জনতার হাতে ধরা পড়েন তিনি। পরে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। তারা তার চিকিৎসা দেন। তার সাক্ষাতকার নেন। বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী তার মুক্তি ঘোষণা করেন।

ভারত প্রথমত কোনো পাইলট আটক হওয়ার খবর অস্বীকার করে। কিন্তু তার ইন্টারনেটে তার ভিডিও প্রচারিত হওয়ার পর ভারত ইসলামাবাদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাকে মুক্তি দেয়া হয়।

ভারত দাবি করতে থাকে, তাদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার কারণেই আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি হয়। আর সে কারণেই পাকিস্তান অভিনন্দনকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। পাইলটকে হাতে পাওয়ার পর অভিনন্দনকে নিয়ে যে সব ভিডিও প্রচার করা হয়, তা সরিয়ে ফেলতে ইউটিউবের কাছে অনুরোধ জানায় ভারত।

কিন্তু তাতেও স্বস্তিতে নেই নয়াদিল্লি। শুক্রবার ওয়াগা সীমান্ত দিয়ে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার আগে উইং কমান্ডার অভিনন্দনকে দিয়ে আরেকটি ভিডিও করা হয়।

ওই ভিডিওতে অভিনন্দনকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘আমার নাম উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। আমি ভারতের যুদ্ধবিমানের পাইলট। আমি টার্গেট খোঁজার চেষ্টা করছিলাম। সে সময় পাকিস্তানি বিমানবাহিনী আমার বিমানকে মাটিতে নামায়। আমাকে বিমান ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে হয়। কারণ, বিমান ভেঙে গিয়েছিল। পরে প্যারাসুুট খুলে মাটিতে নামার পরে আমার বাঁচার একমাত্র উপায় ছিল আমার পিস্তল।

আমি পালানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু অনেক লোক ছিল। তাঁদের জোশ ছিল একেবারে তুঙ্গে। আমাকে তাই পিস্তল ফেলে দিতে হয়।’ এরপর অভিনন্দন বলেন, ‘এই সময় পাকিস্তানের দুই সেনা সদস্য একে আমাকে উদ্ধার করেন। তাঁরা আমাকে ইউনিটে নিয়ে যান। ফার্স্ট-এইড দেয়া হয়। তারপরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমার শারীরিক পরীক্ষা হয়। আমাকে ওষুধপত্র দেওয়া হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী পেশাদার সেনাবাহিনী। আই সি পিস ইন ইট। আমি পাকিস্তানি সেনার সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। আমি অভিভূত। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ছোট জিনিসকে বাড়িয়ে-চড়িয়ে বলে। ছোট বিষয়ে আগুন লাগিয়ে, মরিচ মাখিয়ে ভুল পথে চালিত করে।’

অভিনন্দনের এই শেষ ভিডিও নিয়ে আরো বেশি অভিযোগ ভারতের। তারা অভিযোগ করছে, ওই ভিডিওতে অন্তত ১৬টি ‘কাট’ রয়েছে। ফলে অভিনন্দন পাকিস্তানকে ধন্যবাদ জানিয়ে যে বিবৃতি দিয়েছেন, তা যে ‘এডিট’ করা হয়েছে, তা স্পষ্ট।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top