সরকারের পরাজয় দেখছে বিএনপি

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর থেকে ভোট নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে। বিএনপি মনে করছে, ভোটারদের মধ্যে সৃষ্ট এই অনীহা খুবই যথার্থ। এর মূল কারণ একাদশ সংসদ নির্বাচনে যেভাবে অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়েছে, তাতে মানুষ বুঝে গেছে, সে যাকেই ভোট দিক না কেন, পাস করবে সরকারি দলের প্রার্থীই।

সদ্যসমাপ্ত ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে মানুষের উপস্থিতি ছিল খুবই হতাশাব্যঞ্জক। পরিস্থিতি এমন ছিল যে নির্বাচন কমিশনও বলতে বাধ্য হয়েছে, ‘ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসা তাদের কাজ নয়।’ সরকারি দলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত বিএনপি এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর এটিই ছিল প্রথম নির্বাচন।

বিএনপি নির্বাচন বয়কট করায় নগরীর এই ভোট ছিল পানসে। এক-দুই দিন আগেও অনেকেই জানতেন না ভোট হতে যাচ্ছে। অথচ একসময় বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনপ্রিয় ছিল। খুবই উৎসবমুখর পরিবেশে তারা ভোট দিতো। তারা ‘একদিনের রাজা’ ধারণায় বিশ্বাসী ছিল। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোয় ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনার জন্য নানারকম প্রলোভন ও আইনকানুন তৈরি করা হলেও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। উপমহাদেশের মানুষ ভোট দেয়ার জন্য রীতিমতো উন্মাদ হয়ে থাকে; কিন্তু৩০ ডিসেম্বরের পর যে নির্বাচনের মওসুম চলছে তাতে মানুষের কোনো আগ্রহই নেই।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং উত্তর ও দক্ষিণ সিটির ৩৬টি নতুন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশ না নিলেও ভোটে তীক্ষè নজর ছিল বিএনপির। সব ধরনের নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেয়ার পর এ নির্বাচনে বেশির ভাগ ভোটারের অনুপস্থিতিকে বড় অর্জন বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। তারা বলছেন, জনগণ তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদ্য অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে কোন কেন্দ্রে কত শতাংশ ভোট পড়েছে, কোথায় কোথায় অনিয়ম হয়েছে এসব বিষয়গুলো বিএনপি মনিটর করেছে। কেন ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যায়নি, গণমাধ্যমে সাধারণ ভোটারদের সব বক্তব্যের রেকর্ড রাখা হয়েছে। দলের উত্তর ও দক্ষিণ শাখার কর্মীদের প্রতি ভোটের অনিয়ম এবং ভোটার উপস্থিতির চিত্র কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশনাও ছিল। এর অংশ হিসেবে ভোট চলাকালীন বিএনপি নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গণমাধ্যমের খবর এবং নিজেদের কাছে থাকা তথ্য সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, সিটি নির্বাচনে অংশ না নিয়েও বিএনপির এই অর্থে বিজয় হয়েছে যে, সাধারণ জনগণ এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো ধরনের কোনো স্তরের ভোটে আর আগ্রহী না, সেটা প্রমাণিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রতি একান্ত নিবেদিতরাই শুধু অতি উৎসাহী হয়ে ভোটকেন্দ্রে গেছে। এর বাইরে আর কেউ ভোটকেন্দ্রে যায়নি।

উত্তরে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাফিনই বলেছেন, তিনি কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঘুরে ভোটারদের দেখা পাননি। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারও বলেছেন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি। তিনি বলেন, ভোটের ওপর থেকে মানুষের আস্থা উঠে গেছে। বিএনপি মনে করে এটাই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পরাজয়। সেই কথাটি এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নুতন করে প্রমাণিত হলো।

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ‘ভোট ডাাকতি’র বিরুদ্ধে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা ও গণশুনানি করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এখন তারা নতুন কর্মসূচির কথা ভাবছে । ফ্রন্টের একাধিক নেতা বলেছেন, এসব কর্মসূচিতে ভোটবঞ্চিত জনগণকে সম্পৃক্ত করে জোরালোভাবে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি তুলে ধরা হবে।
ঐক্যফ্রন্টের গত ২২ ফেব্রুয়ারির গণশুনানিতে প্রার্থীসহ সবার বক্তব্য এবং নির্যাতিত নারীদের বর্ণনা একত্র করে লেখা হচ্ছে। ২৯ ও ৩০ তারিখে ‘ভোট ডাকাতির’ তথ্য বই আকারে শিগগিরই প্রকাশ করে সারা দেশে প্রচার করা হবে। জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে গণশুনানি বা নাগরিক সংলাপের মতো কর্মসূচি গ্রহণ করা হতে পারে।

এ দিকে উপজেলা নির্বাচনে কোনো প্রার্থী যাতে অংশ না নেয়, সে বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় ২০ জনের অধিক প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। যারা দলের সিদ্ধান্ত মানছেন না, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top