পাকিস্তানে মুক্তির আগে নতুন করে বক্তব্য দিয়েছেন ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন। তাতে তিনি কার্যত পাকিস্তানের প্রশংসাই করেছেন। শুক্রবার ভারতের হাতে তুলে দেয় পাকিস্তান।
বন্দি হওয়ার পরও অভিনন্দন পাকিস্তান ও পাকিস্তান বাহিনীর প্রশংসা করে বক্তব্য দিয়েছিলেন। তবে ভারতীয় মিডিয়া তা পছন্দ করেনি। এবারো তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা পছন্দ করছে না ভারতীয় মিডিয়া। মজার ব্যাপার হলো, ভারতে ফিরেও কিন্তু তিনি তার আগের বক্তব্য থেকে সরে আসেননি।
তিনি বলেন, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ছোট জিনিসকে বাড়িয়ে-চড়িয়ে বলে। ছোট বিষয়ে আগুন লাগিয়ে, লঙ্কা মাখিয়ে ভুল পথে চালিত করে। ভিডিওতে অভিনন্দন নিজের পরিচয় দেয়ার পর বলেন, টার্গেট খুঁজতে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু তার যুদ্ধবিমানটি গুলি করে নামানো হয়। যুদ্ধবিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর তিনি প্যারাস্যুটে করে মাটিতে অবতরণ করেন। এরপর স্থানীয় অনেক পাকিস্তানি তাকে ঘিরে ধরে। এ সময় তার কাছে আত্মরক্ষার জন্য কেবল একটি পিস্তল ছিল। তিনি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন, তাকে স্থানীয়রা ধাওয়া করে। এ সময় পাকিস্তানি আর্মির দুই সদস্য এসে তাকে উদ্ধার করেন। এরপর পাকিস্তানি সেনা সদস্যরা তাকে তাদের ইউনিটে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়।
মুক্তির আগে ভিডিওবার্তায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর পাইলট অভিনন্দন বলেন, ‘আমার নাম উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। আমি ভারতের যুদ্ধবিমানের পাইলট। আমি টার্গেট খোঁজার চেষ্টা করছিলাম। সে সময় পাকিস্তানি বিমানবাহিনী আমার বিমানকে মাটিতে নামায়। আমাকে বিমান ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে হয়। কারণ, বিমান ভেঙে গিয়েছিল। আমার প্যারাস্যুট খোলে। নামার পরে আমার বাঁচার একমাত্র উপায় ছিল আমার পিস্তল। আমি পালানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু অনেক লোক ছিল। তাদের জোশ একেবারে তুঙ্গে ছিল। আমাকে তাই পিস্তল ফেলে দিতে হয়।’’
এরপর অভিনন্দন বলেন, ‘‘এই সময় পাকিস্তানের দুই জওয়ান আসেন। দুই জওয়ান আমাকে বাঁচান। এক ক্যাপ্টেন ছিলেন। তারা কিছু হতে দেননি। তারা আমাকে ইউনিটে নিয়ে যান। ফার্স্ট-এড দেয়া হয়। তারপরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমার শারীরিক পরীক্ষা হয়।
তিনি বলেন, আমাকে ওষুধপত্র দেয়া হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী পেশাদার সেনাবাহিনী। আই সি পিস ইন ইট। আমি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। আমি অভিভূত। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ছোট জিনিসকে বাড়িয়ে-চড়িয়ে বলে। ছোট বিষয়ে আগুন লাগিয়ে, লঙ্কা মাখিয়ে ভুল পথে চালিত করে।’’
এরপর তিনি ভারতে ফিরে গিয়ে নতুন করে বক্তব্য দেন। ৬০ ঘন্টা পাকিস্তানে থাকার পর নেভি ব্লু ব্লেজার্স, সাদা শার্ট, এবং ধুসর রংয়ের ট্রাউজার্স কালো চোখে মুখে হাসি নিয়ে তিনি আট্টারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত পেরোনো পর্যন্ত তাকে এসকর্ট করে নিয়ে যান পাক রেঞ্জার্সরা। তাকে স্বাগত জানালেন ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।
এক কর্মকর্তা সংবাদিকদের জানিয়েছেন, ভারতে ফিরে তিনি প্রথম বলেন, “এটা ভালো যে, আমার দেশে ফিরতে পেরেছি”।
কোনো প্রশ্ন না নিয়ে একটি ছোটো বিবৃতিতে ভাইস এয়ার মার্শাল আরজিকে কাপুর বলেন, “তার পূর্ণাঙ্গ শারিরীক পরীক্ষা করা হবে। তাকে অনেক ধকলের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে”।
পাকিস্তানে রেকর্ড করা ভিডিওটি প্রকাশের কিছু সময় পরই শুক্রবার রাত সোয়া ৯টার দিকে অভিনন্দনকে ‘ওয়াঘা’ সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে পাকিস্তান সরকার। তবে তাকে বিকেলে হস্তান্তর করার কথা থাকলেও এ প্রক্রিয়া দুই দফায় পেছানো হয়। প্রথমে বলা হয় সাড়ে ৭টার দিকে হস্তান্তর করা হবে। শেষে বলা হয় তাকে সাড়ে ৯টার দিকে ভারতের কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার পর তাকে সোয়া ৯টার দিকে হস্তান্তর করা হয়। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ তাকে স্বাগত জানায়। তারপর তাকে বিমানবাহিনী এবং সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। এসময় অভিনন্দন বলেন, ‘দেশে ফেরত এসে ভালো লাগছে।’
ভারতের মাটিতে পা রাখার পরই অভিনন্দনের উদ্দেশে করে টুইটার বার্তায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “ঘরে ফেরায় অভিনন্দনকে স্বাগত! আপনার দৃষ্টান্তস্বরূপ বীরত্বে দেশ গর্বিত। আমাদের সশ্বস্ত্র বাহিনী ১৩০ কোটি ভারতবাসীর গর্ব। বন্দেমাতরম”!
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটে লিখেছেন, ‘স্বাগত অভিনন্দন বর্তমান’।
স্বদেশের মাটিতে অভিনন্দনকে স্বাগত জানাতে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের অংশে উপস্থিত ছিলেন তার বাবা এয়ার মার্শাল (অব.) এস বর্তমান ও মা ড. শোভা বর্তমান। এছাড়াও সরকারি শীর্ষ কর্মকর্তাসহ বিপুলসংখ্যক জনতা উপস্থিত ছিলেন।