পলান সরকার আর নেই

একুশে পদকজয়ী পলান সরকার (হারেজউদ্দিন) এ পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। নিজ বাড়িতে আজ শুক্রবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। বার্ধক্যজনিত কারণে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর।

তার মৃত্যুতে গভীর শোক গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

গ্রামের পথে ঘুরে নিজের টাকায় কেনা বই পাঠকের বাড়ি পৌঁছে দিতেন পলান সরকার। মানুষের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে প্রায় ৩০ বছর তিনি এ কর্মকা- চালিয়ে যান। বইপড়া বিষয়ে অন্যরকম এক আন্দোলন গড়ে তোলায় ২০১১ সালে পলান সরকারকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।

দেশব্যাপী পলান সরকার নামে পরিচিতি লাভ করা একুশে পদকজয়ী এ ব্যক্তির আসল নাম হারেজ উদ্দিন। তিনি ১৯২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় তার বাবা মারা যান। আর্থিক টানাপড়েনে ষষ্ঠ শ্রেণিতেই পড়াশোনার ইতি পড়ে তার।

রাজশাহীর ২০টি গ্রামে অভিনব শিক্ষা আন্দোলন গড়ে তুলে তিনি দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। নিজের টাকায় বই কিনে পলান সরকার পড়তে দিতেন পিছিয়ে পড়া গ্রামের মানুষকে। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে কাঁধে ঝোলাভর্তি বই নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। মাইলের পর মাইল হেঁটে একেক দিন একেক গ্রামে যেতেন। আগের সপ্তাহের বই ফেরত নিয়ে নতুন বই পড়তে দিতেন গ্রামবাসীদের। উপাধি পেয়ে যান ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ নামে।

বইয়ের প্রতি তার এ ভালোবাসার জন্য দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোতে তাকে নিয়ে অসংখ্য প্রতিবেদন ছাপা হয়। এর আগে তার মহৎকর্ম প্রচারিত হয় জনপ্রিয় টিভি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’সহ বিভিন্ন মাধ্যমে। তাকে নিয়ে ‘সায়াহ্নে সূর্যোদয়’ নামে একটি নাটকও তৈরি হয়। তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি নাটক। নাটকটির নাম ‘সায়াহ্নে সূর্যোদয়’।
মৃত্যুকালে তিনি ছয় ছেলে, তিন মেয়ে ও নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান।

পলান সরকারের জানাজা শনিবার (২ মার্চ) সকাল ১০টায় বঘার বাউসা হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর স্থানীয় গোরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top