জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, এদেশটা আমাদের সকলের। এটা আমাদের দখলে নেবো, গণতন্ত্র প্রক্রিয়ার মধ্যে নেবো। সংবিধানের মধ্যে স্থাপন করবো। ইনশাল্লাহ যে ঐক্যের ভিত্তিতে দেশটা স্বাধীন হয়েছিলো সেই ঐক্যের ভিত্তিতে আমরা দেশ শাসন করবো। জনগনের মালিকানা অবশ্যই আসবে।
শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির উদ্যোগে ২ মার্চ স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলন দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ড. কামাল বলেন, যখন আমি দেখি, মানুষ কিছুটা অসহায় বোধ করছে। কেনো বোধ করছে ? সরকার তাদেরকে মালিক হিসেবে যেটা শ্রদ্ধা করার কথা, তাদের জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার কথা-এটা করছে না। জনগন যেটা বলছে তার উল্টোটা তারা করছে। অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন ছিলো জনগনের দাবি। ২৯ তারিখ(ডিসেম্বর) রাতে কী হলো? সেটা কী অবাধ ছিলো? নিরপেক্ষ ছিলো? নির্বাচন ছিলো? কী ছিলো সেটা? আমি তো খুঁজেই পাচ্ছি যে কী হলো সেদিন? পরের দিন বলা হলো যে, এবার ধন্যবাদ ধন্যবাদ আমরা তো পাঁচ বছর হয়ে গেলো, আরো পাঁচ বছর থাকবো। আমি বলি যে, ভুল কথা বলে, অসত্যের ওপর ভর করে ১৬ কোটি মানুষের দেশ পরিচালনা করা খুবই কঠিন। এটা উচিত না, এটা করা যায় না।
সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা বহু মতে বিভক্ত হতে পারি। কিন্তু মৌলিক বিষয়ে আমি দাবি করি যে- এব্যাপারে আমরা ঐক্যমতে আছি। জনগন বাংলাদেশের ক্ষমতার মালিক- এটা নিয়ে কোনো বির্তক আছে কী? নাই। এদেশের সৌন্দর্য হলো এটাই- ১৬ কোটি মানুষের মৌলিক বিষয় নিয়ে কোনো বির্তক নাই। ভুল কথা বলে অসত্যের ওপর ভর করে দেশ পরিচালনা করা যাবে না।
তিনি বলেন, এখানে কেউ রাজতন্ত্র চায় না। জনগনের মধ্যে যাচাই করে দেখেন এখানে কাউকে রাজা-রানী ঘোষণা করতে চায়? যিনি নিজে রাজা-রানী হতে চান এটা তারা করতে পারেন কিন্তু তারা প্রকাশ্যে বলবেন না। কেনো বলবেন না কারণ জনগন এটা একদমই গ্রহনযোগ্য না। বাংলাদেশের একটা বৈশিষ্ট আছে- এখানে কোনোভাবে এদেশের জনগন রাজা-রানীকে মানার জাতি না।
বর্তমান সরকারের প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, এই সরকার একটা সংকটের মধ্যেই আছে। কিন্তু তারা বিনা নির্বাচনে ক্ষমতা দাবি করে সরকার চালাতে হচ্ছে এবং নানা রকমের প্রতিশ্রুতি দিতে হচ্ছে, যেটা পালন করা খুবই কঠিন হবে। যে দেশের আমরা ১৬/১৭ কোটি মানুষ আছি যেখানে ১০ কোটি মানুষ মালিকের ভুমিকায় সেখানে আমাদের অসহায় বোধ করার কোনো কারণ নেই। আমি ইতিবাচকভাবে কথা বলতে চাই- যারা মনে করে এই বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে তারা ভাগ করবে যে আমরা মালিক হয়ে গেছি। তারা ভুল করছে।
১৯৭১ সালের ২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় তৎকালীন ডাকসু’র ভিপি আসম আবদুর রব স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলন করেন।
দিনটির স্মৃতিচারণ করে জেএসডি সভাপতি রব বলেন, একাত্তর সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিলো। তার ১০ বছর পূর্বে একটা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য নিরপেক্ষ একটা বিপ্লবী স্বাধীন বাংলা পরিষদ কে গঠন করেছিলো? ২রা মার্চ পতাকা আমি তুলেছি, ৩রা মার্চে স্বাধীনতার ইশতেহার শাহজাহান সিরাজ পাঠ করেছেন, ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বক্তৃতা দিয়েছেন, ২৫ মার্চ রাত থেকে শুরু করে ৯ মাসে আমাদের লক্ষ লক্ষ বাঙালি সৈনিকরা, ছাত্র-যুবক-শ্রমিক-কৃষক-জনতা প্রাণ দিয়েছেন। এর মূল পরিকল্পনাকারীটা কে? সেই ব্যক্তিটার নাম আমরা অনেকে জানি না। তার নাম হলো সিরাজুল আলম খান।
তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ পথে এই সরকার যাবে না। সোজা আঙ্গুলে ঘি ওঠে না, স্বৈরাচার-ফ্যাসিবাদ যায় না, তারা লজ্জ্বা পায় না। তাকে বিদায় করতে হবে। জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে যেভাবে পাকিস্তানি হানাদারদের বিদায় করেছে আজকেও এই স্বৈরাচার-ফ্যাসিবাদ সিভিল ডিক্টেটরকে সেইভাবেই বিদায় করতে হবে। এবার সরকার আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, তাদেরকে থাপ্পড় মেরে হবে না, চড় মেরে হবে না। তাদেরকে ওখান থেকে সরাতে হবে।
এরা চোর, এরা বাটপার, এরা ডাকাত, এরা খুনী। এদেরকে আপোষে হবে না, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হবে কিনা আমি জানি না। সকলে ঐক্যবদ্ধ করে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হবে-এটাই হোক ১ মার্চের শপথ।
নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান বলেন, সমগ্র রাষ্ট্র যন্ত্র জনগনের ভোটের অধিকার লুট করে নিয়ে গেছে ২৯ তারিখ রাতেই। মানুষ কী করেছে? তারা ঘৃনায় ওদের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, ওদের দিকে এখন তাঁকাতেও চায় না। তিনি বলেন, যদি পুলিশের অত্যাচার না থাকে তাহলে মানুষকে বাধ্য করতে পারবে না। মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে গতকালকে তথাকথিত ঢাকা উত্তরের মেয়র নির্বাচনে।
জেএসডির সিনিয়র সহসভাপতি এম এ গোফরানের সভাপতিত্বে ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় গণস্বাস্থ্যের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মন্টু, বিএনপির আবদুস সালাম, জেএসডির আবদুল মালেক রতন, সিরাজ মিয়া, মোশাররফ হোসেন, বিকল্পধারার শাহ আহমেদ বাদল প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। আলোচনা সভায় রবের স্ত্রী তানিয়া রবসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা ছিলেন।