নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলা সদর থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত খিদিরপুর ইউনিয়নের রামপুর গ্রাম। অত্র গ্রামে প্রায় শতাধিক বছর ধরে বানরের বসবাস। দিন দিন এই এলাকার বন জঙ্গল ক্ষীণ হয়ে আসার কারণে এদের প্রাকৃতিক খাবার উৎস কমে আসছে। বাধ্য হয়ে তাই বানরগুলো ফসলের জামি আর বসত বাড়িতে হানা দিচ্ছে।
শুধু বাড়ি ঘর নয় পথচারীদের হাত থেকেও অনেক সময় খাবার ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে। দিনে দিনে এই বানরগুলোর অত্যাচারে অতিষ্ঠ গ্রামবাসী দ্রুত সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোগে বানরের বসবাস উপযোগী অভয়ারণ্য তৈরি করে বানর রক্ষার দাবি জানিয়েছেন।
গ্রামবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মনোহরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী রামপুর গ্রামের বেশির ভাগ অংশই বনজঙ্গলে ঘেরা। যুগ যুগ ধরে এখানকার ঝোঁপ জঙ্গলে বানরের বসবাস।
অত্র এলাকায় বানরে আবির্ভাব নিয়ে লোক মুখে শোনা যায়, প্রায় দেড়’শ বছর পূর্বে রামপুর ভূমি অফিসের জনৈক এক তহশিলদার শখের বসে একটি পুরুষ বানর পুষতেন। কয়েক বছর পর তিনি অন্যত্র বদলি হয়ে গেলে তার পোষা বানরটি কর্মস্থলে রেখে যান। পরবর্তীতে অপর এক তহশিলদার এসে একটি স্ত্রী বানর এনে লালন পালন করেন। পরে পুরুষ ও স্ত্রী বানর দুটি গহীন জঙ্গলে ছেড়ে দেয়া হয়। সেই থেকে পর্যাক্রমে বানরের বংশ বৃদ্ধি পেয়ে রামপুর গ্রামে আজ বানরের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। তবে দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধি হওয়ার ফলে এলাকাবসী তাদের প্রয়োজনে বন জঙ্গল উজাড় করা শুরু করেছে। ফলে চতুর এই প্রাণীদের এখানে বসবাস করাই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাবারের অভাবে অনেকটা বাধ্য হয়ে তাই বানরগুলো হানা দিচ্ছে এখানকার ফসলের জামি এবং মানুষের বসত বাড়িতে।
রামপুর গ্রামের বাসিন্দা জিতেন্দ্র কুমার বলেন, এই গ্রামে প্রায় ১৫-২০ টি বানরের দল আছে। প্রদিটি দলেই প্রায় দুই শতাধিক বানর রয়েছে। খাবারের অভাবে বানরগুলো দলবদ্ধ ভাবে বিভিন্ন জায়গায় আক্রমন করে থাকে। না পেরে আমরা এদের অত্যাচার সহ্য করছি।
কৃষক মন্টু সাহা বলেন, আমাদের রামপুর গ্রামের ৬০ শতাংশ মানুষ পান চাষ করে। বানরগুলো প্রতিনিয়ত পানের বরজে আক্রমন করে বরজের অনেক ক্ষতি করে। তাদের আক্রমন থেকে বরজ রক্ষা করার জন্য সবসময় বরজ পাহারা দিতে হয়। এমনকি এদের অত্যাচারে গাছের ফল থেকে শুরু করে ঘরের ভেতর খাবার রাখা যায়না। সুযোগ পেলেই ঘরের ভিতর প্রবেশ করে খাবার নিয়ে যায়।
বানরগুলো দেখার জন্য প্রতিদিন বিভিন্নস্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। সাথে নিয়ে আসেন মুড়ি, পাউরুটি, কলাসহ বিভিন্ন ধরণের শুকনো খাবার। তাই সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে অত্র এলাকাকে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করেন এই গ্রামের বাসিন্দা সমর দাস।
খিদিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জামিল বলেন, রামপুর গ্রামের বানর এই এলাকার ঐতিহ্য দীর্ঘ দিনের। বানরগুলোর জন্য নিরাপদ বসবাস এবং খাবারের ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবী। সরকারি বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে এলে এই এলাকাকে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।