ইমরান-প্রশস্তিতে ভরে উঠছে টুইটার, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের সবগুলো মাধ্যম। কদিন আগেই যে ইমরানকে নিয়ে বলা হচ্ছিল, দেশ চালানোর মতো রাজনীতি, কূটনীতি কি তার জানা আছে? সেখানেই এখন বলা হচ্ছে, সব দিক দিয়েই প্রথম ইমরান খান। এমনকি তিনি হারিয়ে দিয়েছেন ভারতের অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ নরেন্দ্র মোদিকেও।
রাজনীতিকে অনেকে দাবা খেলার সাথে তুলনা করেন। সে খেলাতে যেমন অনেক সময় এক চালেই কিস্তিমাত করে ফেলা যায়, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী অভিজ্ঞতায় নতুন হলেও খেললেন ঠিক একইভাবে। তার মেয়াদে ভারতের সাথে সৃষ্ট প্রথম দ্বন্দ্বে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যাতে রাতারাতি ভারতের জনগণের চোখেই হিরো হয়ে গেছেন ইমরান খান। অথচ একদিন আগেই পুরো পাকিস্তানকেই পুড়িয়ে দেয়ার দাবি শোনা গিয়েছিল তাদের কাছ থেকে।
গত বুধবার পাকিস্তানে হামলা চালাতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমানের পাইলট অভিনন্দন বর্তমান। দুই দেশের মধ্যে এখন যে সম্পর্ক বিরাজ করছে তাতে ভারত কোনোভাবেই ধারণা করতে পারেনি যে, অভিনন্দনকে মুক্তি দেয়া হবে। তাই মুক্তির দাবি জানানোর পাশাপাশি তারা আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু ইমরান খান একটি বার্তা দিয়ে সেই প্রস্তুতিতে পানি ঢেলে দেন। তিনি জানান, অভিনন্দনকে মুক্তি দেয়া হবে।
ভারত এ ঘোষণার আগ পর্যন্ত অভিনন্দনের মুক্তির ব্যাপারে বিন্দুমাত্র অগ্রগতি অর্জন না করলেও ইমরান খানের এ ঘোষণার সাথে সাথে তারা জানাতে থাকেন, এটি তাদের কূটনৈতিক বিজয়।
তবে এতে ভোলেননি ভারতের সাধারণ মানুষ, ভোলেননি দেশটির বিশিষ্টজনেরা। সে কারণেই তারা অভিনন্দনের মুক্তিতে টুইটারে মোদি নয়, প্রশংসা করছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের। ভারতের পক্ষ থেকে এমন উচ্ছ্বসিত প্রশংসা অনেকদিন কোনো পাকিস্তানির জন্য করা হয়নি। টুইটার ভরে উঠছে ইমরান বন্দনায়। সেগুলোতে বলা হচ্ছে ইমরানের এমন সিদ্ধান্ত সত্যিই দেশ দুইটির জন্য ভালো। আবার কেউ লিখেছেন, যুদ্ধ কারো জন্যই মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। ইমরান খানের এমন পদক্ষেপ প্রশংসার দাবিদার।
ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং ইমরানের ভুয়সী প্রশংসা করে তার এমন পদক্ষেপকে বন্ধুত্বের পথের একটি ধাপ হিসেবে উল্লেখ করেন।
ভারতের সাবেক ক্রিকেট তারকা ও রাজনীতিবিদ নভোজিৎ সিং সিধু এমন পদক্ষেপকে মহানুভবতা বলে অভিহিত করে বলেন, ‘প্রত্যেক মহৎ কাজই তার নিজের জন্যই একটি রাস্তা খুলে দেয়। ইমরান খান, তোমার শুভেচ্ছার নির্দশন (পাইলটের মুক্তি) কোটি জনতার জন্য ‘এক কাপ জয়’, একটি জাতির আনন্দ। আমি তার মা-বাবার জন্য আনন্দিত এবং তোমার (ইমরান খান) প্রতি ভালবাসা।’।
ভারতের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ও সাবেক কর্নেল আজাজ শুক্লা পাকিস্তানের এই পদক্ষেপে দেশটিরই বিজয় হয়েছে বলে প্রশংসা করেছেন।
ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ভারতীয় পাইলটের মুক্তির ঘোষণায় ‘প্রকৃত রাষ্ট্রনায়ক’ হিসেবে বর্ণনা করে টুইটারে লিখেন, ‘পাক প্রধানমন্ত্রী আজ সত্যিকার রাষ্ট্রনায়কের ভূমিকা নিয়েছেন। এখন আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের বর্তমান সঙ্কট নিরসনে এগিয়ে আসা উচিত।’
ভারতীয় ঔপন্যাসিক কৃষ্ণ প্রতাপ সিং লিখেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে হারিয়ে দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।
তবে শুধু ভারতে নয় পাকিস্তানেও প্রশংসা পাচ্ছেন ইমরান খান। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর নাতনি ফাতিমা ভুট্টো বলেছেন, ইমরানের এই পদক্ষেপ সাহসী ও মানবিক।
পাকিস্তানের জনপ্রিয় শিল্পী ফখরে আলম ইমরান খানের প্রশংসায় লিখেছেন, সামরিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, নৈতিকতা ও রাষ্ট্রপরিচালনা সব দিক দিয়েই পাকিস্তান জয়ী হল।