পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক জাতিসংঘকে জানান, আমি দুঃখের সাথে পরিষদকে জানাচ্ছি যে, মিয়ানমার থেকে আরো মানুষকে আশ্রয় দেয়ার অবস্থানে আর নেই বাংলাদেশ। এসময় তিনি মিয়ানমারকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও বাধা সৃষ্টির দায়ে অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, মিয়ানমার সহায়ক পরিস্থিতি নিশ্চিত না করায় একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো যায়নি।
মিয়ানমার জানিয়েছিল, এ বছরের জানুয়ারি থেকেই তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত। কিন্তু বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গারা দাবি তুলেছে তাদের নাগরিকত্ব না দিলে তারা বাংলাদেশ ছেড়ে যাবে না।
এদিকে, নিরাপত্তা পরিষদের পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো মিয়ানমারের উদ্যোগের অভাবের সমালোচনা করেন। নিরাপত্তা পরিষদে ব্রিটিশ দূত কারেন পিয়ার্স বলেন, এখনো রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে এবং তাদের জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি না করতে পারায় আমরা গভীরভাবে হতাশ।
এছাড়া অনেকেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের জন্য নিরাপদ ও সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতের গুরুত্ব তুলে ধরেন। একইসাথে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান যাতে জাতিসঙ্ঘের প্রতিনিধিরা রাখাইনে প্রবেশ করতে পারেন।
মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসঙ্ঘের প্রতিনিধি ক্রিশ্চিন শ্রানার-বারগেনার বলেন, এখনো রাখাইনে জাতিসঙ্ঘের প্রবেশাধিকার সীমিত। তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর যে মাত্রার নির্যাতন হয়েছে এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব অভিযোগ রয়েছে তাতে এটা প্রমাণিত হয় যে রোহিঙ্গা নির্যাতন এ শতাব্দীর সব থেকে ভয়াবহ ঘটনাগুলোর একটি।
তবে জাতিসঙ্ঘে চীনের সহকারী দূত উ হাইতাও বলেন, এই সমস্যাটি শুধু বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের। তাই তাদেরকেই এই সংকটের সমাধান করতে হবে। রুশ দূত দিমিত্রি পলিয়ানস্কি তার এ বক্তব্যকে সমর্থন করেন।
আমেরিকার সহকারী দূত জোনাথান কোহেন বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কোনোভাবেই পৃথিবীর সব থেকে বড় শরণার্থী শিবিরকে উপেক্ষা করতে পারেন না।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংস ও বর্বর অভিযানের মুখে ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। নাগরিকত্ব প্রত্যাখ্যাত এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকার বঞ্চিত আরো ৩ লাখের মতো রোহিঙ্গা নৃশংসতার শিকার হয়ে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর আক্রমণকে জাতিগত নিধনযজ্ঞ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে জাতিসঙ্ঘ। তবে মিয়ানমার প্রথম থেকেই এ দাবি অস্বীকার করে আসছে।