অবস্থান পরিবর্তন করবে না উত্তর কোরিয়া : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রি ইয়ং-হো বলেছেন, আমেরিকা তার দেশের সাথে আবার আলোচনায় বসতে চাইলেও পিয়ংইয়ংয়ের নীতি-অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসবে না।

ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের মধ্যকার দু’দিনব্যাপী শীর্ষ বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পর একথা জানালেন রি।

বৃহস্পতিবার কোনো ফলাফল বা সমঝোতা ছাড়াই বৈঠক শেষ হওয়ার পর ট্রাম্প বলেন, তিনি উত্তর কোরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে নেয়ার দাবি মেনে নেননি। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে কিম জং-উন উপস্থিত থাকলেও তিনি কোনো বক্তব্য দেননি।

এরপর রাতে এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, শীর্ষ বৈঠকে তার দেশ নিষেধাজ্ঞার আংশিক প্রত্যাহার চেয়েছিল, পুরোপুরি তুলে নেয়া নয়।

রি বলেন, তার দেশ আলোচনায় বেশ কিছু ‘বাস্তবসম্মত’ প্রস্তাব দিয়েছিল যার মধ্যে ছিল উত্তর কোরিয়ার প্রধান পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র ইয়ংবিয়নকে জাতিসঙ্ঘের পর্যবেক্ষকদের তত্ত্বাবধানে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় করা।

উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আমেরিকার সাথে তার দেশের আস্থা যে পর্যায়ে রয়েছে তার ভিত্তিতে এটি ছিল পিয়ংইয়ংয়ের পক্ষ থেকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে সবচেয়ে বড় ছাড়।

রি বলেন, এর বিনিময়ে উত্তর কোরিয়া ততটুকু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চেয়েছিল যতটুকু দেশের অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের জীবনযাপনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তার দেশ পরমাণু অস্ত্র ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা স্থায়ীভাবে বন্ধ করারও প্রস্তাব দিয়েছিল। কাজেই হ্যানয় শীর্ষ বৈঠকের মতো আবার আরেকটি আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এমনকি আমেরিকা যদি ভবিষ্যতে আবার আলোচনার টেবিলে বসতে চায় তারপরও আমাদের মৌলিক নীতি-অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে এবং আমাদের প্রস্তাবনা কখনোই পরিবর্তিত হবে না।’

উল্লেখ্য, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার দু’দিনব্যাপী আলোচনা কোনো ফলাফল ছাড়া নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠক শেষে ট্রাম্প এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে এবং এই মুহূর্তে আবার দু’দেশের শীর্ষ বৈঠকের কোনো পরিকল্পনা নেই।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, উত্তর কোরিয়ার অগুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে মোতায়েন পরমাণু অস্ত্রগুলো ধ্বংস করার কাজ শুরু করার বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে নেয়ার যে প্রস্তাব পিয়ংইয়ং দিয়েছিল তা তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে অনুষ্ঠিত এ শীর্ষ বৈঠক এমন সময় ব্যর্থ হলো যখন এর আগে মার্কিন সূত্রগুলো বলেছিল, এ বৈঠকে দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হতে পারে এবং পরবর্তী শীর্ষ বৈঠকের তারিখও নির্ধারিত হবে। কিন্তু বাস্তবে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় বোঝা গেল, আমেরিকা ও উত্তর কোরিয়া যত বেশি বিষয়বস্তুর গভীরে ঢুকতে চেয়েছে তাদের মধ্যে মতবিরোধ তত বেশি তীব্র হয়ে উঠেছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে দু’দেশ সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। ওয়াশিংটন চায়, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হতে হবে দেশটির প্রধান পরমাণু কেন্দ্র- ইয়ং বিয়নকে ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে। আর এর বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে পর্যায়ক্রমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top