পাকিস্তানের আকাশ সীমায় প্রবেশ করে বিমান হামলা করতে গিয়ে আটক হয়েছে ভারতীয় পাইলট উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। শুক্রবার তাকে ফেরত দেবে পাকিস্তান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশনে বলেছেন, এর মাধ্যমে ইসলামাবাদ নয়া দিল্লিকে শান্তির বার্তা দিতে চায়। তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ বন্ধে যে কোন ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে সব সময় আগ্রহী।
ইমরান খানের ঘোষণা মোতাবেক ওয়াগা সীমান্ত ক্রসিংয়ে ভারতীয় পাইলটকে ভারতের হাতে তুলে দেবে পাকিস্তান। ওয়াগা পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের লাহোর জেলার একটি গ্রাম। সীমান্তের অন্যপাশে ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশ। এই সীমান্ত দিয়েই ১৯৯৯ সালে আটক ভারতীয় পাইলট আম্বামতী নচিকেতাকেও ফের দিয়েছিল পাকিস্তান।
ভারতের প্রভাবশালী ইংরেজী দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল থেকেই অভিনন্দনের প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় ওয়াগা সীমান্ত। সেখানে অভিনন্দনকে গ্রহণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ভারতীয় পাঞ্জাব প্রদেশর মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং। শুক্রবার সকালেই তিনি বর্ডারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে। অমরিন্দর সিং নিজেও একজন সাবেক সামারিক বাহিনীর কর্মকর্তা। বর্ডার এলাকায় যাওয়া নিয়ে অমরিন্দর সিং টুইট করেছেন তার ভেরিফায়েড টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে মেনশন করে লিখেছেন, প্রিয় নরেন্দ্র মোদি, আমি পাঞ্জাবের সীমান্ত এলাকায় যাচ্ছি। এই মুহূর্তে অমৃতসরে আছি। জানতে পেরেছি যে পকিস্তান সরকার পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে ওয়াগা সীমান্ত দিয়ে ফেরত পাঠাবে। তাকে গ্রহণ করা আমার জন্য অনেক সম্মানের বিষয় হবে। যেহেতু আমার মতো অভিনন্দন ও তার বাবাও জাতীয় প্রতিরক্ষা অ্যাকডেমির শিক্ষার্থী ছিলেন।’
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে ভারতের জি নিউজ অনলাইন জানিয়েছে, বিকেলে ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে অভিনন্দনকে হস্তান্তর করা হতে পারে। তাকে গ্রহণ করতে কর্মকর্তারা ছাড়াও সীমান্তের ভারতীয় অংশে জড়ো হয়েছেন অনেক ভারতীয় নাগরিক। এদিকে অভিনন্দনের বাবা-মা চেন্নাই থেকে দিল্লিগামী বিমানে চড়েছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে। তারা দিল্লিতে মিলিত হবে পুত্রের সাথে।
এদিকে নিরাপত্তা বাহিনীর বরাত দিয়ে পাকিস্তানের ইংরেজী দৈনিক এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেলেই ভারতীয় পাইলটকে ফেরত দেয়ার সব কিছু চূড়ান্ত হয়। পাকিস্তানে নিয়োজিত ভারতীয় বিমান বাহিনীর এক কর্মকর্তা তার সাথে থাকবেন।
ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল অভিনন্দনকে গ্রহণ করবে পাকিস্তানের কাছ থেকে। তবে তাকে সরাসরি ভারতের হাতে নাকি ১৯৯৯ সালের মতো রেড ক্রসের মাধ্যমে ভারতের হাতে তুলে দেবে পাকিস্তান সেটি এখনো জানা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভারতীয় কংগ্রেস নেতা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাকে লিখেছেন, কংগ্রেসের মিত্র দলের এক মুখমন্ত্রী পাইলট অভিনন্দনে গ্রহণে আগ্রহী হওয়ায় বিজেপির প্রতিক্রিয়া কি হবে সেটি দেখার বিষয়। সবাই এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতিক্রিয়া দেখতে আগ্রহী।
এর আগে ১৯৯৯ সালেও কারগিল যুদ্ধের সময় এক ভারতীয় পাইলট আটক হয়েছিলেন পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে। তাকেও ফেরত দেয়া হয়েছিল ওয়াগা বর্ডার থেকে। ভারতীয় বিমান বাহিনীর ওই পাইলটের নাম ছিলো কাম্বামতী নচিকেতা। সেই দিনটি ছিলো ২৭ মে ১৯৯৯। সেদিন ভারতীয় বিমান ২৬ বছর বয়সী বাহিনীর ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট কাম্বামতী মিগ-২৭ যুদ্ধ বিমান নিয়ে পাকিস্তানে হামলা চালাতে গিয়েছিলেন। সে সময়ও পাকিস্তানের হামলায় তার বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।
ঘটনার দিন সকাল বেলায় পাকিস্তানি ভূখণ্ডে সামরিক স্থাপনায় হামলা চালাতে গিয়েছিলেন কাম্বামতী। একটি স্থাপনায় এক দফা বোম হামলা চালিয়ে আবার ঘুরে আসেন দ্বিতীয় দফা হামলা চালাতে। এসময় পাকিস্তানি আক্রমণের শিকার হয় তার বিমান। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ভূমি থেকে আকাশে ছোড়া স্টিনজার ক্ষেপণাস্ত্রের গোলার আঘাতে আগুন ধরে যায় বিমানের ইঞ্জিনে। প্রাণ বাঁচাতে প্যারস্যুট নিয়ে লাফ দেন পাইলট কাম্বামতী। মাটিতে নামার পরই তাকে আটক করে পাকিস্তান। জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘনের দায়ে তাকে আটক করা হয়েছিল।
এক সপ্তাহ পর তাকে মুক্তি দেয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। সেবারও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয় শান্তির বার্তা নয়া দিল্লিতে পৌছাতেই তারা ভারতীয় পাইলটকে ফেরত দেয়। আটদিন বন্দী থাকার পর তাকে হস্তান্তর করা হয় ভারতের হাতে। সে সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নওয়াজ শরীফ আর ভারতে তখন ক্ষমতা অটল বিহারি বাজপেয়ীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার।
আটকের ৮ দিন পর ৩ জুন ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয় নচিকেতাকে। মুক্তির আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল অনিল তিপনিস টেলিফোনে কথা বলেন, পাইলট কাম্বমতী নচিকেতার সাথে। এরপর পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একজন দূত তাকে লাহোর-অমৃতসর সড়কের ওয়াঘা বর্ডারে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য নিয়ে আসেন। সেখানে তাকে পাকিস্তান সীমান্ত অতিক্রম করে পায়ে হেঁটে পাঠানো হয় সীমান্তে ভারতীয় অংশে। বিষয়টির মধ্যস্ততা করেছিল রেড ক্রসের পাকিস্তান শাখা। ওই পাইলট ২০১৭ সালে ভারতীয় বিমান বাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন হিসেবে অবসরে গেছেন।