ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মতো আগ্রহ ছিল না খোদ আওয়ামী লীগেরও। বিরোধী দল শূন্য এ নির্বাচন নিয়ে ভোটের আগে খুব একটা দৌড়ঝাঁপ ছিল না ক্ষমতাসীনদের। নামমাত্র প্রচারণা চালিয়ে কেবল আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম। গতকালের ভোটে সাধারণ ভোটারদের খুবই কম উপস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের মতো খানিকটা বিব্রত হয়েছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরাও। তবে এটি উপনির্বাচন হওয়ায় ভোটারদের আগ্রহ কম ছিল বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নানা অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন আগেই বর্জন করেছে বিএনপিজোট। সে জন্য এ নির্বাচন সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলে। বিএনপিজোটের কোনো প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিজয় আগেই চূড়ান্ত হয়ে যায়। তবুও আনুষ্ঠানিকতা সারতে সরকারদলীয় মেয়রপ্রার্থী কিছু কিছু এলাকায় জনসংযোগ করেন।
ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে নিয়েও মতবিনিময় করেন তিনি। এর মাধ্যমে সাধারণ ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন আতিকুল। বিএনপিজোটের প্রার্থী না থাকলেও এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টিসহ পাঁচজন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাদের ঘিরেও তেমন কোনো আগ্রহ ছিল না নগরবাসীর। ফলে এ নির্বাচন নিয়ে খুব একটা ব্যস্ততাও ছিল না কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ বা সরকারের।
সূত্র জানায়, প্রায় সব নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপিজোটকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে জনগণ। সে জন্য বিএনপির প্রার্থী থাকলেই বেশ তৎপর হয়ে যায় ক্ষমতাসীনরা। বিভিন্ন ইস্যুতে সরব হয়ে উঠে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় অফিস ও নির্বাচন কমিশনকেন্দ্রিক ব্যস্ততা দেখা যায় সব সময়। নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ এবং দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মলনসহ নানান কৌশল নির্ধারণে ব্যস্ত থাকেন নীতিনির্ধারকরা।
কিন্তু এ নির্বাচনে বিএনপিজোটের প্রার্থী না দেয়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে জনগণ। আগ্রহ ছিল না ক্ষমতাসীনদেরও। ঢাকা উত্তর সিটির ভোট হবে তা ভোটাররাই জানে না, এমন শিরোনামে বিভিন্ন মিডিয়ায় খবরও প্রকাশিত হয় নির্বাচনের ঠিক দুই তিন দিন আগে। ফলে এ নির্বাচনে কার জয় এবং ভোটার উপস্থিতি কেমন হতে পারে তা আগেই আঁচ করতে পারে সরকার। সে জন্য তেমন কোনো তৎপরতা ছিল না ক্ষমতাসীনদের।
গতকাল আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় ঘুরে ডিসিসি নির্বাচনকেন্দ্রিক তেমন কোনো তৎপরতাই চোখে পড়েনি। নেতাকর্মী বা কেন্দ্রীয় নেতাদেরও কোনো আগ্রহ ছিল না। যতটুকু তৎপরতা ছিল সেটা উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরেই।
এ দিকে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, চতুর্থ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ঠিক করতে আজ শুক্রবার অুনষ্ঠিত হবে মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক। সে জন্য শেষ সময়ে লবিং, তদবির করতে উপজেলায় দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরাই ভিড় করেন দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে। সিটি নির্বাচনের ফলাফল আগেই চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ায় কেউই জানতে চাননি নির্বাচন সম্পর্কে। তবে মাঝে মধ্যে ভোটার উপস্থিতির স্বল্পতা নিয়ে কথা বলেছেন কেউ কেউ। এতে কারো কারো মধ্যে বিরক্তির ভাবও দেখে গেছে।
ভোটগ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় দলের পক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি বলেন, ‘ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ সারা দেশে যেভাবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে দেশের অগ্রগতি এবং উন্নয়নের পক্ষেই মানুষ থাকতে চায়। কাজেই আমরা বিশ্বাস করি জনগণ দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির লক্ষ্যে এবং একটি সুন্দর ঢাকা বিনির্মাণে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বেছে নেবেন। আমরা আশাবাদী আমাদের নৌকার প্রার্থীই বিজয়ী হবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে দীপু মনি বলেন, বিরোধী দল বলতে সংসদীয় গণতন্ত্র অনুযায়ী সংসদে যারা বিরোধী দল তারাই হলো প্রকৃত বিরোধী দল। সংসদের বিরোধী দল কিন্তু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য সব প্রকার পরিবেশ বজায় থাকা সত্ত্বেও বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে চলেছে। বিএনপি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা একের পর এক এ সিদ্ধান্ত নিয়ে যাচ্ছে। তাতে কী উপকার হচ্ছে জানি না। তারা দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের জন্য বাধা দেয়ার চেষ্টা করছে বার বার। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, বি এম মোজাম্মেল হক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিৎ রায় নন্দী, উপদফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।