সৌদি ওমান ও কাতারে বেহাল শ্রমবাজার

মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশ সৌদি আরব, ওমান ও কাতারের শ্রমবাজারের বেহাল অবস্থা পর্যবেক্ষণে আজ শুক্রবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধিদলের ঢাকা ত্যাগের কথা রয়েছে।

সফরকালে ওই সব দেশের শ্রমমন্ত্রী, বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সাথে বৈঠক, নির্যাতিত নারীদের খোঁজ নিতে সেইফ হোম পরিদর্শন এবং কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনার কথা রয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সৌদি আরবে এমনিতেই শ্রমবাজার সঙ্কুচিত হয়ে এসেছে। এরপরও ওই দেশে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস, জেদ্দাসহ অন্যান্য কনসুলেট অফিসগুলোর কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর অশোভন আচরণে বাংলাদেশীরা হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে জেদ্দার কনসুলেট অফিসের কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে রয়েছে প্রবাসীদের বিস্তর অভিযোগ।

তাকে দ্রুত সেখান থেকে সরিয়ে নতুন একজন কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে দেশটিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক জাহানকে লিখিতভাবে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার সেই অনুরোধ না রেখে মন্ত্রণালয় থেকে তাকে শুধু মৌখিকভাবে সতর্ক করে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

শুধু জেদ্দা কনসুলেট অফিসের আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ তা কিন্তু নয়, তার মতো এমন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাতার ও ওমানের বাংলাদেশ দূতাবাসের ভেতরও রয়েছে। যাদের কারণে প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটি ও শ্রমিকরা গুরুত্বপূর্ণ নানা কাজ করতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন এবং এখনো হচ্ছেন। বিষয়টি প্রতিমন্ত্রীর ভিজিটে স্থানীয় কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ নজরে আনতে পারেন বলে ভুক্তভোগী প্রবাসী নেতৃবৃন্দ ও দূতাবাস সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে।

গতকাল সৌদি আরব থেকে নয়া দিগন্তকে একজন প্রবাসী বলেন, লাখ লাখ টাকা খরচ করে আমরা দালাল ধরে এ দেশে এসেছি পরিবারে স্বচ্ছতা আনতে। কিন্তু এখন পরিবারে স্বচ্ছলতা আনা তো দূরের কথা নিজের জান বাঁচানোই দায় হয়ে পড়েছে। তার মতে, এই মুহূর্তে সৌদি আরবে বাংলাদেশীদের অবস্থা খুবই খারাপ। আকামা জটিলতার কারণে অনেকেই জেল খাটছে।

অনেকে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ভয়ে আউটপাসে দেশে ফিরে গেছেন। নারী শ্রমিকরাও নিয়োগকর্তাদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একই চিত্র বিরাজ করছে মধ্যপ্রাচ্যের পাশের দেশ কাতার ও ওমানেও। তিনটি দেশেই বাংলাদেশ থেকে নারী ও পুরুষ শ্রমিক পাঠানো হচ্ছে।

গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান নয়া দিগন্তকে বলেন, মন্ত্রীর যে ভিজিটটা শুরু হবে সেখানে আমরা আশা করব আমাদের যেসব সমস্যা আছে সেগুলোর একটা সমাধান হবে। সমস্যাগুলো আমরা আগেই তার কাছে শেয়ার করেছি।

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সৌদি আরবে মোসানেদের একটি রি-এগ্রিমেমন্ট হওয়া দরকার। সিস্টেমের ব্যাপারে রি-এসেসমেন্ট হওয়া দরকার। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে আমাদের কর্মীরা সৌদি আরব এবং কাতারে যাওয়ার পর দেখছি, তাদের আকামা হচ্ছে না।

অ্যামপ্লয়মেন্ট ভিসায় লোক যাওয়ার পরও কোনো কর্মীরা চাকরি পাবে না? যারা ভিসা ইস্যু করছেন তাদের সাথে কথা বলতে হবে। যে অ্যামপ্লয়ারের চাকরি দেয়ার কথা, আকামা দেয়ার কথা, তাদের যদি ক্যাপাবিলিটি না-ই থাকে, তাহলে কেন তাদের নামে ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে? এই ভিসাগুলোর কারণে আমাদের গরিব শ্রমিকগুলো ওখানে গিয়ে বিপদে পড়ছে। এতে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো যেমন ঝামেলায় পড়ছে, তেমনি কর্মী যারা বিদেশে যাচ্ছেন তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

প্রতিমন্ত্রীর সেইফ হোম ভিজিট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের মহিলা কর্মীদের বেতনটা নতুনদের জন্য ১০০০ রিয়াল আর পুরনোদের জন্য ১২০০ রিয়াল রয়েছে। এটাকে লিখিত আকারে নিয়ে আসা উচিত, যাতে ১০০০-এর নিচে মহিলা কর্মীদের বেতন যেন না দেযা হয়। আর মহিলা কর্মীদের সেইফটি সিকিউরিটির বিষয়টিও আলোচনা করা প্রয়োজন। খাবার, নির্যাতন, ওয়ার্কিং লোড বেশি হওয়াসহ যেসব অভিযোগ নিয়ে মাঝে মধ্যে মহিলা কর্মীরা দেশে ফিরে আসেন আমরা সেগুলোও বলেছি। মন্ত্রী বলেছেন, এসব নিয়ে তিনি আলোচনা করবেন।

নির্যাতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেসব অ্যামপ্লয়াররা এ ধরনের আচরণ করবেন তাদের চিহ্নিত করে ব্লাকলিস্ট করে দেয়া দরকার। তারা যেন আর কখনো হাউজমেড নিতে না পারে। এক প্রশ্নের উত্তরে বায়রা মহাসচিব নয়া দিগন্তকে বলেন, শুধু সৌদি আরব নয়, একই প্রবলেম ফেইস করতে হচ্ছে কাতার ও ওমানেও। কারণ এই তিনটি দেশেই আমরা নারী ও পুরুষ শ্রমিক পাঠাচ্ছি।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাত ১০টা ৫৫ মিনিটে প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধিদল ঢাকা ত্যাগ করবেন। অপর সদস্যরা হচ্ছেন যুগ্ম সচিব ফজলুল করিম ও জাহিদ হোসেন এবং প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) আহমদ কবির।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top