চার বিধ্বংসী জ্বলে উঠলেন এক রাতে

এমন ছক্কাময় রাত ক্রিকেটে খুব একটা দেখা যায় না। যারা দেখেননি তারা হয়তো মিস করেছেন অনেক কিছু। অনেক তো খেলা দেখেছেন কখনো কি এমন ‘নাইট শো’ ইতিপূর্বে দেখেছেন? রাত জেগে অনেকেই খেলা দেখেছেন, কিন্তু বুধবার রাত যে ক্রিকেট জগতের এক রহস্যময় রাত ছিলো সেটাই বা কয়জন জানেন? কি যুক্তি যোগসাজশ ছিলো তাদের মধ্যে যে, একরাতেই সবাইকে এভাবে জ্বলে উঠতে হবে? বলছিলাম, ‘ক্রিকেট দানব’, ‘ মিঃ ৩৬০ ডিগ্রী’, ‘ম্যাক্সি’ ও ‘জস’দের কথা।

বেঙ্গালুরুতে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ভারতের দেওয়া ১৯১ রানের বিশাল টর্গেট, এভাবে অনায়াসে পাড়ি দিবে অজিরা তা হয়তো কারো কল্পনাও ছিলো না। কারণ, এর আগের ম্যাচেই ভারতের দেওয়া ১২৬ রানের টার্গেট পাড়ি দিতে অজিদের নাকানিচুবানি খেতে হয়েছে; কিন্তু গতকালের ম্যাচটি যে, আগের ম্যাচের চেয়ে এতো সহজে জয় পাবে অজিরা তা কারো জানা ছিলো না। আর এই অজনাকে জানাতে, অসম্ভবকে সম্ভব করতে ক্রিকেটেও যে দুই-একজন খেলোয়াড় সব দলে রয়েছে তা হয়তো অনেকেই জানি।

গতকাল রাতটি ছিলো তাদেরই রাত। অজিদের যখন ৫ ওভারে ৩০ রানের মধ্যেই দুই উইকেট নেই তখনই পুরো ম্যাচের ত্রাতা হয়ে গেলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। যখন পুরো গ্যালারি জুড়ে ভারতের জয়ের প্রতিধ্বনির আভাস দিচ্ছে দর্শকরা, আর তখনই শুরু হলো ‘ম্যাক্সওয়েল শো’। ছক্কা-চারের ফুলঝুরিতে ভারতীয় দর্শকদের হতাশায় ডোবালেন এই ব্যাটসম্যান। মাত্র ৫০ বলেই করেন টি টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক। সাতটি চার ও নয় ছক্কার সুবাধে মাত্র ৫৫ বলে ১১৩ রানের অপরাজিত এক ইনিংস খেলে দলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন।

ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার সিরিজের চতুর্থ ওডিআইতে দুই দল মুখামুখি হয় গ্রানাডার সেন্ট জর্জ স্টেডিয়ামে। এই ম্যাচটি গড়ে ওয়ানডে ইতিহাসের এক বিরল রেকর্ড দুই দল মিলে সংগ্রহ করে ৮০৭ রান! স্কোর দেখেতো বুঝাই যাচ্ছে ম্যাচটি কেমন হাইভোল্টেজ ছিলো। আর আন্তর্জাতিক কোন ওয়ানডে ম্যাচে সর্বোচ্চ ৪৬ ছক্কার রেকর্ডও হয় এই ম্যাচে। ছক্কার ফুলকি ঝরানো ম্যাচে জ্বলে উঠেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান জস বাটলার। তিনি একাই খেলেন ১৫০ রানের এক খুনে ইনিংস। হাফসেঞ্চুরি করার পর বাকি ১০০ রান যোগ করতে খেলেন মাত্র ৩১ বল। যা এবি ডি ভিলিয়ার্সের ৩১ বলে ১০০ রান করার রেকর্ডের সমান! এই ব্যাটসম্যান মাটি ছুঁয়ে ১৩ বার বল পাঠান বাউন্ডারির বাইরে। আর মাটি না ছুঁতে দিয়ে ১২টি বল পাঠান গ্যালারিতে। তার এই খুনে ব্যাটিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ইংলিশরা টার্গেট দেয় ৪১৯ রানের।

জস বাটলারের শো’তেই ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচ শেষ হয়নি। চারদিকে যখন কিলিয়ানদের ব্যাটে রানের বন্যা, আর এই ম্যাচকেই বেচে নিলেন আরেক পার্মানেন্ট শুটার ক্রিস গেইল। তার সামনেই জস বাটলার যা দেখিয়েছে তা অনেকটা গেইলকে বুড়ো আঙুল দেখানোর মাতো। পুরো ম্যাচ জুড়ে দাঁড়িয়ে থেকে ইংলিশদের তাণ্ডব দেখে মনে হয়, এর শোধ নেয়ার প্রতিজ্ঞাই করেছিলেন এই দানব। শুরু হয় গেইল শো। গেইল তার শো’তে রাখেন, আকাশে উড়িয়ে গ্যালারিতে চৌদ্দবার পাঠানো আর এগারোবার বল মাটি ছুঁয়ে বাউন্ডারির বাইরে পাঠানোর এক ইনিংস। মাত্র ৯৭ বলে এই ক্রিকেট দানব খেলেন ১৬২ রানের এক বিধ্বংসী ইনিংস।

ক্রিকেট দানবদের রাতে পাকিস্তান সুপার লিগে লাহোর কালান্দর্স মুখোমুখি হয় কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সের। কোয়েটা আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ১০৬ রান সংগ্রহ করে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে লাহোরের অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্সের ব্যাট উঠে জ্বলে। তার জ্বালাময়ী ব্যাটিংয়ের দিনে কোয়েট্টাকে ৮ উইকেটে হারায় তার দল লাহোর কালান্দর্স। এই ৩৬০ ডিগ্রী খ্যাত ব্যাটসম্যান এদিন ৩৮ বলে ৪৭ রানের অপরাজিত ছোট্ট একটি ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। বিপক্ষ দলের পুঁজি কম হওয়াতে তার ইনিংসটি আর বড় হতে পারেনি। না হলে এই ডিভি যে, কি তা ক্রিকেট ভালো করে জানে।

এমন রাত হয়তো ক্রিকেট ইতিহাসে যে খুব বেশি আসবে না তা নিশ্চিত। যারা দেখেছেন তারা প্রাণভরে উপভোগ করেছেন। আর যারা দেখেননি অনেক বড় মিস করেছেন ।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top