আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি, পূর্ণ হলো গড়েয়া ট্র্যাজেডির ছয় বছর। ২০১৩ সালের এই দিনে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়ায় ঘটে যায় এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। প্রিয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের খবর শুনে রাজপথে ছুটে এসেছিল ওরা ছয়জনসহ শত শত সাঈদীভক্ত সাধারণ মানুষ। এই রায়ের প্রতিবাদ করার অপরাধে সরকারি বাহিনীর ছোড়া বুলেট নির্মমভাবে কেড়ে নেয় এক সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যসহ ছয় কিশোর-যুবকের তাজা প্রাণ। নিহতরা হলেন : নিরঞ্জন মিঠু (১৮), ফিরোজ (২৪), রুবেল (১২), দুলাল হোসেন (২৫), মুনির (১৮), দায়মুল (১৬) নামের ছয় সাঈদীভক্ত।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে গড়েয়া বাজারে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ মিছিল করে সাঈদীভক্তরা। মুহূর্তেই বাজারের দোকানপাট বন্ধ করে অনেক ব্যবসায়ীও যোগ দেন মিছিলে। এ সময় আশপাশের বিপুল সাঈদীভক্ত জনতা মিছিলসহ গড়েয়া বাসস্ট্যান্ড চত্বরে সমবেত হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় কে বা কারা বারবার পুলিশকে ফোন করে জানায়, বিএনপি ও জামায়াতের লোকজন গড়েয়া বাজারে ব্যাংক ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লুটপাট চালাচ্ছে। এ সংবাদ পেয়ে পুলিশ গড়েয়ায় যায়; কিন্তু বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিক্ষুব্ধ লোকজন রাস্তা অবরোধ করে রাখায় পুলিশ অবস্থান নেয় গড়েয়া ফাজিল মাদরাসার সামনে।
এ সময় পুলিশ উত্তেজিত জনতাকে সরিয়ে দিতে রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। অপর দিকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে তলব করে বিজিবি। একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পাঠানো হয় কয়েক প্লাটুন বিজিবি সদস্য। পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি সদস্যরা শর্টগানের গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। তাতেও জনগণ এলাকা ত্যাগ না করে রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে মাওলানা সাঈদীর মৃতুদণ্ডের রায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করতে থাকে। একপর্যায়ে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুলিশ ও বিজিবি নির্বিচারে গুলি চালায় নিরীহ মানুষের উপর। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় ফিরোজ (২৪), মুনির (১৮), নিরঞ্জন মিঠু (১৮), রুবেল (১২)। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুলাল (২৫) ও দায়মুলকে (১৬) ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাদের নেয়া হয় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুলাল ও দায়মুল মৃত্যুবরণ করে।