নির্বাচন পরিস্থিতি : যা বলছেন প্রধান দুই প্রার্থী

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) উপ-নির্বাচনে মেয়র পদে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম ও জাতীয় পার্টির শাফিন আহমেদ তাদের ভোট দিয়েছেন। ভোট দেয়ার পর সংবাদ মাধ্যমের সাথে কথা বলেছেন নির্বাচনের পরিস্থিতি নিয়ে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় উত্তরার নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১২ নম্বর কেন্দ্রে ভোট দেন আতিকুল ইসলাম। এসময় তার স্ত্রী ও কন্যা সাথে ছিলেন।

বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় নির্বাচন কতটুকু প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে? -সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে আরেকটা দল থাকলে এ নির্বাচন আরও অংশগ্রহণমূলক হতো। যদি তারা আসতো তাহলে নির্বাচনটা আরো ভাল হতো।’

এসময় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ভোটারদের কেন্দ্রে এসে নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে ভোটারদের উপস্থিতি কম। তারপরও আমি ভোটারদের অনুরোধ করবো- আপনারা ভোট দিতে আসুন। ভোট গণতান্ত্রিক অধিকার। ভোট দিয়ে আপনারা গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করুন। নগরীর উন্নয়নে আপনারা নৌকা প্রতীকে ভোট দিন।’

ভোটারদের কম উপস্থিতির কারণে তিনি হতাশ নন বলেও জানান আতিকুল ইসলাম।

এদিকে, এ নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি লক্ষণীয়ভাবে কম এমন মন্তব্য করে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী শাফিন আহমেদ বলেছেন, ‘এ দেশের ভোটাররা নির্বাচন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।’

আজ দুপুরে গুলশান-২ অবস্থিত মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন।

ভোটের পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে শাফিন আহমেদ বলেন, ‘ভোটারদের আগ্রহ কম। এ দেশে নির্বাচনে অনেক অনিয়ম হয়েছে। গত কয়েকটা নির্বাচনে এত বেশি অনিয়ম হয়েছে আমার মনে হয় ভোটাররা নির্বাচন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। কারণ তারা মনে করেন তাদের ভোটের কোনো দাম নেই।’

তিনি বলেন, ‘মানারাত স্কুলে দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে আমি আমার ভোট দিয়েছি। এর আগে সকালে বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে এসেছি। এখানকার (মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্রে) পরিবেশ বেশ ভালো দেখলাম। কিন্তু সকালে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে অনিয়ম দেখেছি। বাকি দিনটা আমি আরো দেখতে চাই, আরো কেন্দ্রে যাব। বাকি কেন্দ্রগুলো দেখে দিনের শেষে আমি সঠিক একটি মতামত দিতে পারবো।’

শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকছেন কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘হতাশ হওয়ার সময় এখনো আসেনি। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত। আজকে ছুটির দিন ভোটাররা আস্তে ধীরে বের হচ্ছে।’

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আতিকুল ইসলাম, লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মো: শাফিন আহমেদ, ঘড়ি প্রতীক নিয়ে মো: আব্দুর রহিম, আম প্রতীক নিয়ে আনিসুর রহমান দেওয়ান ও বাঘ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শাহীন খান।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে মোট প্রার্থী সংখ্যা ৩৮২ জন। এর মধ্যে মেয়র পদে ৫ জন। দুই সিটিতে ৩৬টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিল পদে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৩১০ জন।

উত্তর দক্ষিণ সিটিতে ৬টি করে ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থীর সংখ্যা ৬৯ জন। এর মধ্যে ডিএনসিসির ১৮টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ১১৬ জন, সমসংখ্যাক ওয়ার্ডে ডিএসসিসিতে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ১২৫ জন। অন্যদিকে ডিএনসিসি‘র ৬ সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর প্রার্থী ৪৫ জন এবং ডিএসসিসিতে ২৪ জন।

এই নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও কাউন্সিলর পদে দলীয় স্বতন্ত্র প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঢাকা উত্তরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে একজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

ঢাকা উত্তর সিটিতে সাধারণ ওয়ার্ড ৫৪ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৮টি, মোট ভোটকেন্দ্র ১ হাজার ২৯৫টি এবং ভোটকক্ষ ৬ হাজার ৪৮২টি। এতে মোট ভোটার ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫৩০ জন এবং নারী ভোটার ১৪ লাখ ৭২ হাজার ৯১ জন। মেয়র পদে পুরো উত্তর সিটিতে নির্বাচন হচ্ছে। আর সাধারণ ৫৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে সম্প্রসারিত ১৮টি ওয়ার্ডে এবং সংরক্ষিত ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬টিতে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হচ্ছে।

উত্তর সিটির সম্প্রসারিত ১৮ ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টি সাধারণ ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ৬ ওয়ার্ডে মোট ভোটকেন্দ্র ২৪৩টি এবং ভোটকক্ষ ১ হাজার ৪৭২টি। মোট ভোটার ৫ লাখ ৯০ হাজার ৭০৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৯৮ হাজার ২৮৫ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৯২ হাজার ৪২০ জন।

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির সম্প্রসারিত ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে সাধারণ ১৮টি ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ৬টি ওয়ার্ডে মোট ভোটকেন্দ্র ২৩৫টি এবং ভোটকক্ষ ১ হাজার ২৫২টি। মোট ভোটার ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৭৩৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৪ হাজার ৪৯৭ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৪২ হাজার ২৩৮ জন।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের আড়াই বছর পর ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ডিএনসিসিরি মেয়র আনিসুর হক লন্ডনে মারা যান। এতে আসনটি শূন্য হয়ে পড়ে। অন্যদিকে দুই সিটিতে ২০১৭ সালে ১৮টি করে ৩৬টি নতুন ওয়ার্ড যুক্ত হয়। আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে নির্ধারিত সময়ের এক বছর পর গত ২২ জানুয়ারি দুই সিটির তফসিল ঘোষণা করে ইসি।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top