ভারতের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলার পর তার জেরে পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছিল ভারত ১২ দিন পর। কিন্তু ভারতের হামলা চালানোর পর একদিনের বেশি দেরি করেনি পাকিস্তান। ভারত যেখানে রাতের আধারে হামলা চালিয়েছিল, পাকিস্তান সেখানে দিনের আলোয় হামলা চালিয়ে বলেছে, আত্মরক্ষার অধিকার যে আমাদের আছে তা দেখাতেই এ হামলা। অন্যকিছু নয়। সে রকম কিছু হলে ফলাফলও অন্যরকম হতে পারত।
পরবর্তী সময়ে ভারতের পক্ষ থেকে যেসব প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এত তাড়াতাড়ি এ ধরনের প্রতিক্রিয়া তারা আশা করেনি। ফলে এখন তার পরবর্তী করণীয় নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। আর ভারতজুড়ে মঙ্গলবার যে উচ্ছ্বাসের বহিঃপ্রকাশ চলছিল, পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় তাতেও ভাটা পড়েছে অনেকখানি।
ভারতের বিমানবাহিনী মঙ্গলবার পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে সেখানে ঢুকে পড়ে। পাকিস্তান পক্ষ দাবি করে, সেখানে কোনো প্রকার হামলা চালানোর আগেই পাকিস্তানী বিমানবাহিনীর ধাওয়া খেয়ে তারা নিজ দেশে ফিরে যায়। কিন্তু ভারত সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, পাকিস্তানে তারা বিদ্রোহীদের বেশ কিছু ঘাঁটি ধ্বংস করে দিয়ে এসেছে। পরবর্তীতে তারা জানায় এ হামলায় পাকিস্তানের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর ৩৫০ মানুষ নিহত হয়।
এ হামলার পর থেকেই পাকিস্তান জানায়, আত্মরক্ষার অধিকার তাদের আছে। এবং তারা যথাসময়েই তার জবাব দেবে।
বুধবার সকালে পাকিস্তানের বিমানবাহিনীর চারটি এফ ১৬ বিমান ভারতের অভ্যন্তরে ঢুকে সেনাশিবিরে হামলা চালায়। পাকিস্তান দাবি করে, তাদের যে আত্মরক্ষার অধিকার আছে তা বুঝাতেই তারা এই হামলা চালিয়েছে। অন্য ধরনের চিন্তা থাকলে হামলার ধরনও ভিন্ন হতো। তবে ভারত দাবি করে পাকিস্তান ভারতের আকাশসীমায় প্রবেশ করলেও ভারতের বিমানবাহিনীর ধাওয়া খেয়ে তারা নিজ দেশে ফিরে যায়। এক্ষেত্রে ভারতীয় বাহিনীর হামলায় পাকিস্তানের একটি বিমান ভূপাতিত হয়। তবে পাইলট পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
অন্যদিকে একই দিনে পাকিস্তান দাবি করে, তাদের হামলার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভারত আবারো পাকিস্তানে হামলা চালাতে গেলে তারা ভারতের দুটি যুদ্ধবিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে। এ সময় একটি বিমান আজাদ কাশ্মিরে পড়ে। অন্যটি নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে গিয়ে পড়ে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এ সময় জানানো হয়, একজন পাইলটকে গ্রেফতার করেছে পাকিস্তান। তবে নয়াদিল্লি এ দাবি অস্বীকার করে জানায়, তাদের কোনো পাইলটই পাকিস্তানে গ্রেফতার হয়নি।
এদিকে এ হামলার প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বুধবার পাকিস্তানের নিরাপত্তা অথরিটির সাথে বৈঠক ডেকেছেন। ডেকেছেন পাকিস্তানের পার্লামেন্টের বৈঠকও। ফলে মনে করা হচ্ছে আরো বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে পাকিস্তান।
ভারতের হামলার জবাবে একদিন পার না হতেই পাকিস্তানের এ ধরনের পদক্ষেপে কিছুটা হতভম্ব হয়ে পড়েছে নয়াদিল্লি। মঙ্গলবারের হামলার পর তারা বিশ্বকে বুঝাতে চেয়েছিল, আত্মরক্ষার খাতিরেই তারা এ হামলা চালিয়েছে। ফলে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংও বৈঠকের পর বৈঠক করছেন নানা বাহিনীর সাথে।
মোদি মঙ্গলবার কয়েক দফা বৈঠক করেন। বুধবার তিনি পূর্ব নির্ধারিত একটি শিক্ষার্থী সমাবেশে হাজির হন। কিন্তু সে সময় প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে একটি চিরকুট আসায় মোদি অনুষ্ঠান সমাপ্ত না করে ফিরে আসেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই জরুরি বৈঠকের ডাক দেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানের আগে নিজ বাড়িতেও বৈঠক ডেকেছিলেন তিনি। জরুরি সেই বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলে এবং বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানরা ছাড়াও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
ইতোমধ্যেই ভারতের বেশ কয়েকটি বিমানবন্দরে বিমান উঠা-নামা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকার অনেক স্কুলে ছুটি ঘোষণা হয়েছে।