ফেব্রুয়ারিতে দুই দফা ঝড় বৃষ্টিকে আবহাওয়া ও কৃষিবিদরা অস্বাভাবিক বলে অভিহিত করেছেন। পাশাপাশি তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এমন আচমকা ভারী বর্ষণ আর তাপমাত্রা কমে যাওয়াতে আম তরমুজের পাশাপাশি বোরো ধানের ক্ষতি হবে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের সাবেক পরিকল্পনাবিদ ড. মোল্লা আজহারুল হক নয়া দিগন্ত প্রতিবেদককে জানান, অবশ্যই এটা অসময়ের বৃষ্টি। এ ধরনের বৃষ্টিতে আমের মুকুলের ক্ষতি তো হবেই। এর পাশাপাশি বোরোও ক্ষতি হবে মারাত্মকভাবে। কেননা এ সময়ে কৃষক বোরো ফসল তোলার কথা। এটা তুলতে দেরি করলে বোরো ধানের গোড়ায় পানি জমে পচন ধরবে। তা ছাড়া শিলাবৃষ্টির ক্ষতিকর প্রভাব তো আছেই। তিনি বলেন, এ সময়ে বৃষ্টি নয়, হওয়ার কথা কালবৈশাখী, কিন্তু হচ্ছে তার উল্টা। আবার হঠ্যাৎ করে তাপমাত্রাও কমে গেছে, এটা ফসলের জন্য ক্ষতিকর।
তবে আবহাওয়াবিদ মো: আব্দুল মান্নান বলেন, এটা আবহাওয়ার একেবারে স্বাভাবিক ঘটনা। কয়েক বছর ঘুরে এমনটা হয়। এবার এ সময়ে এটা হয়েছে। তাই বলে এটাকে অসময়ে বৃষ্টি বলে মন্তব্য করা ঠিক না। এতে যে খুব বেশি ক্ষতি হবে তা নয়।
কেন এমন হচ্ছে?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তর ভারতে পশ্চিমি ঝড়ো এবং পূবালী হাওয়ার সঙ্ঘাতের জেরে এমনটা হচ্ছে বলে কেউ মনে করছেন। আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান এ প্রতিবেদককে বলেন, পশ্চিমা লঘু চাপের কারণে আরো দুই দিন বৃষ্টি চলমান থাকতে পারে। অর্থাৎ সারা দেশে আজ বুধবার ও কাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের এ ধারা চলবে।
আবহাওয়া অফিস থেকে জানা গেছে, গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজধানীতে ৩৫ মিমি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আর এ সময়ে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় মাদারীপুরে অর্থাৎ ৬৩ মিমি.। তা ছাড়া গোপালগঞ্জে ৫৫ মিমি. ফরিদুপরে ২৩ মিলি. টাঙ্গাইলে ২০ মিলি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে বৃষ্টিপাতের পাশাপানি কনকনে শীতও অনুভূত হচ্ছে দেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে।
আরো জানা গেছে, গতকাল সারা দেশে গড়ে ২৭ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আর সর্বনিম্ন তেঁতুলিয়ায় ১৪.০৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তবে আবহাওয়া অফিস থেকে অবশ্য বলা হয় এমন শীত শীত ভাব রবিসহ সব ধরনের ফসলের জন্য আচমকা আঘাত।
তিনি বলেন, এ আচমকা আঘাতে পেঁয়াজ, রসুন, বোরো ধান, সরিষা, গম, কালাই, ভুট্টা, সবজি, পানের বরজসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হতে বাধ্য।
এক মাসে দুইবার আঘাত
এবার এক মাসে দুইবার শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখীর আঘাত হয়। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ভোরেই হঠাৎ করেই শুরু হয় ঝড় ও শিলাবৃষ্টি। রাজশাহীতে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে রাজশাহীর পবা, দুর্গাপুর, পুঠিয়া ও চারঘাট উপজেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে গম, ভুট্টা, রসুন, স্ট্রবেরি ও আমের মুকুলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জানা গেছে ওই দিন ভোর ৪টা ৪০ মিনিটে রাজশাহীতে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। শেষ হয় ৫টা ১৮ মিনিট পর্যন্ত এই সময়ে মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ রেকর্ড করা হয় ১৭ মিলিমিটার। এত অল্প সময়ে এত বৃষ্টি হওয়াকে ভারী বর্ষণই বলেও আবহাওয়াবিদরা অভিহিত করেছেন।