পরমাণু অস্ত্রধারী দুই দেশ ভারত এবং পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তানের ভিতরে ঢুকে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর কথিত আস্তানায় ভারতীয় বিমান হামলার ঘটনার পর পাকিস্তান এর জবাব দেয়ার কথাও বলেছে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভারতের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়েছে, ভারত অপ্রয়োজনীয় আগ্রাসন চালিয়েছে, আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। পাকিস্তান তার সুবিধাজনক সময়ে এর জবাব দেবে।
এদিকে ভারতও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। ফলে কাশ্মির নিয়ে দেশ দু’টির সংকট একটি চরম অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ভারত-পাকিস্তান এর আগেও কাশ্মির নিয়ে দুইবার যুদ্ধে জড়িয়েছিল। একবার ১৯৬৫ সালে এবং পরবর্তী সময়ে ১৯৯৯ সালে। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভিন্ন। কারণ দুই দেশের কাছেই পরমাণু অস্ত্র রয়েছে।
কাশ্মির নিয়ে দ্বন্দ্ব কেন?
ব্রিটেন থেকে ভারত পাকিস্তান ১৯৪৭ সালে যখন স্বাধীনতা পায়, তখনই কাশ্মিরকে নিজেদের সীমানায় চেয়েছিল দুই দেশই। ভারত পাকিস্তান ভাগের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাশ্মির দুই দেশ থেকেই মুক্ত ছিল। কিন্তু তৎকালীন কাশ্মিরের স্থানীয় শাসক বা রাজা হরি সিং ভারতকে বেছে নিয়েছিলেন। তিনি একটি চুক্তির মাধ্যমে কাশ্মিরকে ভারতের সাথে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।
ইতিহাসবিদরা বলেন, যে ইনস্ট্রুমেন্ট অব অ্যাক্সেশনের মাধ্যমে কাশ্মির ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল, সেই শর্ত থেকে ভারত অনেকটা সরে এসেছে। ফলে পাকিস্তান আবারো আঞ্চলিক এ রাজনীতিতে প্রবেশ করে। সব মিলিয়ে বলা যায় ১৯৪৭ সালে কাশ্মিরকে ঘিরে যে সংকট তৈরি হয়েছিল তা এখনো কোনো সমাধানে আসেনি। বরং এ অঞ্চলটি পাকিস্তান ও ভারতের স্থায়ী একটি সমস্যায় রূপ নিয়েছে।
ভারত অধিকৃত কাশ্মির কেন সবসময় অস্থিতিশীল থাকছে?
এই অংশের অনেক মানুষ ভারতের শাসনে থাকতে চায় না। তারা পাকিস্তানের সাথে ইউনিয়ন করে যুক্ত হতে অথবা নিজেরা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে থাকতে চায়। কারণ ভারত অধিকৃত জম্মু কাশ্মিরে ৬০ শতাংশের বেশি মুসলিম। ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে এ রাজ্যটিতেই মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। আর এ কারণেই কাশ্মিরে কর্মসংস্থানের অভাব এবং বৈষ্যমের অনেক অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া সেখানে রয়েছে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধেও নির্যাতন চালানোর অনেক অভিযোগ। এমন প্রেক্ষাপটে সেখানে স্বাধীনতাকামী আন্দোলনও দিন দিন আরো তীব্রতর হয়ে উঠছে। এ সহিংসতায় গত বছরেই এ রাজ্যে পাঁচ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে।
কাশ্মিরে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা
বছরের পর বছর রক্তক্ষয়ের প্রেক্ষাপটে ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই যুদ্ধ বিরতি দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সম্মত হয়েছিল ২০০৩ সালে।
পাকিস্তান পরে দিল্লির দাবি অনুযায়ী ভারত অধিকৃত কাশ্মিরে স্বাধীনতাকামীদের অর্থ সহায়তা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ২০১৪ সালে ভারতে নতুন সরকার এসেছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। তারপরও সে বছরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রে মোদি ও তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ শান্তি প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছিলেন। এর এক বছর পরই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের আবারো অবনতি হয়।
দুই দেশ কি আবারও চরম শত্রুতে পরিণত হচ্ছে?
২০১৬ সাল থেকে ভারত অধিকৃত কাশ্মিরে দেশটির সামরিক ঘাঁটিতে বেশ কয়েকটি আক্রমণ হয়েছে। কিন্তু গত ১৪ ফেব্রুয়ারি যে আত্মঘাতী হামলা হয়েছে, তাতে হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি। এই হামলায় ৪৪ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়েছে। ভারত এ ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলে দুই দেশ আবারো মুখোমুখি হয়ে পড়ে।
সূত্র : বিবিসি