নিজের অভিমানী স্ত্রীকে খুঁজতে নিজেই বোরকা পরে মহিলা সেজে বাড়িতে বাড়িতে সন্ধানকালে গণধোলাইয়ের শিকার হয়ে এখন শ্রীঘরে বৌপাগল এক স্বামী।
মাদারীপুর জেলার শিবচর থানায় মামলা দায়েরের পর হারুন মুন্সী (৪০) নামের ওই ব্যক্তিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে এতকিছুর পরও বৌয়ের সন্ধান পাননি হারুন।
শিবচর থানা ও আটক হারুনের সাথে আলাপকালে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের চরঘুনচি গ্রামের ছালাম মুন্সীর একমাত্র ছেলে হারুন মুন্সীর সাথে প্রায় ২০ বছর আগে বাকপ্রতিবন্ধীর স্ত্রীর সাথে সুসম্পর্ক হয়। এক বছর পর শান্তি (প্রতিকী নাম) নামের ওই গৃহবধূর ভাগ্নির সাথে বিয়ে হয় হারুনের। কিন্তু বিয়ে করা বৌয়ের চেয়ে তার খালা শান্তির উপরই টান বেশি ছিল হারুনের। ফলে বিয়ের এক বছরের মাথায় হারুনের সংসার ভেঙে যায়।
এর পরের বছর দুই সন্তানের জননী শান্তিকে নিয়ে ঘর ছাড়ে হারুন। মুন্সীগঞ্জে গিয়ে ঘর বাঁধেন তারা।
মা-বাবার একমাত্র ছেলের এই বিয়ে মেনে না নিলে রংমিস্ত্রীর কাজ করেই চলতো হারুনের সংসার। ২০১২ সালে মা-বাবার কথা ও মায়ের করা মামলায় কারাবাসের কারণে শান্তিকে ডিভোর্স দেন হারুন।
এরপর ছয় মাসের মধ্যে আরেক নারীর সাথে বিয়ে হয় হারুনের। কিন্তু এই সংসারও বেশিদিন টেকেনি। আবারো শান্তির কাছে ফিরে গিয়ে হাতে পায়ে ধরে বিয়ে করে হারুন।
মুন্সীগঞ্জে রংমিস্ত্রীর কাজ করে চলছিল সংসার। এরই মাঝে গত বছর শান্তির ছেলে বিদেশে যায় ও মেয়েরও বিয়ে হয় শিবচর। ছেলের বিদেশ গমন ও মেয়ের বিয়ের পরই বাধে বিপত্তি। ছয় মাস আগে মুন্সীগঞ্জ ছেড়ে গাঢাকা দেন শান্তি বেগম (৪৫)।
মোবাইলে কথা বলে এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করেও শান্তিকে না পেয়ে হারুন হয়ে যান পাগলপ্রায়। সাথে ছিল শান্তির পরিবারের হুমকি ধামকি।
এরই মাঝে হারুন জানতে পারেন শান্তি শিবচরেই অবস্থান করছেন। শান্তিকে খুঁজতে ও সে যাতে না পালিয়ে যেতে পারে সেজন্য হারুন সিদ্ধান্ত নেন বোরকা পরে শিবচরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খুঁজবেন স্ত্রীকে।
সে মোতাবেক ঢাকার শাহাদাতপুর থেকে কেনেন বোরকা, হাতমোজাসহ মেয়ে সাজার নানান সামগ্রী। শনিবার সকালে সে ব্যাগ ভর্তি ওইসব সামগ্রী ভরে রওনা দেন শিবচরের উদ্দেশে।
শিমুলিয়া থেকে লঞ্চে পার হয়ে কাঠালবাড়ি ঘাটে পৌঁছানোর পর লঞ্চেই পরে নেন মহিলার ভূষণ।
সোমবার দুপুরে শিবচর পৌরসভার হেলিপ্যাড এলাকায় এসে ঘরে ঘরে ঢুকেই মহিলা কন্ঠে খোঁজা শুরু করেন স্ত্রীকে। ৭/৮টি ঘর খোঁজার পর মহিলাদের বিষয়টি সন্দেহ হলে তাকে চ্যালেঞ্জ করলে বের হয় মুখোশধারী হারুনের আসল রূপ। বৌপাগল স্বামীর বৌভাগ্য না হলেও জুটে গণপিটুনী।
এক পর্যায়ে এলাকাবাসী থানায় খবর দিলে এসআই খলিলুর রহমান ও এএসআই মো: হাসানের নেতৃত্বে শিবচর থানা পুলিশ হারুনকে আটক করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে আসে বৌপাগল হারুনের কাহিনী। তার কাছ থেকে শান্তির সাথে তার নিকাহনামাও পাওয়া যায়।
হারুন মুন্সী বলেন, ‘আমার বড় বৌ দেখতে কালো হলেও ও আমার অনেক যতœ নেয়, ভালোবাসে। ওর ছেলে বিদেশ যাওয়া ও মেয়ের বিবাহ দেয়ার পর ও পাল্টাইয়া গেছে। ছয় মাস ধইরা আমার ফোনও ধরে না। তাই বোরকা পইরা মহিলা সাইজা খুঁজতে আইছি। যাতে ও আমারে দেইখা না পালাইয়া যায়। আমি কাউরে তো বিরক্ত করি নাই। বোরকা পরে মহিলা কন্ঠে খুঁজতেছিলাম। সারাদিন খুঁজলে ঠিকই পাইতাম। তারা আমারে দিল না খুঁজতে। ছেলেদের জুতা পড়ায় ও কন্ঠের কারণে ধরা খেলাম। ওরে (শান্তি) ছাড়া আমার একটুও ভালো লাগে না। পুলিশরে আমারে ছাড়তে বলে দেন।’
শিবচর থানার ওসি মো: জাকির হোসেন বলেন, ‘ছদ্মবেশে হারুন ওই এলাকায় ঘরে ঘরে প্রবেশ করে। এলাকাবাসী ওকে ধরে আমাদের কাছে দিয়েছে। সে বৌকে খুঁজছে বলছে। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।’