সব কেমিক্যাল কি দাহ্য?

বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলির পুরান ঢাকা। এমনো সরু গলি আছে, যেখান থেকে রিকশা যাওয়া তো দূর থাক, সাইকেল পর্যন্ত চালাতে বেগ পেতে হয়। এমন বাস্তবতায় এসব জায়গায় ভয়াবহ আগুন লাগলে অবস্থা কী দাঁড়াবে কিংবা দাঁড়াচ্ছে-তা কি আমরা কল্পনা করতে পারি?

সম্প্রতি চকবাজারের যে রাস্তায় আগুন লেগেছে সেটাও কিন্তু অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের জন্য সুবিধাজনক ছিল না। বহু দূর পর্যন্ত লম্বা লম্বা পাইপ দিয়ে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। সেই সাথে একটার পর একটা দাহ্য কেমিক্যালের ড্রাম বিস্ফোরণের ভয়াবহতায় দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়ে উঠেনি। ফল কালক্ষেপণ আর মৃত্যুর মিছিল। তাই পুরান ঢাকার অলিগলি আর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, যেখানে শুধু পানি যথার্থ নয়- এমন পরিস্থিতিতে ফায়ার সার্ভিস বাংলাদেশের এমন কিছু কেমিক্যালের ব্যবহার করা উচিত (টেকনোলজির যুগে মনে হয় না তা অসম্ভব) যেটা দূর থেকে বলের মতো ছুড়ে মারলে নিমেষেই আগুন নিভে যাবে।

অপর দিকে, লক্ষ করে দেখুন অতীতে, নিমতলী অগ্নিকাণ্ড ও সম্প্রতি চকবাজারের অগ্নিকাণ্ড কিন্তু ভয়াবহ রূপ নেয় দাহ্য কেমিক্যালের কারণে। উপরতলায় মানুষের বসবাস আর নিচতলার গোডাউনে কেমিক্যাল। তাই এখন সবাই সোচ্চার যে করেই হোক, আবাসিক এলাকা থেকে গোডাউন সরাতে হবে। তবে, সব কেমিক্যাল কি দাহ্য? আর সরানোর নামে আবার নতুন আরেক হয়রানি শুরু হবে কি?

প্রথমত, সব কেমিক্যাল দাহ্য নয়। তাই আগে কার গোডাউনে দাহ্য আর কার গোডাউনের কেমিক্যাল দাহ্য নয় সেটা শনাক্ত করতে হবে। আর অবশ্যই দাহ্য কেমিক্যাল আলাদা জায়গায় সরাতে হবে। কিন্তু কোথায় ও কিভাবে? ঢাকার ব্যবসায়ীদের গোডাউন এক জায়গায়? যেমনটি বিসিক শিল্পনগরীর পাশে কেরানীগঞ্জে নির্ধারিত জায়গার কথা বলা হচ্ছে? তবে আমি মনে করি, কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের এলাকাভিত্তিক গোডাউনের ব্যবস্থা করা উচিত। যাতে মাল আনা-নেয়া ও ব্যবস্থাপনায় তাদের সুবিধা হয়।

নিমতলীর কেমিক্যাল ব্যবসায়ী নিশ্চয়ই কেরানীগঞ্জে গোডাউন রাখার পক্ষে রাজি হবেন না। এত দূরত্বে যাতায়াতের পেরেশানির জন্য। তা ছাড়া ব্যবসায়ীরা মূলত নিরাপত্তা ও আলাদা জায়গায় গোডাউন রাখতে ভাড়ার খরচ কমাতে নিজের বাড়ির নিচে (ঝুঁঁকি নিয়ে হলেও) গোডাউন তৈরি করেন। সুতরাং, সিকিউরিটির ব্যবস্থা রেখে, চাঁদাবাজি বা হয়রানির যাতে সৃষ্টি না হয় বাড়ির কাছাকাছি যদি সরকারের নির্ধারিত কিছু জায়গায় গোডাউনের ব্যবস্থা করা হয় (যেখানে, যদি আগুন লাগে; তখন দ্রুত আগুন নেভানোর ব্যবস্থাও থাকবে) তাহলে হয়তো ব্যবসায়ীদের কষ্ট হবে না।

তবে প্রশ্ন হলো- অগ্নি নির্বাপকের সুষ্ঠু ব্যবস্থা এবং সেই সাথে কেমিক্যাল গোডাউনের উপযুক্ত ও সুবিধামতো কিছু জায়গা করে দেয়া হবে কি? নাকি যথারীতি চলতে থাকবে অহেতুক তদন্ত কমিটি গঠন, ঝটিকা অভিযান, হয়রানি, ঘুষ খাওয়া, তারপর ঝলসে যাওয়া একেকটা মানবদেহ আর লাশের পর লাশ?

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top