ভেনিজুয়েলার নৌবাহিনীর হুমকির পর পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে ত্রাণবাহী এক জাহাজ। ওয়াশিংটনের অনুগত পুয়ের্তো রিকো সরকারের তত্ত্বাবধানে ওই জাহাজের ভেনিজুয়েলায় পৌঁছানোর কথা ছিল। দ্বীপরাষ্ট্রটির গভর্নর রিকার্ডো রসেলো এক বিবৃতিতে স্বীকার করেছেন যে, হুমকি পেয়ে নিরাপত্তার স্বার্থে জাহাজটিকে সরিয়ে নিয়েছে তারা। শনিবার রাতে এক বিবৃতিতে ভেনিজুয়েলার হুমকিকে অগ্রহণযোগ্য ও লজ্জাজনক আখ্যা দিয়েছেন তিনি।
অবশ্য এই বিবৃতির আগেই ভেনিজুয়েলার স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট জুয়ান গুইদো হুমকির ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিত করেন। যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত এই স্বঘোষিত প্রেসিডেন্টের সমর্থনে দেশে ত্রাণ প্রবেশ নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে ভেনিজুয়েলার সীমান্ত। ত্রাণবাহী ট্রাক ভেনিজুয়েলায় ঢুকতে দেয়ার দাবিতে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে ব্যাপক সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে সরকারবিরোধীরা। তারা সীমান্ত এলাকার রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড বসিয়েছে। মোড়ে মোড়ে টায়ার জ্বালিয়ে নিজেদের অবস্থানের জানান দিচ্ছে। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে সরকারি বাহিনী। নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে পাথর নিক্ষেপ করে তারাও পাল্টা জবাব দেয়ার চেষ্টা করে। আগের দিন শুক্রবারও ত্রাণ প্রবেশ নিয়ে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। দুই দিনে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো শতাধিক মানুষ। ত্রাণবহরে আগুন ধরিয়ে দেয়ারও অভিযোগ করা হয়েছে। কলম্বিয়া সরকারের দাবি অনুযায়ী, শুধু ভেনিজুয়েলা-কলম্বিয়া সীমান্তেই ত্রাণ প্রবেশকে কেন্দ্র করে উত্তেজনায় আহত হয়েছে ২৮৫ জন।
এমতাবস্থায় সেনা-সমর্থন পেতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জুয়ান গুইদো। সশস্ত্র বিভাগে কর্মরত মুষ্টিমেয় কিছু সদস্য ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর পক্ষ ত্যাগ করলেও জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী এখনো তাকে সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে। তবে মাদুরো সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের আগে পথ না ছাড়ার অঙ্গীকার করেছেন গুইদো। যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো ত্রাণ প্রবেশের প্রশ্নে সঙ্ঘাত জোরালো হওয়ার প্রেক্ষাপটে তিনি সেনাবাহিনীকে ইতিহাসের সঠিক পথ বেছে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য অবশ্যই সব বিকল্প পথ খোলা আছে বলে মন্তব্য করেছেন গুইদো। শনিবার এক টুইটবার্তায় তিনি এ কথা বলেন। শনিবার রাতে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে ভেনিজুয়েলার সীমান্ত থেকে বিদেশী ত্রাণবাহী গাড়িবহর ফিরিয়ে দেয়ার পর এর এক টুইটবার্তায় জুয়ান গুইদো লেখেন, ‘আজকের ঘটনা আমাকে একটি সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। আমি আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি প্রস্তাব জানাচ্ছি যে, আমাদের দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য অবশ্যই সব বিকল্প পথ খোলা আছে।’ প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ করেন গুইদো। গত ২৩ জানুয়ারি নিজেকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন বিরোধীদলীয় নেতা জুয়ান গুইদো। সে সময়ই তিনি ঘোষণা দেন, ভেনিজুয়েলাবাসীর সহায়তায় তিনি আন্তর্জাতিক ‘ত্রাণ সহযোগীদের’ নেটওয়ার্ক বানাবেন। মাদুরো সরকার মনে করছে, ওই ত্রাণ প্রবেশের নামে সামরিক হস্তক্ষেপের পাঁয়তারা করছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থলপথে ত্রাণবাহী ট্রাক আটকে দেয়ার পাশাপাশি এবার নৌপথে আসা জাহাজকেও হুমকি দেয়ার খবর পাওয়া গেল।
সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা কলম্বিয়ার প্রত্যাখ্যান
এ দিকে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর দেয়া কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছে কলম্বিয়া। তাদের দাবি, মাদুরো সরকারের সাথে তাদের কোনো সম্পর্কই নেই। শনিবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া ঘোষণায় কলম্বিয়ার কূটনীতিকদের একদিনের মধ্যে দেশ ছাড়তে বলেন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট। তবে কলম্বিয়ান ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্তা লুসিয়া রামিরেজ দাবি করেছেন, মাদুরো সরকারের সাথে তাদের কোনো কূটনৈতিক লেনদেনই নেই। উল্লেখ্য, মাদুরোর স্থলে বিরোধী নেতা গুইদোকে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের স্বীকৃতি দেয়া দেশগুলোর অন্যতম কলম্বিয়া।
সূত্র : গার্ডিয়ান, সিবিএস নিউজ ও আলজাজিরা