প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও স্বস্তিতে নেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার লক্ষ্যে বিদ্রোহী প্রার্থী দমনে আগের কঠোর নীতির প্রতি কিছুটা শিথিল মনোভাব রয়েছে দলটির হাইকমান্ডের। কেন্দ্রের নমনীয় মনোভাবে ভোটের মাঠে বিদ্রোহী প্রার্থীরাও ছাড় দিতে রাজি নন। যার কারণে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত এ দলটি উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পর্যায়ে সহিংসতার মাত্রা আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন দলের শীর্ষ নেতারা।
জানা গেছে, এবারই প্রথম উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পরই স্থানীয় পর্যায়ের সব নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু আইন সংশোধনের আগেই উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়ায় সেখানে দলীয় প্রতীক ব্যবহারের সুযোগ ছিল না। সেবার মোটামুটি রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় থাকা সব দলই কমবেশি স্থানীয় পর্যায়ের সব নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল।
কিন্তু এবারই ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। উপজেলা পরিষদের এবারের নির্বাচনে ভোটের মাঠে আছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে মাঠে সরব রয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থীরা। তবে উপজেলা নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে অনেক জায়গায় স্বতন্ত্র প্রার্থিতার বিষয়টি আওয়ামী লীগ ‘উন্মুক্ত’ করে দেয়ার কৌশল নিলেও দলীয় কোন্দলের প্রকাশ ঠেকাতে সতর্ক। কোন্দল ঠেকাতে নির্বাচন হতে যাওয়া জেলা ও উপজেলাগুলোর নেতাকর্মীদের কঠোর বার্তা পাঠানো হয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে।
দেশের কোনো এলাকায় উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ ঘটলে ও সেসবের জন্য দল সমালোচিত হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। দল মনোনীত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত মাঠে ছড়িয়ে পড়িয়ে কি-না, সেদিকেও কড়া নজর রাখা হচ্ছে। বিদ্রোহী প্রার্থী দমনে কেন্দ্র এখনো পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নিলেও কোন্দলের জেরে অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক নয়া দিগন্তকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয়ভাবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান পদে দলের কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হবে না।
দলীয় সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাচনকে জমজমাট ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নমনীয় মনোভাবের সুযোগ নিয়ে সারা দেশের তৃণমূলে প্রার্থীরা পরস্পরকে ঘায়েল করতে নানাভাবে চরিত্র হননে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রচারণায় একে অন্যের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন। এতে করে তৃণমূল আওয়ামী লীগে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
এর আগে এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে জমা পড়ে হাজারো অভিযোগ। ফলে ভোটের মাঠে দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাতের আশঙ্কা দলটির শীর্ষ নেতৃত্বও একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না। এ ছাড়া অতীতে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপি ও জেলা-উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকটভাবে দৃশ্যমান হয়ে উঠে। স্থানীয় পর্যায়ে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে কেউ কাউকে কোনো ছাড় দেননি। অনেকেই নিজস্ব বলয় তৈরি করে মাঠে নিজের শক্তির জানান দেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা এ প্রসঙ্গে জানান, এবার প্রথমবারের মতো উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হলেও দলের কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলেও কোনো মাথাব্যথা নেই ক্ষমতাসীন দলটির। আপাতদৃষ্টিতে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার ব্যাপারে নমনীয় রয়েছে দল। শুধু নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার জন্য এ ধরনের মনোভাব পোষণ করা হচ্ছে।
তবে অভ্যন্তরীণ সহিংসতা-সঙ্ঘাত নিয়ে কিছুটা উদ্বেগও কাজ করছে। তবে কেউ বিশৃঙ্খলা করলে পার পাবে না। নির্বাচনের মাঠে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের ক্ষোভ ও অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ যেন না ঘটে, সেদিকেও সতর্ক থাকতে প্রার্থীসহ নেতাকর্মীদের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।