নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারের চার পাশে বিস্ফোরকের ডিপো

পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার সন্নিকটে নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগার ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ অভিযোগ করে এই মুহূর্তেই খালেদা জিয়া মুক্তি দাবি করেছে বিএনপি।
গতকাল সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই দাবি জানান।

তিনি বলেন, আমি গভীর উদ্বেগ-উতকণ্ঠা ও আতঙ্কের সাথে বলছি, আমাদের প্রাণপ্রিয় দেশনেত্রী বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা বেগম খালেদা জিয়াকে যে পরিত্যক্ত কারাগারে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে তার চার পাশে রাসায়নিক বিস্ফোরকের ডিপো। চকবাজারের চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানসন থেকে নাজিমউদ্দিন রোডে দেশনেত্রীর কারা প্রকোষ্ঠের দূরত্ব মাত্র দেড়ে থেকে দুই শত মিটার। সেখানে ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা, বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পর বিস্ফোরণ ঘটেছে।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র প্রতিহিংসার লেলিহান অনলে দগ্ধ শেখ হাসিনা অবৈধ ক্ষমতার জোরে এমন একটি কেমিক্যাল বিস্ফোরক বেষ্টিত ভয়ঙ্কর বারুদের ডিপোর মাঝখানে আতঙ্কজনক পরিবেশে দেশনেত্রীকে এক বছর বন্দী রেখেছেন। তাকে এক অশুভ উদ্দেশ্যে ভয়াবহ বিপদজ্জক পরিবেশে বন্দী করে রেখেছে অবৈধ শাসকগোষ্ঠী। আমাদের বক্তব্যে এই মুহূর্তে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তিনি নির্দোষ, এই মুহূর্তে তার মুক্তি চাই।

খালেদা জিয়াকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের স্থানান্তর করা হতে পারেÑ এরকম প্রশ্নের জবাবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আমাদের বক্তব্য এই মুহূর্তে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে। এটা নিয়ে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চলবে না। তিনি নির্দোষ এই মুহূর্তে তার মুক্তি চাই।

রিজভী বলেন, অগ্নিকাণ্ডের দিন সারারাত চার দিকে বিকট শব্দ, মানুষের আর্তচিতকার, রাসায়নিক বিস্ফোরণের ভয়ঙ্কর ও বিকট শব্দ গ্রাস করেছিল আশপাশের সব এলাকা। তাকে ভয়ঙ্কর রকমের একটি পরিবেশের মধ্যে রাখা হয়েছে। অল্প দূরত্বে নির্ঘুম উৎকণ্ঠায় কেটেছে চরম অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়ার। আমি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলতে চাই, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে শ্বাসরোধী পরিবেশে কেন আটকে রেখেছেন? কেন তার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন? কেন আপনি ৭৩ বছরের গুরুতর অসুস্থ তিনবারের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বন্দী করে রেখেছেন? অবিলম্বে দেশনেত্রীর নিঃশর্ত মুক্তি নিশ্চিত করুন।

রিজভী অভিযোগ করে, ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শহীদ মিনারে যাওয়া উপলক্ষে রাত ১০টা থেকে শহীদ মিনারের আশপাশের রাস্তাঘাট সব বন্ধ করে দেয় নিরাপত্তা বাহিনী। উর্দু রোড, চানখারপুল, নাজিমউদ্দিন রোডে গাড়ি ঢোকা ও বের হওয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে প্রচণ্ড যানজট লেগে যায়। এত জীবনহানিতে গভীর মর্মবেদনা ও দুঃখের কারণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর উচিত ছিল শহীদ মিনারের কর্মসূচির কিছু পরিবর্তন করে প্রশাসনকে আগুন নেভানোর কাজে সর্বাত্মক চেষ্টার নির্দেশ দেয়া। তাদের এমন দায়িত্বহীন আচরণের কারণে মানুষের মূল্যবান জীবন ঝরে গেছে।

চুড়িহাট্টার ঘটনা প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে সারা দেশে শোক দিবস পালন করেছি। এর আগের দিন মসজিদে মসজিদে নিহতদের মাগফিরাত কামনা ও আহতদের সুস্থতা কামনা করে বাদ জুমা দোয়া মাহফিল হয়েছে। হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে দগ্ধরা কাঁতরাচ্ছেন। স্বজনদের কান্না আর বুকফাটা আহজারিতে আশাপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। এই মিডনাইট অবৈধ সরকার পুরান ঢাকার মৃত্যুপুরীর মৃত্যুর মিছিল নিয়ে কেবল বাগাড়ম্বর করছে। আগুন লাগা থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত তাদের আচরণ হলো ‘রোম যখন পুড়ছিল নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল’ অবস্থার মতো।

খালেদা জিয়াকে দেখতে কারাগারে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ চিকিৎসক : সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার কারাগারে দেখতে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পাঁচ চিকিৎসক। গতকাল রোববার বেলা ৩টার দিকে চিকিৎসকেরা তাকে দেখতে যান। জানা গেছে, তারা কারাগারে এক ঘণ্টা ধরে বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন।

এই পাঁচ চিকিৎকদের নেতৃত্ব দেন বিএসএমএমইউর ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: জলিলুর রহমান চৌধুরী। অন্য চারজন হলেন রিউমাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা: শামীম আহমেদ, কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা: তানজিলা পারভিন, ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা: বদরুন্নেসা আহমেদ এবং অর্থোপেডিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা: চৌধুরী ইকবাল মাহমুদ। কোনো চিকিৎসককে ফোনে পাওয়া যায়নি নিশ্চিত হওয়ার জন্য। তবে জানা গেছে, তারা সেখান থেকে এসে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের রিপোর্ট প্রদান করবেন পরবর্তী করণীয় ঠিক করার জন্য।

খালেদা জিয়াকে কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হবে : কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের নারী সেলে স্থানান্তর করা হবে বলে জানা গেছে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আসার পর কারা কর্তৃপক্ষ স্থানান্তরের বিষয়টি অনেকটা চূড়ান্ত করেছেন। এ জন্য নারী সেলের নির্ধারিত স্থান ধোয়া-মোছার কাজ চলছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি বা ১ মার্চ খালেদা জিয়াকে স্থানান্তর করা হবে। বর্তমানে তিনি রাজধানীর নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে ডে-কেয়ার সেন্টারে রয়েছেন। অসুস্থতার কারণে বেশ কয়েক দিন তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। উল্লেখ্য, গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। একই মামলায় ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয় তার বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্য পাঁচজনকে।
পাঁচ বছরের সাজা দেয়ার পর থেকে তিনি নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top