যমুনা সেতুর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের মামলা তদন্তে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল রোববার দুদকের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় থেকে সহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে তাকে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে। ওই চিঠি তার ধানমন্ডির বাসার ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে বলে দুদক সূত্র তথ্য নিশ্চিত করছে।
সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের ১৮ জুন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদা ও তার স্ত্রী অ্যাডভোকেট সিগমা হুদার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে মামলা দায়ের করে দুদক। মামলায় যমুনা বহুমুখী সেতুর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মর্গানেট ওয়ান লিমিটেডের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকের কাছ থেকে ২০০৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৬ সালের ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন সময় ১৯টি চেকের মাধ্যমে ৬ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। এ ঘটনায় রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলা করেন দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসেন।
সম্প্রতি নাজমুল হুদা দম্পতির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেয়া স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে দুদকের আপিলে গত ৬ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ শুনানি শেষে নাজমুল হুদার আবেদন খারিজ করে দেন। এরপর রিভিউ আবেদনেও তাদের আপিল খারিজ হয়ে যায়। রিভিউ আবেদন খারিজের আদেশের কপি অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদকের চেয়ারম্যান ও নি¤œ আদালতে পাঠানো হয়। এর ফলে ঘুষ গ্রহণের ওই মামলাটি তদন্তে আর কোনো বাধা নেই বলে জানায় দুদক।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে ঘুষ গ্রহণ মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, যমুনা সেতুর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মর্গানেট ওয়ান লিমিটেডকে নিযুক্ত করা হয়। যোগাযোগমন্ত্রী থাকার সময় নাজমুল হুদা ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মাসে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা তার স্ত্রীর মালিকানায় পরিচালিত ‘খবরের অন্তরালে’ পত্রিকার হিসাবে জমা দেয়ার জন্য বলেন। টাকা দেয়া না হলে ওই প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি নিয়োগ বাতিল করে কালো তালিকাভুক্ত করার হুমকি দেয়া হয়। নিরুপায় হয়ে ব্যাপক ব্যবসায়িক ক্ষতি বিবেচনা করে মাসিক ২৫ হাজার টাকা উৎকোচ প্রদানের প্রস্তাব করলে নাজমুদ হুদা দম্পতি তাতে রাজি হন। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মর্গানেট ওয়ান লিমিটেডের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকের কাছ থেকে ২০০৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৬ সালের ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন সময় ১৯টি চেকের মাধ্যমে ৬ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন।
এর আগে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের অপর এক মামলায় শেষ পর্যন্ত নাজমুল হুদার চার বছরের সাজা বহাল রাখেন হাইকোর্ট। ওই মামলায় ৬ জানুয়ারি তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন।