জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাগরের ব্যাপারে সমাজে জ্ঞান ও সচেতনতা বাড়ানো দরকার। সেজন্য দেশজুড়ে দীর্ঘমেয়াদে সমুদ্র-সাক্ষরতার ক্যাম্পেইন দরকার।
ভয়েস এবং আর্থ জার্নালিজম নেটওয়ার্ক নামের আন্তর্জাতিক সংস্থার উদ্যোগে রোববার বিকেলে বঙ্গোপসাগর সাক্ষরতার নির্দেশিকা প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক পরামর্শ সভায় বিশিষ্টজনেরা এসব কথা বলেন। সভায় জানানো হয়, ‘বঙ্গোপসাগর সাক্ষরতা: অবশ্য-দরকারি নীতি ও মৌলিক ধারণা’ শীর্ষক নির্দেশিকাটি ভবিষ্যতে সাগর বিষয়ে বিজ্ঞান-শিক্ষা, গণযোগাযোগ ও সচেতনতামূলক কাজের রূপরেখা দেবে। ভয়েস-এর নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদের সভাপতিত্বে এবং রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকনের সঞ্চালনায় সভায় প্রতিবেশ বিশেষজ্ঞ, উন্নয়নকর্মী ও গণমাধ্যমকর্মীরা আলোচনা করেন।
এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ও বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন সমুন্নয়ের সভাডতি ড. আতিউর রহমান বলেন, সাগরপাড়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সাগরের মত করে ভাবতে হবে। গণযোগাযোগ-সাংবাকিকতা হোক কিংবা শিক্ষার ক্ষেত্রে হোক, সমুদ্র-সাক্ষরতার ক্যাম্পেইনের জন্য গণমাধ্যম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সিভিল সোসাইটির সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, এই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সহায়তা করা।
অপরদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সুলতান আহমেদ বলেন, একটি পরিবর্তনশীল ব-দ্বীপ হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের উন্নতি-অবনতি আসলে সাগরের ওপরই নির্ভরশীল। এই সাগরের সাথে আমাদের সমাজ-জীবন ও অর্থনীতির কী সম্পর্ক, আবার উল্টোদিকে আমাদের কাজেকর্মে সাগরের ওপর কী প্রভাব পড়ে, এই বিষয়ে সবাইকে শিক্ষিত হতে হবে।
প্রতিবেশবিদ এবং ট্রান্সবাউন্ডারি রিভারস অব সাউথ এশিয়া কর্মসূচীর বাংলাদেশ সমন্বয়ক এনামুল মজিদ খান সিদ্দিকী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা ও তীব্রতা বাড়বে। শুধু উপকূলীয় এলাকা নয়, পুরো দেশজুড়েই সামুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের প্রভাবও আরো বাড়বে। এ পরিবর্তনশীল সাগর ও জলবায়ুর সাথে বাস করা শিখতে হবে আমাদের। সেই জন্য একটি সমুদ্র-সাক্ষর সমাজ দরকার।
নদী আন্দোলন ‘নোঙর’-এর সভাপতি সুমন সামশ বলেন, সমুদ্র নির্ভর মানুষের পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে সাগর ও নদীতে যাতায়তকারী নৌ-যান শ্রমিক, মালিক, ব্যবস্থাপক এবং প্রশাসকদের সমুদ্র-সাক্ষর করতে হবে।
অনুষ্ঠানে অক্সফাম বাংলাদেশের পলিসি, অ্যাডভোকেসি, ক্যাম্পেইন অ্যান্ড কমুনিকেশন ম্যানেজার এস এম মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, বঙ্গোপসাগর সাক্ষরতার জন্য দেশব্যাপী ক্যাম্পেইন শুরুর আগে বিশেষজ্ঞ ও উন্নয়নকর্মীদের নিজেদের জ্ঞানগত প্রস্তুতি নিতে হবে।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বায়োলজি ও জেনেটিকস বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবীব বলেন, প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত স্কুল-মাদ্রাসার পাঠ্যপুস্তকে বঙ্গোপসাগর সাক্ষরতার বিষয়ে পাঠ্যবস্তু যোগ করা দরকার।