ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মিরে ধরপাকড় শুরু করেছে ভারতীয় বাহিনী। বেশ কয়েকদিন আগেই অঞ্চলটির স্বাধীনতাকামী নেতাদের নিরাপত্তা তুলে নেয়া হয়েছিল। এবার তাদের বিরুদ্ধে শুরু হল গ্রেফতার অভিযান।
আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছেন, স্বাধীনতাকামী সংগঠন জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট (জেকেএলএফ) নেতা ইয়াসিন মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর অনেক নেতাকে। জামায়াতের প্রধান আব্দুল হামিদ ফায়াজসহ অনেককে আটক করা হয়েছে। দক্ষিণ এবং মধ্য কাশ্মীরের আরও অনেক এলাকায় তল্লাশি অভিযান চলছে। আগামী কয়েকদিন ধরে তল্লাশি অভিযান চলবে বলে রাজ্য পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। গ্রেফতারককৃতদের সংখ্যা দেড়শ হতে পারে বলে জানিয়েছে গ্রেটার কাশ্মির ওয়েবসাইট।
শুক্রবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। তার পরেই অতিরিক্ত ১০০ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী পাঠানো হয় কাশ্মিরে। আধাসামরিক বাহিনীর এক একটি কোম্পানিতে সাধারণত ৮০-১৫০ জন সেনাকর্মী থাকেন। সেই হিসাবে গতকাল রাতে কাশ্মিরেরে প্রায় ১০ হাজার সৈনিক উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে।
জম্মু-কাশ্মিরের পুলিশ এই অভিযানকে রুটিন তল্লাশি বলে চালানোর চেষ্টা করা হলেও, স্বাধীনতাকামী সংগঠন তেহরিক-ই-হুররিয়ত এবং তার শাখা সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে এত বড় অভিযান এই প্রথম। শুক্রবার রাতে শ্রীনগরে মইসুমার বাড়ি থেকে প্রথমে গ্রেফতার করা হয় হুররিয়াত নেতা ইয়াসিন মালিককে। তার পর হানা দেওয়া হয় সামাজিক তথা রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামির বাকি নেতাদের বাড়ি ও অফিসে। এই মুহূর্তে জামায়াতের নেতৃত্বে রয়েছেন আব্দুল হামিদ ফায়াজ। আর আইনজীবী জাহিদ আলি সংগঠনের মুখপাত্র। গভীর রাতে বাড়ি থেকে আটক করা হয় তাদের দুজনকেই।
আটক করা হয়েছে সংগঠনের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক গোলাম কাদির লোনকেও। এছাড়াও পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন জেলা ইসলামাবাদের জামায়াত নেতা আব্দুর রউফ, পহেলগাঁও তেহসিলের নেতা মুদাসির আহমেদ, দিলগাঁওয়ের বখতওয়ার আহমেদ, ত্রালের মহম্মদ হায়াত, চাদুরার বিলাল আহমেদ, চক সাংরানের মহম্মদ দার-সহ আরও অনেকে। অনন্তনাগ, পহেলগাওঁ, দিলগাঁও, ত্রাল-সহ দক্ষিণ কাশ্মিরের নানা জায়গায় হানা দিয়ে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
গভীর রাতে বাড়ি বাড়ি নিরাপত্তা বাহিনীর হানার তীব্র সমালোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বাধীনতাকামী নেতারা। তারা বলেন, ৩৫-এ ধারা নিয়ে এখনও পর্যন্ত রায় দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। তার আগে উপত্যকায় গণগ্রেফতার শুরু করে দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। নিশ্চয়ই এর পিছনে অন্য অভিসন্ধি রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। যাতে স্বাধীনতাকামী নেতাদের অনুপস্থিতিতে ওই ধারাটিকে ইচ্ছামতো বিকৃত করতে পারে।
১৯৫৪ সালে ভারতের তত্কালীন রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদের নির্দেশে জম্মু-কাশ্মিরের জন্য সংবিধানের ৩৭০ ধারায় ৩৫-এ অনুচ্ছেদটি যোগ করা হয়। যার আওতায়, কারা জম্মু-কাশ্মিরের স্থায়ী নাগরিক হিসাবে বিবেচিত হবেন, তার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় রাজ্য বিধানসভার হাতেই। দেশের অন্য কোনও রাজ্যের বাসিন্দাদের সেখানে সম্পত্তি কেনাবেচা ও স্থায়ীভাবে বসবাস নিষিদ্ধ হয়। এই ৩৫-এ অনুচ্ছেদ নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। সেটি বাতিল করতে ২০১৪ সালে শীর্ষ আদালতে পাঁচটি আবেদন জমা পড়ে। চলতি সপ্তাহের বুধবার সেই নিয়ে রায় দেয়ার ছিল সুপ্রিম কোর্টের। তবে বিশেষ কারণে বাতিল হয়ে যায় সেটি। আগামী সোমবার পরবর্তী শুনানি স্থির হয়েছে। তার আগেই কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে কাশ্মিরেরে সেনা অভিযান শুরু হল।