সাংবাদিককে গুলি করে মারার হুমকি ইউএনও’র

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক যুগান্তরের প্রতিনিধি সেলিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করতে বাড়িতে গেলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু আসলাম। এসময় ইউএনও’র কোমরে থাকা পিস্তল উঁচিয়ে পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘শালাকে এরেস্ট করো, তাকে গুলি করে মারবো’।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাত আটটার দিকে সাংবাদিক সেলিমের উপজেলার সদর ইউনিয়নের রশিদের পাড়ায় নিজ বাড়ী থেকে তাকে গ্রেফতার করে। সাংবাদিক সেলিমের স্ত্রী মুর্শিদা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে সাংবাদিকদের জানান, ‘ইউএনও আবু আসলাম হঠাৎ আমার বেড রুমে প্রবেশ করে আমার স্বামীকে (সেলিম উদ্দিন) অশ্লীল ভাষায় বকাঝকা করতে করতে খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে পুলিশ আমার স্বামীকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিস্তল হাতে নিয়ে বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে নিউজ?, শালাকে গুলি করে মারবো’। এসময় ইউএনও’র সাথে আসা অপরিচিত কিছু লোকজন সেলিমের বাড়ি ঘিরে রাখেন।

যোগাযোগ করা হলে শুক্রবার রাতে ইউএনবি’র চট্টগ্রাম প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম শিল্পীকে ইউএনও আবু আসলাম বলেন, ‘আমি ম্যাজিস্ট্রেট। আমি চাইলে যেকোনো সময় যে কাউকে আটক করতে পারি।’ পুলিশের সাথে আপনি কেন সাংবাদিকের বাড়িতে গেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুলিশ আসামী ধরার জন্য অভিযানে গেছে, আমিও সেদিকে যাচ্ছিলাম। তাই যাওয়া।’

তবে রাত পার হতেই সুর পাল্টে ফেলেন ইউএনও। শনিবার বিকেলে তিনি সাংবাদিক সেলিমের বাড়িতে যাবার ঘটনা পুরোপুরি অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাংবাদিক সেলিমকে গ্রেফতার করতে আমি যাইনি। রাতে আমি শাহপীর মাজারে ছিলাম।’

এদিকে লোহাগাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, ২০১৪ সালের একটি মামলার গ্রেফতারী পরোয়ানা মূলেই সাংবাদিক সেলিমকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের সাথে ইউএনও যাবার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সাংবাদিক সেলিমের স্ত্রী মুর্শিদা বেগম জানান, গত ক’দিন আগে পূর্ব বিরোধের জেরে মামলা চলাবস্থায় আধুনগরের একটি পুকুরের মাছ ধরে নিয়ে যান ইউএনও। সেই বিষয়ে যুগান্তরে নিউজ প্রকাশিত হলে সাংবাদিক মোহাম্মদ সেলিমের সাথে ইউএনও’র দুরত্ব তৈরী হয়। এ সংবাদ প্রকাশের প্রেক্ষিতে ইউএনও’র যোগসাজসে সাংবাদিক সেলিমের বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়। এতে সেলিমকে ‘ইয়াবাখোর ও জামায়াতের দালাল’ আখ্যা দিয়ে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে কয়েকজন যুবককে দাঁড়াতে দেখা যায়।

এর কয়েকদিন পর গৃহায়ন প্রকল্পে ইউএনও আসলামের ব্যাপক দুর্নীতির বিষয়ে দৈনিক যুগান্তর ও ইনকিলাবে পুনরায় সংবাদ প্রকাশিত হলে ইউএনও সাংবাদিক সেলিমের উপর আরো ক্ষেপে যান।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের এক ঘটনায় তৎকালীন লোহাগাড়া থানার এসআই জসিম উদ্দিনের ৭০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে সাংবাদিক সেলিম দৈনিক যুগান্তরে ‘লোহাগাড়ায় হবু বরের গায়ে হলুদের দিন কাটল হাজতে’ শিরোনামে সংবাদ পরিবেশন করলে এসআই জসিম তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে থানার একটি রাজনৈতিক মামলার চার্জশীটে (যাহার নং ৪/১৪) তার নাম ঢুকিয়ে দেন। এ মামলার এজহারে সেলিম উদ্দিনের নাম ছিলো না।

শনিবার বিকেলে সেলিম উদ্দিনকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করে।

এদিকে ইউএনও নিজে উপস্থিত থেকে সাংবাদিককে গ্রেফতার করায় চট্টগ্রামে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। দিনভর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবিষয়ে অনেকেই ইউএনও’র প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাৎক্ষণিক বিবৃতিতে বিএফইউজে’র একাংশের মহাসচিব মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, চট্টগ্রাম মহানগর, সাতকানিয়া, সীতাকুণ্ডসহ বিভিন্ন উপজেলার সাংবাদিকরা তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তারা অবিলম্বে তার মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।

তারা বলেন, সরকার যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে, তখন ইউএনও’র দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিককে গ্রেফতার করা দুঃখজনক।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top